পরের পর নেতানেত্রীরা ধরা পড়ছেন ঠিকই। তবে ভাঙ়ড়ে আন্দোলনে সামনের সারিতে থাকা নকশালপন্থীদের এক নম্বর নেতা অলীক চক্রবর্তীকে ধরা পুলিশের কাছে এখনও অলীক কল্পনাই!
ভাঙড়-পরিস্থিতি নিয়ে সম্প্রতি নবান্নকে আলোচনায় বসার প্রস্তাব দিয়েছিলেন কিছু মানবাধিকারকর্মী ও বিদ্বজ্জন। রাজ্য সরকারের শীর্ষ স্তর থেকে জানানো হয়, আলোচনায় বসতে কোনও অসুবিধে নেই। তবে শর্ত একটাই: অলীক চক্রবর্তী সেখানে থাকবেন না। কারণ হিসেবে প্রশাসন জানিয়ে দেয়, অলীকের সঙ্গে আর কোনও আলোচনার সুযোগ নেই। তাঁর বিরুদ্ধে এ বার আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথাই ভাবছে প্রশাসন।
সিপিআই এমএল রেড স্টার দলের নেতা অলীকই ভাঙড়ে পাওয়ার গ্রিড-বিরোধী আন্দোলনে গ্রামবাসীদের সংগঠিত করতে মুখ্য ভূমিকা নিয়েছেন। অথচ তিন মাস পেরিয়ে যাওয়ার পরেও অলীককে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। ১৪ মার্চ পুলিশ গ্রেফতার করে ভাঙড়ের ওই আন্দোলনের দুই নকশালপন্থী নেতা কুশল দেবনাথ ও শঙ্কর দাসকে। এক গোয়েন্দা অফিসারের কথায়, ‘‘ভাঙড়ে যাঁদের নেতৃত্বে গোলমেলে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, তাঁদের প্রথম একাদশের তালিকায় আছেন কুশল ও শঙ্কর।’’ কিন্তু গোয়েন্দাদের ধারণা অনুযায়ী যিনি ওই দলের অধিনায়ক, সেই অলীক এখনও অধরাই। কেন?
গোয়েন্দাদের বক্তব্য, ভাঙড়ের মাছিভাঙা, খামারআইট, নতুনহাটের মতো গ্রামে ঘাঁটি গেড়ে আছেন অলীক। তাঁকে প্রায় সর্বক্ষণ ঘিরে আছে একটি বাহিনী, যা বাছাই করা গ্রামবাসীদের নিয়ে গড়া। তাঁদের কাছে অস্ত্র বলতে আছে মূলত প্রচুর পেটো বা দেশি বোমা। কয়েকটি ওয়ান শটার বন্দুক, পাইপগানও আছে, তবে সংখ্যায় নগণ্য। তা ছাড়া ইটপাথর, লাঠিও ওই বাহিনীর অস্ত্র।
রাজ্য পুলিশের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘অলীককে ধরতে ওই তল্লাটে গেলে প্রবল আক্রমণের মুখে পড়তে হবে পুলিশকে। আমাদেরও পাল্টা জবাব দিতে হবে। সে-ক্ষেত্রে নতুন করে হিংসা, রক্তপাত ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা আছে। সেই ঝুঁকি সরকার নিতে পারে না।’’
গোয়েন্দা সূত্রের খবর, অলীকের কাছাকাছি গেলেই তাঁর সুরক্ষা-বলয়ের প্রথম স্তর পরবর্তী স্তরকে সতর্ক করে দিচ্ছে, ‘অলীকদাকে এখন বেরোতে বারণ কর। চোখে চোখে রাখ।’ এক গোয়েন্দা অফিসার বলেন, ‘‘অলীকের দুর্গে আমরা ঢুকছি না। তবে তাঁর যাতায়াতের পথে নজর রাখা হয়েছে। বেরোলেই গ্রেফতার করা হবে।’’ পুলিশের আশা, টিটাগড়ের বাসিন্দা অলীকের পক্ষে অনন্তকাল ভাঙড়ের ওই জায়গায় থাকা সম্ভব নয়। বেরোতে হবেই। তত দিন তাঁদের ধৈর্যের পরীক্ষা দিতে হবে, এমনটাই বলছে পুলিশ।