দাদার শেষযাত্রায় ভিড় সামলাল ভাইয়েরাই

খড়্গপুরের নিউ সেটলমেন্টে তৃণমূল কার্যালয়ে বুধবার গুলিতে জখম শ্রীনু নায়ডু, ধর্মা রাও-সহ পাঁচজনকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। দু’দিন পরে সেখানেই ফিরে এল শ্রীনু, ধর্মার নিথর দেহ।

Advertisement

দেবমাল্য বাগচী

খড়্গপুর শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০১৭ ০০:০৫
Share:

স্বামী শ্রীনুকে হারিয়ে শোকস্তব্ধ পূজা নায়ডু। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।

খড়্গপুরের নিউ সেটলমেন্টে তৃণমূল কার্যালয়ে বুধবার গুলিতে জখম শ্রীনু নায়ডু, ধর্মা রাও-সহ পাঁচজনকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। দু’দিন পরে সেখানেই ফিরে এল শ্রীনু, ধর্মার নিথর দেহ।

Advertisement

কলকাতার হাসপাতাল থেকে শ্রীনু ও ধর্মার দেহ বৃহস্পতিবারই আনা হয়েছিল খড়্গপুরে। রাতে দেহ দু’টি রেল হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়। শুক্রবার সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ নিউ সেটলমেন্টের কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয় দেহ দু’টি। কান্নায় ভেঙে পড়েন শ্রীনির স্ত্রী পূজা নায়ডু, মা রাবণাম্মা, শাশুড়ি বি মিনা কুমারী। কয়েক হাত দূরে বাড়িতেও তখন কান্নার রোল। স্বামীর দেহ আঁকড়ে ধরে পূজা বলছিলেন, “আমার স্বামীকে যারা এ ভাবে মারল তাদের ফাঁসি চাই।”

রেলশহরে শ্রীনুর পরিচয় ‘মাফিয়া’ হলেও নিজের এলাকায় অনেকের কাছেই সে ছিল ‘মসিহা’। তার উপর শ্রীনুর স্ত্রী পূজা ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর। ফলে, শ্রীনুর শেষযাত্রায় যে ঢল নামবে, তা জানাই ছিল। ভিড় সামলাতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছিল পুলিশ। শেষে ডাকাবুকো কয়েকটা ছেলে হাত উঠিয়ে সকলকে সরে দাঁড়াতে বলে। ব্যস্‌, ঠেলাঠেলি বন্ধ। কিন্তু সজল চোখে পাড়ার মেয়ে-বৌরা তখন বলে উঠলেন, “শ্রীনুকি অক্কাসারি চুরালি” মানে, ‘একবারের জন্য শ্রীনুকে দেখতে চাই’। ওই ছেলেগুলোই সেই ব্যবস্থা করে দিল। তারপর সার বেঁধে একে-একে শ্রীনু ও ধর্মার দেহ দেখে বেরিয়ে গেলেন পড়শিরা। তবে ভিড় থাকল শ্মশান পর্যন্ত। শ্মশানে দাঁড়িয়ে ডি মহেশ, আর সুমনেরা বলছিল, “বিপদে পড়লেই দাদার কাছে যেতাম। সব মিটিয়েও দিত। এখন যে কী হবে!”

Advertisement

শ্রীনু ও ধর্মা দু’জনের শেষকৃত্যই এ দিন সম্পন্ন হয়েছে দক্ষিণী রীতিতে। মৃতদেহ দাহ করার পরে প্রথা মেনে তিন দিনের শ্রাদ্ধানুষ্ঠানও সেরে ফেলেন পরিজনেরা। শ্রীনুর অন্ত্যেষ্টিতে শুধু এলাকাবাসী নন, খড়্গপুর শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকেই লোকজন এসেছিল। সৎকারের গোটা পর্বটাতেই হাজির ছিলেন পুরপ্রধান প্রদীপ সরকার, উপ-পুরপ্রধান মহম্মদ হানিফ, কাউন্সিলর সরিতা ঝাঁ, জগদম্বাপ্রসাদ গুপ্ত প্রমুখ।

এ দিন শ্রীনু ও ধর্মার দেহ তাদের রেল কোয়ার্টারেও নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর ব্যান্ডের বাদ্যি-সহ বেরোয় শেষযাত্রা। নিউ সেটলমেন্টের নয়াখোলি এলাকা ঘুরে মন্দিরতলা শ্মশানে পৌঁছয় দেহ দু’টি। গোটা রাস্তাতেই পুলিশ মোতায়েন ছিল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন