জলপাইগুড়িতে দু’টি সভায় যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র
দু’টো সামিয়ানার মধ্যে হাঁটা পথে দূরত্ব মিনিটখানেকের।পরীক্ষার মরসুমে মাইক ব্যবহারের সময়সীমা ফুরনোর দিনে ওই জোড়া মঞ্চ থেকেই বাংলায় বিজেপির জন্য জমি শক্ত করতে চান নরেন্দ্র মোদী।
‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে’ সিবিআইকে ব্যবহারের অভিযোগ ঘিরে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের সংঘাত তুঙ্গে। মোদীর সরকার সংসদীয় ও যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর পরোয়া করছে না, এই অভিযোগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিদ্রোহের পাশে দাঁড়িয়েছে গোটা দেশের বিরোধী শিবির। সেই টানটান বিতর্কের মাঝেই আজ, শুক্রবার জলপাইগুড়ি জেলার ময়নাগুড়িতে নামবে প্রধানমন্ত্রীর কপ্টার। নেমে মোদী প্রথমে উঠবেন ‘সরকারি’ মঞ্চে এবং সেখান থেকে বোতাম টিপে দু’টি প্রকল্পের শিলান্যাস করে বার্তা দিতে চাইবেন— রাজ্যের সঙ্গে রাজনৈতিক সংঘাত চললেও উন্নয়নের প্রশ্নে কেন্দ্রীয় সরকার কার্পণ্য করছে না। সেই লক্ষ্যেই মোদী জেলায় আসার ৪৮ ঘণ্টা আগে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সিলমোহর পড়েছে কলকাতা হাইকোর্টের বহু প্রতীক্ষিত জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চের দাবিতে।
সার্কিট বেঞ্চের ফলক ছাড়াও ৩১ডি জাতীয় সড়কের ঘোষপুকুর থেকে সলসলাবাড়ি পর্যন্ত অংশের উন্নতীকরণ ও পুনর্বাসন প্রকল্পের শিলান্যাসও করার কথা প্রধানমন্ত্রীর।রাজ্যের পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেবের অবশ্য কটাক্ষ, ‘‘এমন হাস্যাস্পদ প্রধানমন্ত্রী হয়তো দেশ আগে দেখেনি! ওই রাস্তাটি ইস্ট ওয়েস্ট করিডরের অংশ। প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর আমলেই কাজ শুরু হয়। ধূপগুড়ি-সহ যেখানে যেখানে জমির সমস্যা ছিল, আমরা কথা বলে মিটিয়েছি। আর এখন উনি এসে নতুন রাস্তা বলে শিলান্যাস করবেন!’’ ভোটের আগে এই ঘটনাকে মানুষের মন পেতে মোদীর মরিয়া চেষ্টা হিসেবেই দেখছে তৃণমূল।
ওই মঞ্চ থেকেই মোদী আসবেন পুরোদস্তর ‘রাজনৈতিক’ মঞ্চে। রাজ্যের শাসক দলকে নিশানা করার জন্য যে মঞ্চ প্রস্তুত করার তদারকিতে বৃহস্পতিবার দিনভর ব্যস্ত ছিলেন বিজেপি নেতারা। তাঁদের বক্তব্য, পঞ্চায়েত ভোটের পরে এ বার লোকসভা ভোটে উত্তরবঙ্গের ৫টি আসনে বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে। বিজেপির কেন্দ্রীয় সম্পাদক রাহুল সিংহের কথায়, ‘‘আমরা চেয়েছিলাম জলপাইগুড়িতে মোদীজি’কে এনে সভা করাতে। কিন্তু সেখানে জায়গা পাওয়া গেল না বলে ময়নাগুড়িতে সভা সরিয়ে নেওয়া হল।’’
আরও পড়ুন: বহু প্রশ্ন নিয়ে তাকিয়ে পাহাড়
‘প্রোটোকল’ নিয়ে বিতর্কের প্রেক্ষিতে শেষমেশ আজই সার্কিট বেঞ্চের উদ্বোধন হবে কি না, তা ময়নাগুড়ির চূড়াভাণ্ডারে মোদীর সভার উদ্যোক্তা নেতারা অবশ্য এ দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত স্পষ্ট করে জানেন না। তাঁরা রাজনৈতিক সমাবেশের উপরেই বেশি জোর দিচ্ছেন। পরপর কয়েক দিনের মধ্যে বিজেপির কিছু কেন্দ্রীয় নেতা ও মুখ্যমন্ত্রীর সভার অনুমতি বা হেলিকপ্টার নামতে দেওয়ায় কী ভাবে ‘বাধা’ দেওয়া হয়েছে, তার বিশদ বিবরণ পাঠানো হয়েছে মোদীর দফতরে। বাংলায় যে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নেই এবং তাই গোটা দেশ নিয়ে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর কথা বলা মানায় না, এই তিরই মোদী ছুঁড়বেন বলে মকশো চলছে।
এর আগে প্রধানমন্ত্রীর একাধিক সভায় বিশৃঙ্ক্ষলা হয়েছে। এ বার যাতে তেমন কিছু না ঘটে, তার জন্য কর্মীদের সতর্ক করা হচ্ছে। স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়ে মাঠেই বৈঠক করেছেন রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) সুব্রত চট্টোপাধ্যায়।