সব দল মনমরা, স্বস্তিতে জনতা

পটকা কিনে রাখাই ছিল। ভাড়া করা হয়ে গিয়েছিল ব্যান্ডপার্টি। ​আবিরও কেনা হয়ে গিয়েছিল। কারও লাল, কারও সবুজ। কিন্তু উৎসব করা আর হল না। মুর্শিদাবাদে তৃণমূলের যুব-রাজ সৌমিক হোসেন পরাস্ত। ‘বন্ধুত্বপূর্ণ লড়াই’য়ে নেমে কংগ্রেস চলে গকিয়েছে তৃতীয় স্থানে। সিপিএমের আনিসুর রহমান ফের জিতেছেন ঠিকই, কিন্তু সূর্যাস্ত হয়ে গিয়েছে। রাজ্য জুড়ে জোটের স্বপ্ন ভেঙে চুরমার।

Advertisement

সুজাউদ্দিন

ডোমকল শেষ আপডেট: ২১ মে ২০১৬ ০২:৪৪
Share:

পটকা কিনে রাখাই ছিল। ভাড়া করা হয়ে গিয়েছিল ব্যান্ডপার্টি।
আবিরও কেনা হয়ে গিয়েছিল। কারও লাল, কারও সবুজ।

Advertisement

কিন্তু উৎসব করা আর হল না।

মুর্শিদাবাদে তৃণমূলের যুব-রাজ সৌমিক হোসেন পরাস্ত।

Advertisement

‘বন্ধুত্বপূর্ণ লড়াই’য়ে নেমে কংগ্রেস চলে গকিয়েছে তৃতীয় স্থানে।

সিপিএমের আনিসুর রহমান ফের জিতেছেন ঠিকই, কিন্তু সূর্যাস্ত হয়ে গিয়েছে। রাজ্য জুড়ে জোটের স্বপ্ন ভেঙে চুরমার।

কে আর উৎসব করবে?

ডোমকলে তাই পটকা ফোটেনি। ভাড়া করা ব্যান্ডপার্টির ক্যাপ্টেনকে ফোন করে বলে দেওয়া হয়েছে, আর আসতে হবে না। মেঘলা আকাশের মতোই মুখভার সকলের।

শুধু হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছে পুলিশ। আর আমজনতা। খুনোখুনির চেয়ে মনমরা থাকাও যে ভাল!

সৌমিককে জেতানোর জন্য খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দু’বার ডোমকলে এসে দরবার করে গিয়েছিলেন। জোর দিয়েই বলেছিলেন, ‘জেনে রাখুন, এ বার আনিসুরকে হারাবে সৌমিক।’

বিপুল প্রচার থেকে কোনও রকম রাস্তা নিতেই বাকি রাখেননি সৌমিক। কিন্তু হতেই প্রথম রাউন্ড থেকে পিছিয়ে পড়তে শুরু করেন। দিনের শেষে হারেন প্রায় ৭ হাজার ভোটে।

লড়াইটা জিতেও কিন্তু চওড়া করে হাসতে পারছেন না আনিসুর বা তাঁর দলের নেতারা। ক্যামেরার সামনে হাসি-হাসি মুখ করলেও রাজ্য নিয়ে বলতে গেলেই ঠোঁট থেকে হাসি মুছে যাচ্ছে। গণনা কেন্দ্রের বাইরে বেরিয়ে সব পক্ষের এজেণ্টরা একই কথা বলেছেন — ‘এমন হবে ভাবিনি!’

কেন? এক তৃণমূল কর্মীর কথায়, ‘‘তৃণমূলের এই বাজারে ডোমকলে এ ভাবে হারতে হবে, কল্পনাও করিনি। ব্যান্ডের দলের বায়না হয়ে গিয়েছিল। পটকাও কিনে রাখা আছে। মিষ্টির দোকানেও বায়ানা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কী আর করি? সবই কপাল!’’

পাকাপাকি বায়না করা না হলেও সিপিএমের তরফ থেকেও অনেক দোকানের মালিকদের বেশ জোর দিয়ে বলা ছিল— ‘আজ কিন্তু মিষ্টি লাগবে। আর লাল আবিরটা যেন স্টকে থাকে। পটকায় যেন ভাল আওয়াজ হয়’ ইত্যাদি। কিন্তু কেউ আর সে সব কিনতে যাননি।

স্বাভাবিক ভাবেই, কারবারিদের মুখভার। ডোমকলের এক ব্যান্ডপার্টির কর্তার কথায়, ‘‘এ বছর ভোটের আগে বেশ ভালই বায়না হয়েছিল। তিন দলের লড়াইয়ে জাঁদরেল প্রার্থীর দৌলতে ঘনঘন ডাক পেয়েছি আমরা। ভাল রেটও পেয়েছি।’’ ফলের পরে যে উল্টোটা হবে, তাঁরা তা ভাবতেও পারেননি। পোশাক-আশাক পরিষ্কার করে, বাজনা ঝাড়াঝাড়ি করে বসে ছিলেন তাঁরা। বায়নার টাকাও নগদ গুনে নিয়েছিলেন। ‘‘বৃহস্পতিবার একটু বেলা গড়াতেই বলে দেওয়া হল যে আর আসতে হবে না’’— গোমড়া মুখে বলেন এক ব্যান্ডমাস্টার।

একই অবস্থা ডোমকলের এক প্রতিষ্ঠিত মিষ্টির দোকানের মালিকের। তাঁর কথায়, ‘‘ভেবেছিলাম, দুপুর গড়াতেই ভাল বেচাকেনা হবে, কিন্তু কোথায় কী? দিনের শেষে পুলিশ ছাড়া আর কেউ পা রাখেনি দোকানে। শুক্রবার অনেক মিষ্টি ফেলে দিতে হয়েছে আমাদের।’’

আবির আর পটকা?

উত্তরটা একই— ‘‘আর বলবেন না দাদা। প্যাকেট খুলতেও হয়নি। কোনও খদ্দের নেই! এত মাল এখন মহাজন ফেরত নেবে কি না সেটা নিয়েই চিন্তা করছি।’’

তবে পুলিশ ভারী খুশি। কেননা ডোমকলে ভোটের ইতিহাস রক্তাক্ত। এ বারও ভোটের দিন এক জনেরই প্রাণ গিয়েছে, সে-ও এই ডোমকলে। তৃণমূল জিতলে বাতাসে বারুদের গন্ধ, হারলেও তা-ই— পুলিশ থেকে সাধারণ মানুষের অন্তত তেমনটাই আশঙ্কা ছিল। সব দল মিইয়ে পড়ায় সেই আশঙ্কা অন্তত এড়ানো গিয়েছে।

পটকার শব্দ নেই, হইচই নেই। বাইক বাহিনীর দাপাদাপি নেই। জনকল্যাণ ময়দানে পাশাপাশি তিনটি দলের কার্যালয়ে গভীর নিস্তব্ধতা।

হাঁফ ছেড়ে আমজনতা বলছে— ‘‘ফল বেরনোর পরেও রাতে এ ভাবে ঘুমোতে পারব, ভাবিনি!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন