শোয়ার ঘরেও উঁকি সাইবার অপরাধের!

দাম্পত্য কলহের জেরে স্বামীর কাছ থেকে বিবাহ-বিচ্ছেদের নোটিস পেয়েছিলেন হাওড়ার এক যুবতী। নোটিস খতিয়ে দেখতে গিয়ে তাজ্জব বনে যান ওই যুবতীর আইনজীবী। নোটিসে যুবতীর বিরুদ্ধে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের অভিযোগ এনেছিলেন তাঁর স্বামী।

Advertisement

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০১৬ ০৪:৫৭
Share:

দাম্পত্য কলহের জেরে স্বামীর কাছ থেকে বিবাহ-বিচ্ছেদের নোটিস পেয়েছিলেন হাওড়ার এক যুবতী। নোটিস খতিয়ে দেখতে গিয়ে তাজ্জব বনে যান ওই যুবতীর আইনজীবী। নোটিসে যুবতীর বিরুদ্ধে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের অভিযোগ এনেছিলেন তাঁর স্বামী। এবং তিনি তা জেনেছিলেন, স্ত্রীর ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে! ওই নোটিসের ভিত্তিতেই স্বামীর বিরুদ্ধে রাজ্যের সাইবার অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালে হ্যাকিংয়ের মামলা দায়ের করেছেন ওই যুবতী।

Advertisement

আর্থিক জালিয়াতি বা সোশ্যাল নেটওয়ার্কে ভুয়ো প্রোফাইল খোলার সীমা ছাড়িয়ে পারিবারিক বিবাদেও এখন যে হ্যাকিংয়ের মতো অপরাধ ঢুকে পড়েছে, তার নজির হাওড়ার ওই তরুণীর ঘটনাই। পুলিশের তথ্য বলছে, গত কয়েক বছরে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা যেমন বেড়েছে, তেমনই পাল্লা দিয়ে বেড়েছে সাইবার অপরাধ। তার ফলেই দেখা যাচ্ছে, সাইবার অপরাধের গণ্ডি বাড়ছে।

সাইবার অপরাধ দমন বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, ইন্টারনেট এবং প্রযুক্তিকে হাতিয়ার করে এখন দাপিয়ে বেড়াচ্ছে জঙ্গিরাও। কখনও তাদের হামলায় বিগড়ে যাচ্ছে সরকারি ওয়েবসাইট। কখনও বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট হ্যাক করে নিজেদের প্রচার চালাচ্ছে তারা। গোয়েন্দাদের নজর এড়িয়ে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রাখতেও জঙ্গিরা সাইবার প্রযুক্তি ব্যবহার করছে।

Advertisement

এথিক্যাল হ্যাকিং বিশেষজ্ঞ সন্দীপ সেনগুপ্ত জানাচ্ছেন, সম্প্রতি জঙ্গিরা যোগাযোগের জন্য যে অ্যাপস ব্যবহার করছে, তাতে টেলিকম সংস্থার ইন্টারনেট পরিষেবা লাগে না। ‘লোকাল নেটওয়ার্ক’-এর মাধ্যমেই তা ব্যবহার করা যায়। এই অ্যাপসের মেসেজ মোবাইলে জমা হয় না। ফলে মোবাইল বাজেয়াপ্ত করার পর ফরেন্সিক পরীক্ষাতেও বার্তা লেনদেনের প্রমাণ মেলে না। নিজেদের সংগঠনে লোক নিয়োগের ক্ষেত্রেও সোশ্যাল নেটওয়ার্ক সাইটকে হাতিয়ার করছে জঙ্গিরা।

এই প্রসঙ্গেই উঠে এসেছে সাইবার সন্ত্রাসবাদের কথা। তথ্যপ্রযুত্তি বিশেষজ্ঞদের অনেকেই জানাচ্ছেন, বিদ্যুৎ, প্রতিরক্ষা-সহ বহু গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র সাইবার প্রযুক্তির উপরে নির্ভরশীল। ফলে দেশকে বিপদে ফেলতে ওই ব্যবস্থাও জঙ্গিদের নিশানা হতে পারে। সেনা সূত্রের খবর, এই সব হামলার মোকাবিলা করার জন্যই স্থল, বায়ু ও নৌসেনার বাছাই করা অফিসারদের নিয়ে সাইবার কম্যান্ড তৈরির কথা ভাবা হয়েছে।

সাইবার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সোশ্যাল নেটওয়ার্ক বা অবাঞ্ছিত ই-মেল সম্পর্কে সচেতন না থাকলেই হ্যাকারদের খপ্পড়ে পড়ে যেতে পারেন সাধারণ মানুষ। এমনকী স্মার্ট ফোনে যে সব অ্যাপস ব্যবহার করা হয় তা থেকেও গোপন ব্যক্তিগত তথ্য বেরিয়ে যেতে পারে। সম্প্রতি নিউ ইয়র্কের বিংহ্যাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা দাবি করেছেন, স্মার্টওয়াচের মতো নতুন ধরনের যন্ত্র হ্যাক করেও পিন জেনে নিতে পারে দুষ্কৃতীরা। এ ভাবে গোপন তথ্য বেরিয়ে গেলে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা উধাও হয়ে যেতে পারে কিংবা সামাজিক ভাবে হেনস্থার শিকার হতে পারে আম-জনতা। এমনকী বড় মাপের গোলমালে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

অনেকেই যে অসচেতন ভাবে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে গিয়ে এমন বিপদে পড়ছেন, তা দাবি করে সাইবার আইন বিশেষজ্ঞ রাজর্ষি রায়চৌধুরী জানালেন, অনেক সময় দেখা যায় অপরাধের শিকার হওয়া ব্যক্তি নিজেই হয়তো হ্যাকারকে সাহায্য করে ফেলেছেন। অনেকেই মোবাইলে বিভিন্ন অ্যাপস ডাউনলোড করার আগে অ্যাপসটি কে তৈরি করেছে বা তার প্রয়োজনীয়তা কী, সে সব খতিয়ে দেখেন না। ‘‘সাইবার অপরাধ থেকে বাঁচতে সচেতনতাই সবার আগে দরকার,’’ বলছেন রাজর্ষিবাবু। সন্দীপবাবু বলছেন, ‘‘দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিও সাইবার জঙ্গিদের নিশানায় রয়েছে। কিন্তু বহু ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, এই ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলিতে যথেষ্ট সাইবার নিরাপত্তা নেই। কিন্তু তা নিয়ে ওই সব প্রতিষ্ঠানের তেমন মাথাব্যথাও নেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন