বার্ন স্ট্যান্ডার্ড বন্ধের সিদ্ধান্ত বেআইনি, রায় শুনে আশায় কর্মীরা

‘কারখানার সঙ্গে বাঁচবে বাজারটাও’

কারখানার গেট থেকে একটু দূরে চা ও ছাতুর সরবতের দোকান প্রেমনাথ সাউয়ের। মঙ্গলবার সকালে তাঁর অনুপস্থিতিতে দোকানে ছিল দশম শেণিতে পড়া মেয়ে আশাকুমারী সাউ।

Advertisement

সুশান্ত বণিক

আসানসোল শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০১৯ ০১:১৮
Share:

মঙ্গলবার সকালে কারখানার সামনে জড়ো হয়ে আলোচনা শ্রমিক-কর্মীদের। ছবি: পাপন চৌধুরী

কারখানার কর্মী আবাসন লাগোয়া বাজারে তাঁর দোকান। বছর ষাটের পুরনো পারিবারিক এই দোকানই আয়ের উৎস। দোকানের মালিক অনিল রাম মঙ্গলবার সকালে শুনেছেন বার্ন স্ট্যান্ডার্ড বন্ধ করা অবৈধ বলে ন্যাশনাল কোম্পানি ল আপিল ট্রাইবুনালের (এনসিএলএটি) রায়ের কথা। তিনি বলেন, ‘‘সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দোকান খুলে ঠায় বসে থাকি। কিন্তু বিক্রিবাটা তলানিতে ঠেকেছে। কারখানা আবার খুললে বাজারটা অন্তত বাঁচবে।’’

Advertisement

ওই রায়ের কথা শোনার পরে একই রকম প্রতিক্রিয়া কারখানার আশপাশের ব্যবসায়ী ও আসানসোলের বাণিজ্য মহলের। বার্ন স্ট্যান্ডার্ড বেঁচে থাকলে এলাকার অর্থনীতিও বেঁচে থাকবে, মনে করছেন তাঁরা।

কারখানার গেট থেকে একটু দূরে চা ও ছাতুর সরবতের দোকান প্রেমনাথ সাউয়ের। মঙ্গলবার সকালে তাঁর অনুপস্থিতিতে দোকানে ছিল দশম শেণিতে পড়া মেয়ে আশাকুমারী সাউ। সে জানায়, এত দিন এই দোকানের আয়েই তাদের লেখাপড়া-সহ সংসারের যাবতীয় খরচ চলেছে। কিন্তু গত বছর কারখানা বন্ধ হওয়ার পর থেকে দিন বদলেছে। তার কথায়, ‘‘দোকানে লোকের আসা-যাওয়া কমে গিয়েছে। এখন তাই খরচ সামলাতে বাবাকে অন্য কাজও করতে হচ্ছে।’’

Advertisement

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কারখানায় ঝাঁপ পড়ার পরে অনেকেই ব্যবসা গুটিয়ে অন্যত্র চলে গিয়েছেন। চিন্তা মণ্ডল নামে তেমনই এক জনের দাবি, এখানে আর কোনও আশা নেই মনে করে ঝাড়খণ্ডে দেশের বাড়িতে নতুন ব্যবসা শুরু করেছেন। ফের যদি কখনও কারখানা চালু হয় তবে সুযোগ মতো ফিরে আসবেন। বাজারে কচুরির দোকান নিমাই গড়াইয়ের। দোকানের পিছনে ঝুপড়ি তৈরি করে পরিবার নিয়ে থাকেন। কারখানা বন্ধে চূড়ান্ত হতাশ তিনি। এ দিন তাঁর প্রশ্ন, ‘‘সত্যিই কি কারখানা খুলবে? তাহলে বন্ধ হল কেন? এক বছর তো প্রায় অনাহারে কাটালাম!’’

শহরের ক্ষুদ্র-মাঝারি ব্যবসায়ীরাও চান, এই কারখানা আবার খুলুক। এলাকায় কর্মসংস্থান হোক। একই দাবি শিল্পাঞ্চলের নানা বণিক সংগঠনেরও। আসানসোল চেম্বার অব কমার্সের উপদেষ্টা সুব্রত দত্তের কথায়, ‘‘কারখানার আধুনিকীকরণ হলে অনেক বেশি মানুষ কাজ পাবেন। তাতে স্থানীয় বাজার চাঙ্গা হবে। এলাকার অর্থনীতির উন্নয়ন হবে।’’ এনসিএলএটি-র রায়ে আশাবাদী দক্ষিণবঙ্গের বড় বণিক সংগঠনের সহ-সম্পাদক সচিন ভালোটিয়ার মতে, ভারী শিল্প-সংস্থা বন্ধ হয়ে গেলে অনুসারী শিল্পগুলিও ধুঁকতে শুরু করে। যার ফলস্বরূপ শ্রমিক ছাঁটাই হয়। কর্মহীনের সংখ্যা বাড়ে। ফলে, গোটা এলাকার অর্থনীতিই ধসে পড়ে। বার্ন স্ট্যান্ডার্ডের ক্ষেত্রেও সেটাই হয়েছে। জেলা চেম্বার অব কমার্সের সদস্য পবন গুটগুটিয়া বলেন, ‘‘শিল্প বন্ধ মানে আয়ের উৎস বন্ধ, তার জেরে বাজারে আর্থিক মন্দা। বার্ন স্ট্যান্ডার্ড আবার খুললে শিল্পাঞ্চলেরই লাভ।’’

আপিল ট্রাইবুনালের রায় কবে কার্যকর হবে, তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব রয়েছে ঠিকই। তবে সকলেরই আশা, ফের জেগে উঠবে এই শিল্পনগরী।

বার্ন-কথা

১৯১৮: ইন্ডিয়ান স্ট্যান্ডার্ড ওয়াগন (আইএসডব্লিউ) সংস্থা তৈরি হয় বার্নপুরে। ১৯৭৫: সংস্থার রাষ্ট্রায়ত্তকরণ। ১৯৭৬: সংস্থাকে হাওড়ার বার্ন অ্যান্ড কোম্পানির সঙ্গে সংযুক্ত করে নামকরণ হয় বার্ন স্ট্যান্ডার্ড। ১৯৮৭: সংস্থা বিবিইউএনএল -এর অন্তর্গত হয়। ১৯৯৪: সংস্থাকে রুগ্‌ণ ঘোষণা করে বিআইএফআর-এ পাঠানো হয়। এ নিয়ে ১৭টি বৈঠক হয়। ২০০০: সংস্থা বাঁচাতে কর্তৃপক্ষের তরফে পুনরুজ্জীবন প্রকল্প ভারী শিল্প মন্ত্রকে পাঠানো হয়। তবে তা গৃহীত হয়নি। ২০০৯: তৎকালীন রেলমন্ত্রী লালুপ্রসাদ যাদব সংস্থাকে রেলের অধিগ্রহণের প্রস্তাব দেন। যদিও পরে অন্যত্র দু’টি ইউনিট অধিগ্রহণ করা হলেও বাদ পড়ে হাওড়া ও বার্নপুরের কারখানা। ২০১০: কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে সংস্থাকে রেলের অধিগ্রহণের প্রস্তাব দেন তৎকালীন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সে বছরই আনুষ্ঠানিক ভাবে অধিগ্রহণ করে রেল। ২০১৭: সংস্থাকে এনসিএলটি-র কাছে দেউলিয়া ঘোষণার জন্য পাঠানো হয়। ২০১৮: দেউলিয়া ঘোষণা। কর্মীদের স্বেচ্ছাবসরের বিজ্ঞপ্তি। ২০১৯: এনসিএলএটি-র রায়, বার্ন স্ট্যান্ডার্ড বন্ধের ঘোষণা অবৈধ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন