সমস্যা সমাধানের প্রতিশ্রুতি যে দল দেবে, বিধানসভা ভোটে তাকেই সমর্থন জানানো হয়েছে। সাবেক ছিটমহলের বাসিন্দাদের নাগরিক অধিকার রক্ষা সমন্বয় কমিটি বুধবার তা জানিয়ে দিল।
এ দিন কমিটির মুখ্য সমন্বয়ক দীপ্তিমান সেনগুপ্ত জানান, পোস্টার ছেপে ছিটমহলগুলিতে সাঁটিয়ে দেবেন তাঁরা। সেখানেই ছিটমহলের বাসিন্দাদের বক্তব্য তুলে ধরা হবে। তিনি বলেন, “ছিটমহল বিনিময় হলেও মানুষের কষ্ট লাঘব হয়নি। কোনও রাজনৈতিক দল তা নিয়ে কথা বলেন না। আমরা জানি ভোট চাইতে সবাই আসবেন। যার ইস্তেহারে আন্তরিক ভাবে জমি থেকে শুরু করে বিদ্যুৎ সমস্যা সমাধানের প্রতিশ্রুতি থাকবে তাঁকেই সমর্থন করা হবে।” তাঁর অভিযোগ, জমিকে কেন্দ্র করেই ছিটমহলের প্রধান সমস্যা ছিল। অথচ সাধারণ মানুষেরা কেউই এখনও জমির কাগজপত্র হাতে পাননি।
দীপ্তিমানবাবুর ওই বক্তব্যের পর রাজনৈতিক দলগুলির নেতাদের মধ্যে ‘তৎপরতা’ দেখা গিয়েছে। শাসকদলের বিরুদ্ধে জোটের হাওয়ায় এ বার ছিটমহলের ভোট যে সীমান্ত সংলগ্ন কয়েকটি বিধানসভা কেন্দ্রে ফ্যাক্টর হয়ে উঠতে পারে সে কথা সবাই জানেন। রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল থেকে কেন্দ্রের বিজেপি অবশ্য, ছিটমহল বিনিময়ের কৃতিত্ব নিতে বহু আগে থেকেই আসরে নেমেছে। তাঁদের নেতাদের অনেকে দাবি করছেন, ছিটমহলের মানুষ তাঁদের সমর্থনেই এগিয়ে আসবেন। বিজেপির কোচবিহার জেলা সভাপতি হেমচন্দ্র বর্মন বলেন, “বহু বছর ধরে যে সমস্যা নিয়ে সাধারণ মানুষ খুব কষ্টে ছিলেন নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে তা সমাধান হয়েছে। তবে সব সমস্যার একদিনে হয় না। ধীরে ধীরে ছিটমহলের বাসিন্দাদের সব সমস্যা সমাধান করা হবে। মানুষ আমাদের সঙ্গেই থাকবে।” তৃণমূল প্রচারে ছিটমহলের কৃতিত্ব নিলেও দীপ্তিমানবাবুর বক্তব্য নিয়ে সতর্ক রয়েছেন। দলের রাজ্য সম্পাদক উদয়ন গুহ বলেন, “ওই এলাকায় যাব। সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলব। তার পরেই যা বলার বলব।”
বামেরা অবশ্য ওই ব্যাপারে দীপ্তিমানবাবুর পাশে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন। বাম নেতা তথা ফরওয়ার্ড ব্লকের কোচবিহার জেলা সভাপতি পরেশ অধিকারী দাবি করেন, সাবেক ছিটমহলের বাসিন্দাদের দাবি নিয়ে তারা প্রথম থেকেই সরব রয়েছেন। বিনিময় হওয়ার পরে জমি, বিদ্যুৎ সহ যে সমস্যাগুলি উঠে এসেছে তা নিয়ে তাঁরা সরব হয়েছেন। পরেশবাবু বলেন, “দীপ্তিমানবাবু যে সমস্যার কথা বলেছেন তাঁর সঙ্গে আমরা সহমত। এই কথা ঠিক বিনিময়ের সময় যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল তার কোনওটি পূরণ করা হয়নি। জমি সমস্যার সমাধান হয়নি। কোথাও বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা হয়নি। স্বাভাবিক রাস্তার কাজ হয়নি। আমরা দাবি আদায়ে লড়াই করে যাব।”
প্রশাসন সূত্রের খবর, সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে সাবেক ছিটমহলের এ বারে দশ হাজার ভোটার বিধানসভা ভোটে অংশ নিতে পারবেন। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন দিনহাটা, সিতাই, শীতলখুচি, মাথাভাঙা ও মেখলিগঞ্জে ওই ভোটের প্রভাব পড়বে। বিশেষ করে দিনহাটা ও মেখলিগঞ্জে সাবেক ছিটমহলের ভোটার সংখ্যা সব থেকে বেশি। ওই দুটি কেন্দ্রে ওই ভোটাররা অনেকটাই প্রভাব ফেলতে পারবে বলে মনে করছে রাজনৈতিক দলগুলি। এ ছাড়া সাবেক ছিটমহলের লাগোয়া গ্রামগুলিতেও ওই অংশের মানুষের একটা প্রভাব রয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই ওই ভোটারদের নিজেদের দিকে আনতে মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে সব দল। শাসক দল তৃণমূল ইতিমধ্যে বহু জায়গায় মিটিং করেছে। দলীয় অফিসও খুলেছে। পিছিয়ে নেই বাম তথা ফরওয়ার্ড ব্লকও। সাবেক ছিটমহলের বাসিন্দা তরুণ জয়নাল আবেদিন, সাদ্দাম মিয়াঁদের কথায়, “যারা আমাদের কষ্টের কথা বুঝবে, আমাদের পাশে থাকবে। আমরাও তাঁদের পাশে থাকব।”