অভিযোগ কোচবিহারে

রাতে মাইক থামাতে পুলিশের গুলি

তৃণমূল জমানায় পুলিশকে শাসক দলের তাণ্ডব থেকে বাঁচতে টেবিলের তলায় লুকোতে দেখা গিয়েছে এর আগে। বীরবিক্রমে গুলি ছোড়ার অভিযোগ প্রায় নেই বললেই চলে। শনিবার রাতে তেমন ছবিই দেখল তুফানগঞ্জ থানার দেওচড়াই গ্রাম পঞ্চায়েতের সন্তোষপুর এলাকা। সেখানে রাতভর এক অনুষ্ঠানে মাইক বাজানো থামাতে গিয়ে গুলি চালানোর অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে।

Advertisement

অরিন্দম সাহা

তুফানগঞ্জ শেষ আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০১৬ ০৪:০৪
Share:

আহত গ্রামবাসীকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে হাসপাতালে। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব।

তৃণমূল জমানায় পুলিশকে শাসক দলের তাণ্ডব থেকে বাঁচতে টেবিলের তলায় লুকোতে দেখা গিয়েছে এর আগে। বীরবিক্রমে গুলি ছোড়ার অভিযোগ প্রায় নেই বললেই চলে। শনিবার রাতে তেমন ছবিই দেখল তুফানগঞ্জ থানার দেওচড়াই গ্রাম পঞ্চায়েতের সন্তোষপুর এলাকা। সেখানে রাতভর এক অনুষ্ঠানে মাইক বাজানো থামাতে গিয়ে গুলি চালানোর অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় পাঁচ জনের গুলি লেগেছে। তিন জনকে স্থানীয় হাসপাতালে ও দু’জনকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে পাঠানো হয়েছে। এক জনের অবস্থা গুরুতর। ঘটনার জেরে রবিবারই স্থানীয় থানার ওসি মহিম অধিকারীকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ‘ক্লোজ’ও করা হয়েছে।

Advertisement

বস্তুত, তুফানগঞ্জের এই ঘটনায় অস্বস্তিতে নবান্নও। রাজ্য প্রশাসনের প্রধান কার্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গুলি চালানোর খবর পেয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কোন পরিস্থিতিতে গুলি চালানো হয়েছে, সেই কারণ খুঁজতে বিভাগীয় তদন্তও শুরু হয়েছে। এ কথা জানিয়েছেন কোচবিহারের পুলিশ সুপার সুনীল যাদব। জেলার জেলাশাসক পি উল্গানাথন জানান, “তুফানগঞ্জের মহকুমা শাসকের কাছ থেকে রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। নিয়মমাফিক ভাবে পুলিশ সুপারের রিপোর্টও পাব। সে সব দেখে পদক্ষেপ করা হবে।’’

পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার পরে পুলিশের উপরে হামলার অভিযোগে পাঁচ জনকে গ্রেফতার করা হয়। তবে আদালতে হাজির করানো হলে সকলেই জামিনে মুক্তি পেয়ে যান।

Advertisement

কী ঘটেছিল শনিবার রাতে? যে অনুষ্ঠানে মাইক বাজানোর অভিযোগ ঘিরে এই ঘটনা, তার উদ্যোক্তাদের দাবি, গত প্রায় তিন দশক ধরে এই অনুষ্ঠান হচ্ছে। কখনওই এমন ঘটনা ঘটেনি। উদ্যোক্তাদের বক্তব্য, ‘‘পুলিশের তরফে আপত্তি আসায় আমরা বাইরের মাইক বন্ধ করে দিয়েছিলাম। তার কিছুক্ষণ বাদে আচমকা পুলিশ বিশাল বাহিনী নিয়ে এসে লাঠিচার্জ শুরু করে। মহিলারাও রেহাই পাননি। দৌড়িদৌড়ি শুরু হয়। অনেকে পড়ে গিয়ে জখম হন। তার মধ্যে মাটি লক্ষ্য করে এলোপাথাড়ি গুলি চালায় পুলিশ।”

উল্টো দিকে পুলিশের দাবি, রাত ১২টার পরেও দেওচড়াইয়ের ওই অনুষ্ঠানে জোরে মাইক বাজান হচ্ছে বলে মোবাইল টহলের দায়িত্বে থাকা এক সাব ইন্সপেক্টরের কাছে অভিযোগ আসে। তিনি এলাকায় গিয়ে মাইক থামাতে বলেন। সঙ্গে ছিলেন দু’জন কনস্টেবল। সে কথায় কাজ হয়নি বলেই পুলিশের দাবি। তাদের পাল্টা অভিযোগ, প্রথমে বাসিন্দাদের কয়েক জনের সঙ্গে বচসা হয়, তার পরে কার্যত ধাক্কা দিয়ে তাঁদের মঞ্চের লাগোয়া চত্বর থেকে বের করে দেওয়া হয়। তাঁদের গাড়িটিও ভাঙচুর করা হয়। তুফানগঞ্জ থানায় খবর গেলে ওসি মহিম অধিকারী বিরাট কমব্যাট বাহিনী নিয়ে সেখানে যান। তাঁদের দিকেও জনতা ইট ছুড়তে থাকে বলে অভিযোগ। এক কমব্যাট জওয়ানকে মারধরও করা হয়। তখন আত্মরক্ষায় তিনি গুলি চালাতে বাধ্য হন।

কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, শূন্যে গুলি না চালিয়ে কেন ২০০০ লোকের ভিড়ের মধ্যে গুলি চালানো হল? পুলিশের অবশ্য দাবি, “প্রথমে শূন্যে চার রাউন্ড গুলি চালানও হয়েছিল।”

মহিম অধিকারী প্রকাশ্যে এই নিয়ে কিছু বলতে চাননি। তাঁর বক্তব্য, ‘‘যা বলার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বলব।’’ তবে ঘনিষ্ঠমহলে তিনি জানিয়েছেন, এর আগে কালীপুজোর সময় জুয়ার আসর হানা দিয়ে পাল্টা মারে মৃত্যু হয়েছিল রঞ্জিত পাল নামে এক কনস্টেবলের। সেই আতঙ্ক মাথায় ছিল বলেই হয়তো এখানে পুলিশ গুলি চালিয়ে থাকবে।

খবর পেয়েই এলাকায় যান কোচবিচার জেলা সভাপতি তথা স্থানীয় বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। তিনি সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ঘাঁটি গেড়ে বসেছিলেন। তাঁরা প্রশ্ন তুলেছেন সিপিএমের স্থানীয় নেতাদের একাংশের ভূমিকা নিয়েও। সিপিএমের কোচবিহার জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তমসের আলির বাড়ি এই এলাকাতেই। রবিবাবুর অভিযোগ তমসেরের দিকেই। তাঁর সঙ্গে কথা বলেই পুলিশ অতি-সক্রিয় হয়ে ওঠে বলে অভিযোগ। সিপিএমের প্রাক্তন বিধায়ক অবশ্য বলেছেন, “এ সব ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন