শিলচরে পুলিশ অফিসারের সঙ্গে শ্রীজাত। শনিবার। ফাইল চিত্র
কলকাতায় ফিরে এসেছেন শ্রীজাত। রবিবার দুপুরে তাঁর কলকাতা ফেরার নির্দিষ্ট উড়ানের বদলে সাত-সকালে অন্য উড়ানে শিলচর ছাড়তে হয় তাঁকে। কিন্তু শনিবার সন্ধ্যায় শিলচরের একটি হোটেলে তাঁর অনুষ্ঠান ভন্ডুল করে ভাঙচুর-গোলমালের ঘটনায় এ দিন রাত পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করেনি পুলিশ। স্থানীয় পুলিশের বক্তব্য, কী হয়েছে তা নিয়ে নির্দিষ্ট অভিযোগ দায়ের হয়নি। আক্রান্ত কবির নিরাপত্তার দিকটাই তাঁরা গুরুত্বের সঙ্গে দেখছিলেন।
কিন্তু শিলচরের এই অভিজ্ঞতা সব মিলিয়ে তাঁর জীবনেও অভূতপূর্ব বলে মনে করছেন শ্রীজাত। সোশ্যাল মিডিয়ায় অকথ্য গালিগালাজ, হুমকি আগে টের পেয়েছেন। এর আগে একবার শিলিগুড়িতেও গেরুয়া-বাহিনীর রোষের মুখোমুখি হয়েছিলেন তিনি। তবু শ্রীজাত বলছিলেন, ‘‘এমন একটা পরিস্থিতি অভাবনীয়! সারা রাত চোখের পাতা এক করতে পরিনি।’’
এক জন কবির কবিতা পছন্দ হয়নি বলে এমন তাণ্ডবে দেশের সার্বিক অসহিষ্ণু আবহেরই ছবি উঠে আসছে বলে মনে করছেন অনেকেই। বর্ষীয়ান কবি শঙ্খ ঘোষ রবিবার বলেন, ‘‘গোটা দেশ জুড়ে যে স্পর্ধিত অনাচার চলছে, তার সাম্প্রতিকতম উদাহরণ শিলচরে এই হামলা। এমন একটা অবস্থার প্রতিবিধানের জন্য গোটা সাংস্কৃতিক জগতের পক্ষ থেকে সমবেত প্রতিবাদ আজ জরুরি।’’
শ্রীজাতর অনুষ্ঠানে ঢুকে পড়ে স্থানীয় এক বিজেপি নেতা অপ্রাসঙ্গিক ভাবে একটি ‘বিতর্কিত’ কবিতার কথা তুলতেই গোলমালের সূত্রপাত। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় খবর পেয়েই রাজ্যের দু’জন মন্ত্রীকে কবির কলকাতায় ফেরার বিষয়টা দেখতে বলেন। শ্রীজাত এ দিন সৌজন্যসূচক ধন্যবাদ দেন মুখ্যমন্ত্রীকে। বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের অবশ্য কটাক্ষ, ‘‘এই প্রতিবাদীরা তসলিমা নাসরিনের উপরে জুলুমের সময়ে মুখ খোলেন না।’’
আরও পড়ুন: তবু তো ক’জন আছি বাকি, এই ভরসা
কলকাতার সংস্কৃতি জগতে শ্রীজাতর সুহৃদরা অনেকেই এই প্রতিবাদ ক্ষুদ্র রাজনীতির সঙ্কীর্ণ চোখে দেখতে নারাজ। কবি বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় বলছিলেন, ‘‘ধর্ম-রাজনীতির পরিচয় নির্বিশেষে যে কোনও মানুষের কথা বলার অধিকার কেড়ে নেওয়া হলেই প্রতিবাদটা জরুরি। শ্রীজাতর উপরে হামলার দ্ব্যর্থহীন ভাবে প্রতিবাদ করছি, যেমন আগে অন্য ঘটনাতেও করেছি।’’ বন্ধুপ্রতিম কবি অংশুমান কর, শিবাশিস মুখোপাধ্যায়, বাচিক-শিল্পী সুজয়প্রসাদ চট্টোপাধ্যায়রা আজ, সোমবার বিকেল পাঁচটা নাগাদে অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টসের কাছে প্রতিবাদ-সভার ডাক দিয়েছেন। তাতে নবীন-প্রবীণ অনেক মুখই থাকার কথা। শঙ্খ ঘোষ-শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের বিবৃতিও হয়তো পড়া হবে। কবি সুবোধ সরকার ঘটনার পরেই শ্রীজাতর সঙ্গে কথা বলেছিলেন। নাট্যকর্মী কৌশিক সেন বলেন, ‘‘অনুষ্ঠানে অনেকেই শ্রীজাতর পাশে ছিলেন এটা ভাল দিক!’’