আকুল ডাক রাতভর, ফিরে আসুক কপ্টার

সন্দেহ ছিল উদ্ধারকারীদেরও। প্রথমে ঠিক ছিল, শুধু ত্রাণ নামানো হবে কপ্টার থেকে। কিন্তু স্পিডবোটও কিছু জায়গায় পৌঁছতে না পারায় কপ্টার থেকে দড়ির মই নামিয়ে দুর্গতদের তুলে আনার কথা ভাবা হয়। কিন্তু সেই চেষ্টা সত্ত্বেও শুক্রবার এক জনও কপ্টারে ওঠেননি।

Advertisement

তিয়াষ মুখোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০১৭ ০৩:৪০
Share:

আতঙ্ক আর অসহায়তার পাঁচ দিন। দ্বিধা-দোলাচলের পাঁচ দিন।

Advertisement

তাঁদের গ্রামের অনেকে এখনও ভিটে ছাড়তে নারাজ। গত মঙ্গলবার থেকে পুরোদস্তুর জলবন্দি ঘাটালের প্রতাপপুর এলাকার নির্মল মণ্ডলরাও প্রথমে চাননি বাড়ি ছাড়তে। ওঁদের পাড়ার অবস্থাটা অন্যান্য এলাকার চেয়েও ভয়াবহ। বন্যার প্রবল ঘূর্ণি ঠেলে সেখানে পৌঁছতেই পারেনি উদ্ধারকারী দলের স্পিডবোট। শুক্রবার তাই এসেছিল বায়ুসেনার হেলিকপ্টার। ওঁরা ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। বাড়িতে জল নেই, বিদ্যুৎ নেই, ফোন অচল— তবুও! ওঁরা যুক্তি দিয়েছিলেন, কপ্টারের প্রচণ্ড হাওয়া এবং শব্দে তাঁরা অতিষ্ঠ, ভীত।

আরও পড়ুন: প্লাবিত বাংলায় বাড়ছে প্রাণহানি

Advertisement

শনিবার সেই হেলিকপ্টারেই উঠে পড়লেন নির্মলেরা। আর নিরাপদ আশ্রয়ে পৌঁছে জানালেন, এ দিন সকাল থেকেই হাপিত্যেশ করে বসেছিলেন উদ্ধারের আশায়। শুক্রবার রাতে দেখেছেন, জলের স্রোতে খুলে খুলে পড়ছে বাড়ির গাঁথনি। তাই আর জেদ ধরে বসে থাকতে পারেননি। নির্মল বললেন, ‘‘ভেবেছিলাম, গত কাল কপ্টার ফিরিয়ে দিয়েছিলাম বলে আজ হয়তো আর পাঠানো হবে না। ভয় পাচ্ছিলাম। জল দেখে স্পষ্ট বুঝতে পারছিলাম, স্পিডবোট আসবে না।’’

সন্দেহ ছিল উদ্ধারকারীদেরও। প্রথমে ঠিক ছিল, শুধু ত্রাণ নামানো হবে কপ্টার থেকে। কিন্তু স্পিডবোটও কিছু জায়গায় পৌঁছতে না পারায় কপ্টার থেকে দড়ির মই নামিয়ে দুর্গতদের তুলে আনার কথা ভাবা হয়। কিন্তু সেই চেষ্টা সত্ত্বেও শুক্রবার এক জনও কপ্টারে ওঠেননি। এ দিন উঠলেন। উদ্ধারকারী দলের এক কর্তা বললেন, ‘‘চেষ্টা চালিয়ে যাওয়াটা তো আমাদের কর্তব্য।’’ ঘাটালের মহকুমাশাসক পিনাকীরঞ্জন প্রধান জানিয়েছেন, এ দিন চার বারের চেষ্টায় ৬ শিশু-সহ ৩০ জনকে উদ্ধার করা হয় প্রতাপপুর থেকে। তাঁদের ঘাটালের একটি আশ্রমে রাখা হয়েছে।

দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে স্তব্ধ হয়ে বসে ছিলেন রত্না মণ্ডল। বললেন, ‘‘কাল পর্যন্তও ভেবেছিলাম ঘর ছাড়ব না। যখন হেলিকপ্টার এল, ভয়েই উঠতে চাইনি। কিন্তু সন্ধের পর থেকেই ভাঙতে লাগল ঘর।’’ ছেলেমেয়েকে নিয়ে ভয়ে কাঁটা হয়ে রত্না পার করেছেন রাতটা। প্রার্থনা করেছেন, আর এক বার যেন ফিরে আসে কপ্টার। ‘‘সকালে যখন কপ্টারের শব্দ হল, তখনই ঠিক করেছিলাম, যে ভাবে হোক বেরোতে হবে। তত ক্ষণে ঘরটা আর নেই। জানি না আর কোনও দিন ঘর তৈরি করতে পারব কি না’’— চোখে আঁচল চাপা দিলেন রত্না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন