‘আমাদের মতো মানুষের কথাও একটু ভাবুন’

কাঁকুলিয়া রোডের বাসিন্দা, ৮২ বছর বয়সি অসীম মুখোপাধ্যায় ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত। শুধু শব্দবাজি নয়, আতসবাজির কারণে যে বায়ুদূষণ হয়, তা অসীমবাবুর মতো রোগীদের ক্ষেত্রে বিপজ্জনক বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। ক্যানসার চিকিৎসক গৌতম মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সাধারণ মানুষেরই শ্বাসকষ্ট, কাশি, চোখ জ্বালা-সহ নানা রকম সমস্যা হয়। কিন্তু যাঁরা ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত, যাঁদের চিকিৎসা চলছে, তাঁদের এই দূষণে থাকাটা অত্যন্ত কষ্টের। শারীরিক ক্ষতিও এর জেরে অনেকটাই বেড়ে যায়।’’ষষ্ঠীতেই ফিরেছি হাসপাতাল থেকে। পাঁচ দিন ভর্তি ছিলাম। গত বছর ক্যানসার ধরা পড়ার পর থেকেই অবশ্য বেশ কয়েক বার অসুস্থ হয়ে পড়েছি। দেড় বছরের মধ্যে প্রায় ছ’মাসই হাসপাতালে কাটাতে হয়েছে।

Advertisement

অসীম মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০১৮ ০১:৪০
Share:

বাড়িতে অসীমবাবু। সোমবার। নিজস্ব চিত্র

ষষ্ঠীতেই ফিরেছি হাসপাতাল থেকে। পাঁচ দিন ভর্তি ছিলাম। গত বছর ক্যানসার ধরা পড়ার পর থেকেই অবশ্য বেশ কয়েক বার অসুস্থ হয়ে পড়েছি। দেড় বছরের মধ্যে প্রায় ছ’মাসই হাসপাতালে কাটাতে হয়েছে। কিন্তু এ বার অন্য একটা ভয় কাজ করছে। কালীপুজোর সময়টা শব্দবাজি, আতসবাজির হাত থেকে কী ভাবে দুর্বল শরীরটাকে বাঁচাব সেটা ভেবেই আতঙ্কে আছি। শরীরটা এত খারাপ হয়েছে বলেই হয়তো মনের জোরটাও চলে গেছে। বারবার মনে হচ্ছে, ঠিক কাকে বললে, কার কাছে গেলে এই সময়টুকু আমার মতো মানুষেরা একটু স্বস্তিতে কাটাতে পারবেন!

Advertisement

এমনিতে ধোঁয়া-ধুলো যাতে কোনও ভাবে বাড়িতে না ঢোকে, সে জন্য সব সময়েই বাড়ির দরজা-জানালা বন্ধ রাখতে হয়। রোগ ধরার পর থেকে ডাক্তারবাবুরাই বারণ করে দিয়েছেন বাড়ির দরজা-জানালা খোলা রাখতে। বলেছেন, অনেক সামলে থাকতে হবে আমাকে। এমনকি, বাড়িতে রান্নার ধোঁয়ার কাছে যাওয়াও পুরোপুরি বারণ। কারণ, সামান্য ধোঁয়াতেও অসম্ভব কাশি শুরু হয়। কাশতে কাশতে আরও দুর্বল লাগে। একটু হাঁটলেও তো ভারী-ভারী শ্বাস নিতে হয়। সে জন্য বাড়ি থেকেও বেশি বেরোতে পারি না। সব সময়ে আবার বাড়ির মধ্যে থাকতেও ইচ্ছে করে না। কালীপুজো-দীপাবলির পুরো সময়টাই ঘরবন্দি হয়ে থাকতে হবে। কারণ সামান্য ধোঁয়াও আমার কাছে এখন বিষের সমান। বয়স হয়ে গেছে তো, তাই অল্পেতেই আবেগপ্রবণ হয়ে প়ড়ি। মনে হয়, যাঁরা শব্দবাজি বা খুব বেশি ধোঁয়া ওঠা বাজি পোড়ান, তাঁরা কি আমাদের মতো মানুষদের কথা একবারও ভাবেন না?

গত বছরও কালীপুজো-দীপাবলির সময়ে বাড়ির দরজা-জানালা পুরোপুরি বন্ধ করে কাটিয়েছিলাম। এক বছর সময় কেটে গিয়েছে। মনের জোর আরও একটু হারিয়েছি হয়তো। তাই এখন এমন হয়েছে দূর থেকে বাজির ধোঁয়া দেখলেই কেমন শ্বাসটা বন্ধ হয়ে আসে। বাড়িতে অক্সিজেন সিলিন্ডার মজুত আছে। কিন্তু তাতেও মনের ভয়টা যাচ্ছে না। কালীপুজোর আগেই যে ভাবে আশপাশে বাজি ফাটতে শুরু করেছে, তাতে ওই ভয়টা আরও বেশি

Advertisement

জাঁকিয়ে বসছে।

দূষণে যাতে কোনও সমস্যা না হয়, সে কারণে সব সময়ে সতর্ক থাকতে বলেছেন চিকিৎসকেরা। কিছু দিন আগে বাড়ির পাশে মাঠে জঞ্জালের স্তূপে আগুন ধরিয়েছিল কেউ। সেই ধোঁয়া ঘরের মধ্যে চলে এসেছিল। তাতে ভীষণ কষ্ট পেয়েছিলাম। বুঝে উঠতে পারছিলাম না কী করব! ফুসফুসে ক্যানসার ধরার পরপরই স্ত্রীও মারা গেলেন। দুই ছেলে, এক মেয়ে রয়েছে আমার। ওরা প্রাণপণে আগলে রাখে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে ওরাই বা কী করবে? বাজি নিয়ে উৎসাহী লোকজনের কাছে তাই এই অশক্ত শরীরের বৃদ্ধের আবেদন, আমাদের মতো মানুষের কথাও একটু ভাবুন! বড় কষ্টে থাকি এই সময়টা আমরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন