এনআরসি নিয়ে শাহ-বচনে ফের ভয়

তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক অসীম ঘোষের দাবি, ‘‘এনআরসি রুখতেই উপনির্বাচনে সীমান্তবর্তী রাধিকাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের সংখ্যাগরিষ্ঠ বাসিন্দা তৃণমূলকে ভোট দিয়েছেন। তার জেরেই ওই গ্রাম পঞ্চায়েত বিজেপির দখলে থাকলেও উপনির্বাচনে তৃণমূল সেখানে এগিয়ে গিয়েছে।’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কালিয়াগঞ্জ শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৬:১৯
Share:

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।

এনআরসি নিয়ে আগে থেকেই সংশয় ছিল এলাকায়। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের বক্তব্য জেনে এ বার আতঙ্ক ছড়াল কালিয়াগঞ্জ ব্লকের ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের রাধিকাপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায়। একই পরিস্থিতিতে পড়েছেন জেলার অন্য প্রান্তের বাসিন্দারাও। তার জেরে মঙ্গলবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত রায়গঞ্জ শহরের একটি ব্যাঙ্কের সামনে আধার কার্ড সংশোধন ও নতুন কার্ডের আবেদন জানাতে কয়েক হাজার মানুষের ভিড় জমল।

Advertisement

ওই কেন্দ্রের রাধিকাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ২০টি সংসদ ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের লাগোয়া। সেখানকার ফরিদপুরের মালতি দেবশর্মা বাড়ির কাছেই বাজারে চায়ের দোকান চালান। তাঁর দোকানের পাশে ফল বিক্রি করেন মহম্মদ আনাউল্লা। দু’জনেই জানান, আশির দশকের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত রাধিকাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বেশিরভাগ এলাকার সীমান্তে কাঁটাতার ছিল না। ফলে ১৯৭২ সালে দেশভাগের পরে বাংলাদেশের বহু বাসিন্দা কালিয়াগঞ্জে এসে স্থায়ী ভাবে বসবাস শুরু করেন। তাঁদের মধ্যে রাজবংশী, আদিবাসী ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়েরও অনেকে ছিলেন। ১৯৭৭ সালে ভূমি সংস্কার আইন কার্যকর হওয়ার আগে কালিয়াগঞ্জের বেশিরভাগ রাজবংশী বাসিন্দাদের জমি জমিদারদের দখলে ছিল। মালতি ও আনাউল্লার প্রশ্ন, যাঁরা ১৯৭২ সালের পর থেকে সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে রাধিকাপুরে এসে বসবাস করছেন, যাঁদের জমি ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত জমিদারদের দখলে ছিল— তাঁরা কী ভাবে ১৯৭১ সালের আগের জমির দলিল দেখাবেন? তা হলে কী ভোটার, রেশন বা আধার কার্ড থাকা সত্বেও এনআরসির জেরে তাঁদের বাংলাদেশে পাঠানো হবে?

তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক অসীম ঘোষের দাবি, ‘‘এনআরসি রুখতেই উপনির্বাচনে সীমান্তবর্তী রাধিকাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের সংখ্যাগরিষ্ঠ বাসিন্দা তৃণমূলকে ভোট দিয়েছেন। তার জেরেই ওই গ্রাম পঞ্চায়েত বিজেপির দখলে থাকলেও উপনির্বাচনে তৃণমূল সেখানে এগিয়ে গিয়েছে।’’

Advertisement

এ দিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত রায়গঞ্জের ওই ব্যাঙ্কের সামনে জেলার ন’টি ব্লকের কয়েক হাজার বাসিন্দার লাইন ছিল। তাঁদের মধ্যে ইটাহারের চাষি সোলেমান আলি বলেন, ‘‘আমার পরিবারের দু’জনের আধার কার্ডে নামের বানান ভুল রয়েছে। আরও এক জনের কার্ডে পদবি নেই। টিভিতে অমিত শাহের বক্তব্য শোনার পরে এনআরসির আতঙ্কে কার্ড সংশোধন করতে এসেছি।’’ লাইনে থাকা কালিয়াগঞ্জের ধনকল এলাকার মুদি শশাঙ্ক চৌধুরীর কথায়, ‘‘আমার চার বছরের ছেলের আধার কার্ড নেই। অমিত শাহের কথা জানার পরে আর কোনও ঝুঁকি নিতে রাজি নই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন