স্কুলে পুলিশ ক্যাম্প, কচিকাঁচারা বারান্দায়

পাঁচটি ক্লাসের জন্য বরাদ্দ পাঁচটি ঘর। গ্রামে টানা অশান্তির বাতাবরণ থাকায় প্রায় বছর সাতেক আগে তার একটি বড় ঘরে রয়েছে পুলিশ ক্যাম্প। ফলে প্রি-নার্সারির কচিকাঁচাদের চট পেতে বসতে হচ্ছে স্কুলের বারান্দায়।

Advertisement

সুজাউদ্দিন

ডোমকল শেষ আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:২৩
Share:

বারান্দায় বসেছে ক্লাস।নিজস্ব চিত্র

পাঁচটি ক্লাসের জন্য বরাদ্দ পাঁচটি ঘর। গ্রামে টানা অশান্তির বাতাবরণ থাকায় প্রায় বছর সাতেক আগে তার একটি বড় ঘরে রয়েছে পুলিশ ক্যাম্প। ফলে প্রি-নার্সারির কচিকাঁচাদের চট পেতে বসতে হচ্ছে স্কুলের বারান্দায়।

Advertisement

এমনই অবস্থা ইসলামপুরের গোপীনাথপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। যদিও তা নিয়ে এলাকার মানুষের তেমন হেলদোল নেই। ছাত্রছাত্রীদের বসার জায়গা দেওয়ার জন্য স্কুল থেকে পুলিশ ক্যাম্প সরানোর প্রতি সমর্থন হয়তো অনেকেরই আছে। কিন্তু ক্যাম্প না থাকলে আবার অস্থিরতা বাড়বে ভেবেই চুপ সবাই।

ইসলামপুর থানা এলাকার শেষ প্রান্তে ভৈরবের পাড়ে গোপীনাথপুর গঞ্জ। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২১৬ জন ছাত্রছাত্রী। এক পার্শ্বশিক্ষক-সহ চার জন শিক্ষক। প্রধান শিক্ষক বিকাশচন্দ্র সরকার জানান, বছর আটেক আগে এলাকায় গণ্ডগোল ছড়ালে স্কুলে পুলিশ ক্যাম্প বসে। সেই সময়ে একটি ঘর ফাঁকা পড়ে ছিল। কিন্তু এখন প্রি-নার্সারি চালু হয়েছে। এখন ঘরটি দরকার। সেটি আটকে থাকায় বারান্দায় ক্লাস করতে হচ্ছে।

Advertisement

দোতলায় পুলিশের ক্যাম্প। নিজস্ব চিত্র

স্কুলে গিয়ে দেখা যায়, নিচু বারান্দায় চট পেতে সার দিয়ে বসে আছে পড়ুয়ারা। নীচে হেঁটে হেঁটে ক্লাস নিচ্ছেন শিক্ষক। সামনে চলছে মিড-ডে মিল রান্না। দোতলার ঘরের বারান্দায় সার দিয়ে ঝুলছে পুলিশের জামা, প্যান্ট, গেঞ্জি। স্কুলের লাগোয়া বাড়ি সেলিনা বিবির। তাঁর কথায়, ‘‘বাচ্চারা বাড়ি থেকে চটের বস্তা নিয়ে স্কুলে আসে। ঝড়বৃষ্টি হলেই চট বগলে নিয়ে ঘরের মধ্যে চলে যায়। বছর তিনেক থেকে এমনই দেখছি।’’

প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘‘পড়ুয়াদের কথা মাথায় রেখে বার আমরা কয়েক শিক্ষা দফতর ও গ্রামের মানুষের কাছে আবেদন করেছি। কিন্তু কোনও পক্ষ থেকেই তেমন সাড়া পাইনি।’’ তবে স্থানীয় লোচনপুর পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান রাফেকা বিবি বলেন, ‘‘স্কুলের বাড়িতে পুলিশ থাকবে আর পড়ুয়ারা বারান্দায় বসবে, এমনটা হতে পারে না। পুলিশ ক্যাম্পেরও আমাদের প্রয়োজন আছে। আমরা অন্য কিছু ব্যবস্থা করব।’’ স্থানীয় বাসিন্দা তথা রানিনগর পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সভাপতি দুলালুদ্দিন মণ্ডল বলেন, ‘‘একটা সময়ে এলাকায় খুবই অস্থিরতা ছিল। স্কুলের ঘরও ফাঁকা ছিল। ফলে সেই সময়ে একটি ঘর ক্যাম্পের জন্য বেছে নেওয়া হয়। নতুন ক্লাস চালু হওয়ায় হয়তো সমস্যা হচ্ছে। আমাদের এখন নতুন করে ভাবতে হবে।’’ রানিনগরের বিডিও গোবিন্দ নন্দী বলেন, ‘‘সকলের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টার সমাধান করতে হবে।’’ অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক অজয়কুমার মণ্ডল বলেন, ‘‘আমরাও এ নিয়ে প্রশাসনিক স্তরে আলোচনা শুরু করেছি।’’ এসডিপিও (ডোমকল) বলেন, ‘‘এলাকাটি ইসলামপুর থানার অধীনে। ওদের সঙ্গে কথা বলব। ছাত্রদের অসুবিধে হলে স্কুলে ক্যাম্প থাকবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন