রক্তদান শিবিরে সাজানো উপহার। — নিজস্ব চিত্র
রক্ত দিলেই গরম মাংস-ভাত!
চমকে গিয়েছিলেন এক রক্তদাতা। শিবিরে গিয়ে আরও চমক। খাবারের সঙ্গে উপহারও! ৫ লিটারের প্রেশার কুকার এবং ফলের প্যাকেট। দুঃস্থ মহিলাদের জন্য পিতলের ঘড়াও!
অতিথিদের জন্য রুপোর ব্যাজ।
শনিবার তারকেশ্বর পুরসভার উপ-পুরপ্রধান, তৃণমূলের উত্তম কুণ্ডুর উদ্যোগে আয়োজিত রক্তদান শিবিরে এমন এলাহি আয়োজন দেখে থ তারকেশ্বরের বাসিন্দারা। এ সামাজিক দায়বদ্ধতার নমুনা নাকি শাসক দলের নেতার ক্ষমতা প্রদর্শনের ব্যবস্থা, তা নিয়ে চলতে থাকে জল্পনা। এমন শিবিরে রক্ত দিয়ে গেলেন সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি রক্তদাতা। বিরোধীরা শিবিরের খরচ নিয়ে প্রশ্ন তুলে থেমে গেলেও রক্তদান আন্দোলনের সঙ্গে জড়িতরা কিন্তু অশনি-সঙ্কেত দেখছেন। তাঁদের মতে, এটা স্বেচ্ছায় রক্তদান হল না। রক্ত বিক্রি করা হল। উপহারের লোভে কেউ জটিল রোগ লুকিয়ে রক্ত দিয়েছেন, এমন আশঙ্কাও থেকে যাচ্ছে।
স্বেচ্ছায় রক্তদান আন্দোলনের কর্মী ডি আশিস বলেন, ‘’৩৬ বছর ধরে আমি এই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত। পুরস্কার চালু হওয়ার জেরে রেষারেষিতে পিছিয়ে পড়ায় ৩০ শতাংশ শিবির ইতিমধ্যে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। শুনে মনে হচ্ছে এ দিন ওখানকার অনেক রক্তই ফেলা যাবে। এ সব নিয়ে সরকার কঠোর না হলে আন্দোলন ধাক্কা খাবে।’’
উত্তমবাবু অবশ্য দাবি করেছেন, যথাযথ নিয়ম মেনেই রক্তদাতাদের রক্ত নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘মোট ৩৭৭০ জন রক্ত দিয়েছেন। ৮টি ব্লাডব্যাঙ্ক রক্ত নিয়েছে। মানুষ ভালবেসে অর্থ সাহায্য করেছেন। আমার অনেক শুভাকাঙ্ক্ষী আছেন। তাঁরাও টাকা দিয়েছেন।’’
এ দিন তারকেশ্বর রেল স্টেশনের পাশেই এই শিবিরের আয়োজন করা হয়েছিল। ভোর থেকেই রক্তদাতাদের ভিড় জমতে থাকে। শিবিরের একপাশে সাজিয়ে রাখা হয়েছিল উপহার সামগ্রী। রক্তদাতা ছাড়াও শিবিরের আসা সকলের জন্যই ছিল পেটপুজোর ব্যবস্থা। অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি বিপণনমন্ত্রী তথা তৃণমূলের জেলা সভাপতি তপন দাশগুপ্ত, কৃষিমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু, স্থানীয় বিধায়ক রচপাল সিংহ-সহ জেলা তৃণমূল নেতারা। সন্ধ্যায় ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানস্থলে কানাঘুষো চলছিল আয়োজনের খরচ নিয়ে। কেউ বলছিলেন, ৪০ লক্ষ। কেউ বা ৪৫। উত্তমবাবু অবশ্য ভাঙতে চাননি। তিনি বলেন, ‘‘ঠিক কত
খরচ হয়েছে, এখনও হিসেব করে উঠতে পারিনি।’’
বিরোধীরা অবশ্য এ নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি। তারকেশ্বরের সিপিএম নেতা স্নেহাশিস রায় বলেন, ‘‘ওখানে দিনভর যা হয়েছে, তা ক্ষমতার অপব্যবহার এবং ঔদ্ধত্যের প্রকাশ। এত টাকার উৎস কী, তা মানুষের কাছে খোলসা করে বলা হোক। এ ভাবে পুরস্কারের লোভ দেখানো হলে রক্তদান আন্দোলনের উদ্দেশ্যই নষ্ট হবে।’’