কোচবিহার থেকে উড়ানের আশায় জল

পরীক্ষামূলক ভাবে বিমান নেমেছিল কোচবিহারের মাটিতে। রাজ্যের এক মন্ত্রী বলেছিলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্ন সার্থক হতে চলেছে।’’ কিন্তু, বাস্তবের মাটিতে মুখ থুবড়ে পড়ল সেই উদ্যোগ। আপাতত কোচবিহার থেকে চালু হচ্ছে না কোনও উড়ান। যে পিনাক্‌ল এয়ারের উপরে ভরসা করে রাজ্য সরকার অন্ডাল-বাগডোগরা-কোচবিহার ছুঁয়ে উড়ান চালানোর কথা বলেছিল, সেই সংস্থাই চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে, তাদের পক্ষে এখন বিমান চালানো সম্ভব নয়।

Advertisement

সুনন্দ ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ জুন ২০১৫ ০৩:১১
Share:

পরীক্ষামূলক ভাবে বিমান নেমেছিল কোচবিহারের মাটিতে। রাজ্যের এক মন্ত্রী বলেছিলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্ন সার্থক হতে চলেছে।’’ কিন্তু, বাস্তবের মাটিতে মুখ থুবড়ে পড়ল সেই উদ্যোগ। আপাতত কোচবিহার থেকে চালু হচ্ছে না কোনও উড়ান। যে পিনাক্‌ল এয়ারের উপরে ভরসা করে রাজ্য সরকার অন্ডাল-বাগডোগরা-কোচবিহার ছুঁয়ে উড়ান চালানোর কথা বলেছিল, সেই সংস্থাই চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে, তাদের পক্ষে এখন বিমান চালানো সম্ভব নয়। এমনকী, বিভিন্ন বিমানবন্দরে সিকিউরিটি ডিপোজিট হিসেবে যে টাকা তারা রেখেছিল, তা-ও ফেরত চেয়েছে পিনাক্‌ল।

Advertisement

কলকাতা ও বাগডোগরা থেকে নিয়মিত অন্য সংস্থার উড়ান চলছেই। অন্ডাল-কলকাতা রুটে সম্প্রতি চালু হয়েছে অ্যালায়েন্সের বিমান। কিন্তু, কোচবিহার অপেক্ষা করছিল এই পিনাক্‌ল-এর জন্য। এর আগে নর্থ-ইস্ট শাটল নামে একটি সংস্থা কোচবিহারে উড়ান চালু করেছিল। কিন্তু, যাত্রীর অভাবে তারা উড়ান বন্ধ করে দেয়। এ বার উড়ান চালানোর পথে অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছিল পিনাক্‌ল। রাজ্য সরকারের তরফে তাদের সঙ্গে এ নিয়ে চুক্তি করেছিল অন্ডাল বিমানবন্দরের মালিক বেঙ্গল অ্যারোট্রপলিস প্রাইভেট লিমিটেড (বিএপিএল)। ঠিক ছিল, আগের মতোই ১৯ আসনের বিমানে ভর্তুকি দেওয়া হবে। প্রতিটি বিমানবন্দরে তাদের জন্য ঘরও নির্দিষ্ট হয়ে গিয়েছিল। তার পরে আচমকা এই সিদ্ধান্ত।

কেন? পিনাক্‌ল এয়ারের কর্তা অমিত ভরদ্বাজ বলেন, ‘‘সমস্যা হয়েছে। কী সেই সমস্যা তা খোলসা করে বলা সম্ভব নয়। আমাদের কর্তা এই মূহূর্তে ব্যাঙ্ককে। তিনি সোমবার ফিরলেই জানা যাবে।’’

Advertisement

একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্য সরকারের অর্থ দফতরই শেষ পর্যন্ত রাজি হয়নি এই উড়ানের জন্য ভর্তুকি দিতে। কারণ হিসেবে জানা গিয়েছে, ১৯ আসনের বিমান চালানোর জন্য যে টেন্ডার জারি করা হয়েছিল, সেখানে সব থেকে কম টাকার দরপত্র দিয়েই পিনাক্‌ল বরাত পায়। সেই অনুযায়ী ভর্তুকি পাওয়ার কথা ছিল তাদের। কিন্তু, চুক্তির পরেই তারা বলে, ১৯ আসনের যে বিমান পাবে বলে মনে হচ্ছিল, এখনই তা পাওয়া যাচ্ছে না। তবে আপাতত ৬ মাস তারা ৯ আসনের বিমান চালাতে রাজি। সেই মতো শুরু হয়ে যায় প্রস্তুতি। মুখ্যমন্ত্রী চেয়েছেন, তাই পরীক্ষামূলক উড়ান চালানো হয়। ঠিক হয়, ১ জুন থেকে শুরু হবে উড়ান। এমনকী, কোচবিহারের পরে বালুরঘাট থেকেও বিমান চালানো হবে, মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণার পরে সেখানে রাজ্য সরকারই নিজের খরচে বিমানবন্দর তৈরির কাজে নেমে পড়ে।

কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোচবিহার থেকে কোনও বিমানই ওড়েনি নির্ধারিত ১ জুন। কী কারণে বিলম্ব, তা নিয়ে এ ক’দিন নানা জল্পনা চললেও এখন স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে, ১৯ আসনের বিমান না পাওয়াতেই সব প্রস্তুতি আপাতত জলে। কারণ, টেন্ডার হয়েছিল ১৯ আসনের বিমানের জন্যই। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকার যদি ৯ আসনের বিমানের জন্যও ভর্তুকি দিতে শুরু করে, সে ক্ষেত্রে অন্য যে সব সংস্থার দরপত্র বাতিল করা হয়েছিল তারা আপত্তি তুলতে পারে। এবং জল গড়াতে পারে আদালত পর্যন্ত। রাজ্য সেই ঝুঁকি নিতে চাইছে না।

রাজ্যের পরিবহণ সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘নতুন করে টেন্ডার করেছে বেঙ্গল অ্যারোট্রপলিস (বিএপিএল)।’’ জানা গিয়েছে, সাত আসনের বেশি কোনও বিমান থাকলেই সেই সংস্থা টেন্ডারে অংশ নিতে পারবে। কলকাতা-অন্ডাল-বাগডোগরা-কোচবিহার রুটে উড়ান চালাতে বছরে যত টাকা ভর্তুকি লাগবে তার অর্ধেক দেবে বিএপিএল, বাকিটা দেবে রাজ্য সরকার।

প্রশ্ন হল, বিএপিএল-এর এ ব্যাপারে আগ্রহী হওয়ার কারণ কী? তারা তো অন্ডাল বিমানবন্দরের মালিক। বড় জোর অন্ডাল থেকে কারা বিমান চালাবে তা নিয়ে তাদের উৎসাহ থাকতে পারে। কিন্তু, কোচবিহার, বাগডোগরায় ছোট বিমান চালানো নিয়ে তাদের কেন উৎসাহ? নিজেদের পকেটের টাকা খরচ করে কেন তারা উড়ান চালাতে চায় রাজ্যে? বিএপিএল-এর ডিরেক্টর পার্থ ঘোষ এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন