ধাবার আড়ালে মাদক কারবার ধৃত গণেশের

আফগানিস্তান, পাকিস্তান, বাংলাদেশ ছিল। ছিল দিল্লি ও উত্তরপ্রদেশ। নাম জড়িয়েছে এ রাজ্যের বীরভূম ও মালদহেরও। সিউড়ির মাদক-কাণ্ডের তালিকায় উঠল বর্ধমানের নামও!

Advertisement

নীলোৎপল রায়চৌধুরী ও দয়াল সেনগুপ্ত

পাণ্ডবেশ্বর ও সিউড়ি শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০১৬ ০৪:১২
Share:

পাণ্ডবেশ্বরে গণেশের হোটেল। — নিজস্ব চিত্র

আফগানিস্তান, পাকিস্তান, বাংলাদেশ ছিল। ছিল দিল্লি ও উত্তরপ্রদেশ। নাম জড়িয়েছে এ রাজ্যের বীরভূম ও মালদহেরও। সিউড়ির মাদক-কাণ্ডের তালিকায় উঠল বর্ধমানের নামও!

Advertisement

বীরভূমের সদর শহর সিউড়ির হাটজনবাজারের সমীর মল্লিক ও মানিক বিশ্বাসকে আন্তর্জাতিক মাদক পাচারচক্রে যুক্ত সন্দেহে গ্রেফতার করেছে দিল্লি পুলিশ। গ্রেফতার হয়েছেন সমীরের শ্যালক গণেশ হালদারও। বছর ছাব্বিশের গণেশ বর্ধমানের পাণ্ডবেশ্বরের বাঙালপাড়ার বাসিন্দা। গত সপ্তাহে উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে গোকুলপুরীর উড়ালপুলের নীচে ৪ কিলোগ্রাম হেরোইন হাতবদল করতে গিয়ে পুলিশের জালে ধরা পড়ে গণেশ ও মানিক। উত্তরপ্রদেশের বরেলীর এক মাদক পাচারকারীর হাতে সে হেরোইন তুলে দিতে এসেছিল তারা। পুলিশের মতে, আন্তর্জাতিক বাজারে খুবই ভাল মানের ওই ৪ কেজি হেরোইনের দাম অন্তত ১৬ কোটি টাকা!

বাঙালপাড়ার বেশির ভাগটাই ইসিএলের ধসপ্রবণ এলাকা। কিছু খাস জমিতে সাকুল্যে ১২০টি পরিবারের বাস। ছুতোর, মাছ ধরা, কীর্তন আর দিনমজুরির মতো পেশাতেই অধিকাংশ মানুষ যুক্ত। এই পাড়ায় ঢুকতেই ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে গণেশের হোটেল ‘বাবা কি ঢাবা (ধাবা নয়)’। বৃহস্পতিবার ওই ধাবায় দেখা মিলল গণেশের বাবা সুধীর হালদারের। ছেলের প্রসঙ্গ শুনে বিরক্ত হলেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘গণেশকে বলেছিলাম, ‘এখানে হোটেল খোল। আমি এখন বেকার। আমিও বসব।’ মাস খানেক আগে গণেশ হোটেল চালু করল। সব ঠিকই চলছিল। দিন কয়েক আগে সন্ধেয় একটা গাড়িতে ওকে চাপিয়ে নিয়ে আসে দিল্লি পুলিশ। হোটেল ও সংলগ্ন এলাকা মিনিট কয়েক ঘুরে দেখার পরেই চলে যায়।’’ গণেশ কি সত্যিই মাদক পাচারে জড়িত? সুধীরবাবুর জবাব, “পুলিশ এমনিই ওকে ধরে নিয়ে গিয়েছে, এটা ঠিক মেনে নিতে পারছি না।’’ গণেশের দু’কামরার বাড়ির পাশেই তার ছোটকাকা, পেশায় রাজমিস্ত্রি পরেশ হালদারের বাড়ি। তাঁরই জামাই ধৃত সমীর। পরেশবাবুর অবশ্য দাবি, ‘‘ষড়য়ন্ত্রের শিকার আমার জামাই ও ভাইপো, এটাই আমাদের বিশ্বাস।’’

Advertisement

ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব মানতে নারাজ হাটজনপাড়ার বাসিন্দাদের বড় অংশ। নাম না প্রকাশের শর্তে এ দিন মুখ খুলেছেন তাঁরা। তাঁদের দাবি, সমীর ও মানিক যে মাদক কারবারের জাল বিছিয়েছেন, তা নাকি এলাকার অনেকেই জানতেন। এমনকী, অজানা ছিল না শাসক দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের একাংশেরও। যদিও সিউড়ি ২ ব্লকের তৃণমূলের সভাপতি নুরুল ইসলাম বলেন, ‘‘আমাদের দল কোনও ভাবেই মাদক পাচারের সঙ্গে যুক্ত নয়। তবে এলাকায় মাদক কারবারির ধরা পড়া যথেষ্ট উদ্বেগের। আমরা প্রশাসনকে অনুরোধ করব, বিষয়টি দেখতে। দলগত ভাবেও মাদক-বিরোধী সচেতনতা গড়ে তোলার চেষ্টা করব।’’ সমীর-মানিকদের ধরা পড়া বীরভূমের বেআইনি পোস্ত চাষের ছবিটা ফের স্পষ্ট করল বলেও মনে করা হচ্ছে। দুবরাজপুর ও খয়রাশোলের একটি বড় অংশে বেআইনি পোস্ত চাষ হয়। ২০১০-১৩ এই তিন বছর পোস্ত চাষে লাগাম পড়েছিল। কিন্তু, বছর দুয়েক ধরে তা ফের রমরমিয়ে চলছে। এ বছর নির্বাচনকে ঢাল করে দুবরাজপুর ও খায়রাশোলে সাড়ে পাঁচ হাজার বিঘা জমিতে পোস্ত চাষ হয়েছে—এই তথ্য আবগারি দফতরেরই দেওয়া। নারকোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরোর এক পদস্থ আধিকারিকের কথায়, ‘‘আফিম, ব্রাউন সুগার থেকে হোরোইন— সব ধরনের মাদকের মূল কাঁচামালই হল পোস্তর গুটি চিরে পাওয়া আঠা। সেই আঠা তো এই জেলায় দেদার!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন