Khejuri

খেজুরিতে শিল্প-মানচিত্রের প্রস্তুতি

ক্রমে পটবদল হয়েছে। গত প্রায় এক দশক রাজ্যপাটে তৃণমূল সরকার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

খেজুরি শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০২০ ০০:১৯
Share:

প্রতীকী ছবি।

প্রায় দেড় দশক আগের জমি আন্দোলন বদলে দিয়েছিল রাজ্য রাজনীতি। ২০০৭-’০৮ এর সেই উত্তাল সময়ে নন্দীগ্রামে চাষযোগ্য জমিতে শিল্পস্থাপনে তৎকালীন বাম সরকারের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছিল তৃণমূল। জমি রক্ষা আন্দোলনের ঢেউ নন্দীগ্রাম ছাপিয়ে ছড়িয়েছিল খেজুরিতেও।

Advertisement

ক্রমে পটবদল হয়েছে। গত প্রায় এক দশক রাজ্যপাটে তৃণমূল সরকার। গত কয়েক বছরে হলদি নদীতে বয়ে গিয়েছে বহু জল। তৃণমূলের বিরুদ্ধে রাজ্যে শিল্প আনতে না পারা, কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে না পারার অভিযোগ তুলেছে বিরোধীরা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নন্দীগ্রাম এবং খেজুরিতে শিল্প স্থাপনের দাবি উঠেছে তৃণমূলের অন্দরেও। সম্প্রতি ভাঙাবেড়া সেতুর দু’পারের দুই বসত এলাকা খেজুরি এবং নন্দীগ্রামে শিল্প স্থাপনে আগ্রহ দেখাচ্ছে রাজ্য সরকারও। সেই মতো হলদিয়া শিল্পাঞ্চল এলাকা সম্প্রসারণের জন্য খেজুরি এবং নন্দীগ্রামকে পরিকল্পনা এলাকার অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে।

এই পরিস্থিতিতে খেজুরি-১ এবং ২ ব্লকের ‘ল্যান্ড ইউজ অ্যান্ড ডেভলপম্যান্ট কন্ট্রোল প্ল্যান’ শুরুর জন্য তৎপরতা হচ্ছে। কারা এই সমীক্ষা করবে, তার দায়িত্ব দিতে দরপত্র ডেকেছেন হলদিয়া উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (এইচডিএ)। আগামী দুর্গাপুজোর আগেই দরপত্র খোলা হবে বলে এইচডিএ সুত্রের খবর। হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদের মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক পানিক্কর হরিশঙ্কর বলেন, ‘‘রাজ্য সরকারের টাউন অ্যান্ড কান্ট্রি (প্লানিং অ্যান্ড ডেভলপম্যান্ট অ্যাক্ট) মেনে সমীক্ষা করা হবে। হলদিয়া পরিকল্পনা এলাকার মধ্যে যেসব জায়গা নতুন অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, সেইসব জায়গার বাস্তব অবস্থা জানার জন্য এই সমীক্ষা করা হচ্ছে। টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ হলেই সমীক্ষা শুরু হবে।’’

Advertisement

প্রশাসন সূত্রের খবর, একটি বিশেষ মানচিত্রের মাধ্যমে কোনও এলাকার রাস্তাঘাট, নিকাশি, পানীয় জল সরবরাহের মতো বিভিন্ন উন্নয়নমূলক পরিকল্পনা এবং শিল্প-কৃষি এলাকা আলাদা করে চিহ্নিত করা থাকে ‘ল্যান্ড ইউজ অ্যান্ড ডেভলপম্যান্ট কন্ট্রোল প্ল্যান’-এ। তার ভিত্তিতে শিল্প স্থাপন করা হয় ওই এলাকায়। খেজুরিতে কোন জমি, কী কাজে ব্যবহার হচ্ছে, তা খতিয়ে দেখা হবে ওই প্ল্যানে। তাছাড়া, সবুজ এলাকা কতটা, সেটাও সমীক্ষা করে দেখা হবে। এর ফলে খেজুরি-১ এবং ২ ব্লকে পর্ববর্তী সময়ে উন্নয়ন পরিকল্পনা করতেও সুবিধে হবে বলে দাবি হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদ কর্তৃপক্ষের এক আধিকারিকের।

খেজুরি-১ এবং ২ ব্লকের আর্থ-সামাজিক সমীক্ষার পাশাপাশি জিপিএসে’র মাধ্যমে সমীক্ষা করা হবে। তারপরে মৌজা ভিত্তিক ‘ডিজিট্যাল ল্যান্ড ইউজ মানচিত্র’ তৈরি করা হবে। সেখানে পূর্ত, বন, সেচ, দফতরের অধীনে থাকা সমস্ত জমি ও সম্পত্তির খুঁটিনাটি তথ্য সংগ্রহ করা হবে বলে এইচডিএ সূত্রে খবর।

২০১৯ সালে খেজুরি-১ এবং ২ ব্লক এলাকা হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদের অধীনে এসেছিল। তারপর সেখানে সে রকম উন্নয়ন হয়নি বলে অভিযোগ ছিল স্থানীয় বাসিন্দাদের। এলাকার এক বাসিন্দা সুমন বাখরা বলেন, ‘‘এইচডিএ-র অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পরে অনেক কিছুই আশা করেছিলাম। কিন্তু উন্নয়ন ততটা হয়নি। তবে এ বার রাজ্য সরকার ‘ল্যান্ড ইউজ ম্যাপ’ তৈরি করে উপযুক্ত শিল্প স্থাপনের চেষ্টা যদি সত্যি করে থাকে, তবে পিছিয়ে পড়া এই এলাকা অনেকটা এগিয়ে যাবে।’’

খেজুরি নিয়ে রাজ্য সরকারের এমন সিদ্ধান্তে খুশি এলাকার সাংসদ শিশির অধিকারীও। তিনি বলেন, ‘‘পরিকল্পনা এলাকার অন্তর্ভুক্ত যে কোনও জায়গায় ল্যান্ড ইউজ ম্যাপ তৈরি করা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। এর ফলে উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের হাতে অর্থ এলে সেখানকার যে কোনও রকম উন্নয়ন করার ক্ষেত্রে কোনও অসুবিধা থাকে না। এতে খেজুরির আগামী প্রজন্ম উপকৃত হবে বলেই মনে করি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন