ফুটপাথে উঠে মহিলাকে বাঁশপেটা করল পুলিশ!

ঘণ্টা দেড়েক আগে বিক্ষোভ শেষ হয়ে গিয়েছে। তাতে কী! মেয়ো রোডে তখন কয়েক জন প্রবীণ আর মহিলাকে ঘিরে ফেলেছে পুলিশ। অতঃপর শুরু হল বেপরোয়া লাঠির মার আর অশ্রাব্য গালিগালাজ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০১৭ ০৪:০৭
Share:

নৃশংস: রক্তাক্ত দেখেও রেহাই নয়। আহত বাম সমর্থককে ফের মার পুলিশের। সোমবার ধর্মতলায়। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী।

ঘণ্টা দেড়েক আগে বিক্ষোভ শেষ হয়ে গিয়েছে। তাতে কী! মেয়ো রোডে তখন কয়েক জন প্রবীণ আর মহিলাকে ঘিরে ফেলেছে পুলিশ। অতঃপর শুরু হল বেপরোয়া লাঠির মার আর অশ্রাব্য গালিগালাজ। যেন চড়াম চড়াম ঢাক পেটানো হচ্ছে! ঠ্যাঙানি শেষ হতে দেখা গেল— কেউ রক্তাক্ত, কেউ হাত-পা ধরে কাতরাচ্ছেন। কয়েক হাত দূরেই বিমান বসু, সূর্যকান্ত মিশ্ররা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন। পুলিশ তাঁদেরও রেয়াত করেনি। আহতের তালিকায় কংগ্রেস বিধায়ক মনোজ চক্রবর্তীও।

Advertisement

একই ছবি এজেসি বোস রোডে। দৌড়ে ফুটপাথে উঠে গিয়েছিলেন এক মহিলা। সেখানে তাঁকে ধরে বাঁশপেটা করলেন এক পুলিশ। তাড়া খেয়ে এসপ্ল্যানেড মেট্রো স্টেশনে ঢুকে গিয়েছিলেন মিছিলের কয়েক জন। পুলিশ সেখানে ঢুকেও যথেচ্ছ লাঠি চালায়। মেয়ো রোডের মেডিক্যাল ক্যাম্পেও ঢুকে চিকিৎসককে লাঠিপেটা করে পুলিশ। হেস্টিংসে বাসে উঠে লাঠি চালাতে দেখা যায় পুলিশকে।

বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশের লাঠি চার্জ, টিয়ার গ্যাসের সেল ফাটানো, জল কামান ব্যবহার নতুন কিছু নয়। কিন্তু সোমবার লাঠি হাতে পুলিশ যেন যুদ্ধে নেমেছিল। একাধিক প্রাক্তন পুলিশ কর্তার মতে, বয়স্ক ও মহিলাদের যে ভাবে রাস্তায় ফেলে মারা হয়েছে, তাতে মনে হয়েছে কোনও বিশেষ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতেই যেন নেমেছিল বাহিনী। জখমদের নিয়ে যেতে অ্যাম্বুল্যান্স এলেও ঢুকতে দেয়নি পুলিশ। পুলিশের মারে পা ও কোমরে গুরুতর চোট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন প্রাক্তন মন্ত্রী কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়।

Advertisement

আরও পড়ুন:সাংবাদিকদের রাস্তায় ফেলে বেধড়ক মার

কিন্তু কেন ‘বাড়াবাড়ি’ করল পুলিশ? প্রশাসন সূত্রের খবর, রবিবার দুপুরে ‘ওপর মহল’ থেকে নির্দেশ আসে, বামেদের নবান্ন অভিযান ‘কড়া হাতে’ ঠেকাতে হবে। পুলিশের একাংশ বলছেন— এ দিন যে ব্যবস্থা করা হয়েছিল, মিছিল তাতে নবান্নের ধারে কাছে পৌঁছনো সম্ভব ছিল না। নির্দেশ পাওয়ার পরেই পুলিশ অকারণ মারমুখী হয়ে ওঠে এবং পদস্থ কর্তারাই নেতৃত্ব দেন তাতে!

শুধু একা পুলিশ? রাজ্যে যে বামেদের অস্তিত্ব নিয়ে এ দিনও প্রশ্ন তুলেছেন শাসক দলের নেতারা, তাদের কর্মসূচি মোকাবিলায় র‌্যাফ, কমব্যাট ফোর্স, এমনকী কমান্ডো বাহিনীকেও সঙ্গে নিতে হয়েছে পুলিশকে। এ রাজ্যে কলকাতা ও রাজ্য পুলিশের যত ধরনের বাহিনী আছে, সব বাহিনীরই তাণ্ডব দেখা গিয়েছে রাস্তায়।

এত কিছুর পরেও বাড়াবাড়ি দেখতে পাননি অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (৩) সুপ্রতিম সরকার। তাঁর কথায়, ‘‘পুলিশকে ইট, লাঠি, লঙ্কার গুঁড়ো দিয়ে আক্রমণ করা হয়েছে বলেই পুলিশ পাল্টা কাঁদানে গ্যাস ছুড়েছে, লাঠি চার্জ করেছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন