ফাইল চিত্র।
বৈঠকে তাঁরা বলেছিলেন, বন্ধ তোলা হবে কি না, তা নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে আন্দোলনের উৎসকেন্দ্রে গিয়ে। বুধবার সেই উৎসকেন্দ্র অর্থাৎ পাহাড়ে ফিরেছেন একে একে জিএনএলএফ ও জাপের নেতারা। মোর্চার বিনয় তামাঙ্গ অবশ্য এখনও ফেরেননি। মোর্চা সূত্রে খবর, সব ঠিক থাকলে আজ, বৃহস্পতিবার কলকাতা থেকে সোজা কার্শিয়াঙে এসে দলীয় সভা করতে পারেন বিনয়। এর মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে, বিমল গুরুঙ্গ রাজি না হলেও কি বন্ধ তোলার সিদ্ধান্ত নিতে পারবে মোর্চা? আর সেটা কি মেনে নেবে পাহাড়বাসী?
আজ সকাল পৌনে এগারোটায় বাগডোগরায় নামবেন বিনয়। তাঁকে পাহাড়ে নিয়ে যেতে কয়েক শো লোক হাজির থাকবেন। তার আগে পাহাড়ে অবশ্য অনেকটাই ‘খোলা হাওয়া’। বন্ধ না উঠলেও এ দিন খাস দার্জিলিং বাদে বেশির ভাগ এলাকায় দোকানপাট খুলে গিয়েছে। বন্ধ প্রত্যাহারের দাবিতে পোস্টারও পড়েছে। কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, বন্ধের সমর্থনেও পাল্টা পোস্টার দেখা গিয়েছে। মোর্চা সূত্রে খবর, গুরুঙ্গকে অক্সিজেন জোগাতে দলের কট্টরপন্থীরাই এই পোস্টার দিয়েছেন।
তা হলে কি গুরুঙ্গের রাশ এতটাই আলগা হয়েছে যে, কট্টরপন্থীদের মাধ্যমে এমন পাল্টা পোস্টার দিতে হচ্ছে? মোর্চার অন্দরের খবর, গোপন ডেরায় বসে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠছেন গুরুঙ্গ। এর একাধিক কারণ রয়েছে। প্রথমত, মূলত তাঁর সিদ্ধান্তে ডাকা এই বন্ধকে অবজ্ঞা করে পাহাড়ের মানুষ দোকানপাট খুলতে শুরু করেছেন। এতেই রাশ আলগা হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে মোর্চা প্রধানের মনে।
দ্বিতীয়ত, পাহাড়ে ফেরার পথে প্রকাশ্যে গুরুঙ্গকে চ্যালেঞ্জ জানান অন্য দলের নেতারা। জিএনএলএফের নীরজ জিম্বা বলেছেন, ‘‘জঙ্গলে থেকে বড় বড় কথা বলে কী হবে! সামনে এসে লড়াই করুন।’’ জাপ নেতা হরকাবাহাদুরের মন্তব্য, ‘‘কে, কী বলল, তাতে কিছু যায়-আসে না! আন্দোলন কোনও নেতার সম্পত্তি নয়।’’ তাঁর দল যে বন্ধের বিরুদ্ধে, সে কথা জানিয়ে হরকা বলেন, ‘‘পাহাড়ের মানুষ দোকানপাট খুলছেন। স্বাভাবিক অবস্থা চাইছেন। তাঁরা যা চান, তাই হবে।’’
আরও পড়ুন: বৈঠকের পরদিনই ভিড়ে ঠাসা লালকুঠি
তৃতীয়ত এবং সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ, গুরুঙ্গের সম্মতির অপেক্ষা না করেই কার্শিয়াঙে দলীয় সভার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বিনয় তামাঙ্গ-অনীত থাপারা। এই পরপর ধাক্কায় ক্ষিপ্ত গুরুঙ্গ। মোর্চা সূত্রে খবর, এ দিন সকালে গোপন ডেরায় বসে গুরুঙ্গ এক সতীর্থের ফোনে দার্জিলিঙের এক নেতার কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। গুরুঙ্গের রাগের আরও কারণ, তাঁর গ্রেফতারি আটকাতে মঙ্গলবার সর্বদল বৈঠক থেকে কোনও নিশ্চয়তা আদায় করতে পারেননি আলোচনাপন্থীরা। মোর্চা সূত্রেই জানা গিয়েছে, তাই বৈঠকের পরে বিনয় তিন জিটিএ সদস্যের মাধ্যমে বার্তা পাঠিয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও সাড়া দেননি গুরুঙ্গ। বরং, রাতারাতি ডেরা পাল্টে আরও একটি প্রত্যন্ত চা বাগান এলাকায় চলে গিয়েছেন।
মঙ্গলবার থেকেই পাহাড়ের কয়েকটি প্রত্যন্ত এলাকায় পুলিশি তৎপরতা বেড়েছে। ড্রোনের মাধ্যমে জোর নজরদারিও চলেছে। কালিম্পং থানায় হামলায় জড়িত সন্দেহে দুই মোর্চা নেতাকে এ দিন গ্রেফতার করা হয়েছে। তাই সম্ভবত নিজের দিকে থাকা কট্টরপন্থীদের সক্রিয় রাখতে চাইছেন গুরুঙ্গ, মনে করছে প্রশাসন।
ফলে চিন্তায় রয়েছেন বিনয় বা অনীত থাপারাও। কার্শিয়াঙের দলীয় সভা নিয়ে বিশদে কিছু বলতে চাননি বিনয়। তাঁর মন্তব্য, ‘‘শীঘ্রই একটা সভা করে পাহাড়ের সকলের মত নিয়ে পরের পদক্ষেপ ঘোষণা হবে।’’ সরকারি সূত্রের খবর, কার্শিয়াঙে সভার কথা পৌঁছেছে নবান্নেও। বাম আমলে গুরুঙ্গের বিরুদ্ধে আগাম জানিয়ে সভার সময় খুন হতে হয়েছিল মদন তামাঙ্গকে। তাই কার্শিয়াঙে সভায় যাতে গোলমাল না হয়, সে জন্য সব রকম ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।