ছেলেকে খুন, ১৮ বছর বেপাত্তা রহস্যময় ‘বাবা’

তোলপাড় ফেলে দেওয়া হত্যাকাণ্ড। তবে অভিযুক্ত ধরা পড়েনি এখনও। পুরনো মামলাকে নতুন করে দেখা।জোড়াসাঁকোর হোটেলের ঘরে গলায় রুমালের ফাঁস বাঁধা নিহত বছর বারোর বালক এবং তার রহস্যময় ‘বাবা’টি কে? মাথায় ঢুকছে না কারও। হঠাৎ সুড়ঙ্গে আলোর রেখা মিলল।

Advertisement

ঋজু বসু

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ জুন ২০১৮ ০৪:০৯
Share:

প্রতীকী ছবি।

আততায়ীর খোঁজে তখনও অন্ধকারে লালবাজার।

Advertisement

জোড়াসাঁকোর হোটেলের ঘরে গলায় রুমালের ফাঁস বাঁধা নিহত বছর বারোর বালক এবং তার রহস্যময় ‘বাবা’টি কে? মাথায় ঢুকছে না কারও। হঠাৎ সুড়ঙ্গে আলোর রেখা মিলল।

২০০০ সালের ১০ জুলাই ‘বাবা’র হাতে ছেলে খুনের সেই ‘কেস’-এর বেশ ক’মাস পেরিয়ে গিয়েছে তত দিনে। গোয়েন্দা বিভাগের বাড়িটায় খুনের অকুস্থল থেকে উদ্ধার হওয়া বাচ্চাটার স্কুলব্যাগ ঘাঁটাঘাঁটি করছিলেন হোমিসাইড বিভাগের অফিসাররা। পড়ার বইগুলোর লেবেল ছেঁড়া কেন? খটকা লাগছিল পুলিশের।

Advertisement

বাচ্চাটার জ্যামিতি বাক্স নাড়াচাড়া করতে করতে এক টুকরো কার্বনপেপার আলোয় মেলে ধরলেন এক জন। তখনই চোখে পড়ল লেখা, কৃষ্ণনগর! আর স্কুলবইয়ের ছেঁড়া লেবেলের অংশে লেখা ‘সি’। এত দিন হোটেলের খাতা থেকে এই ‘বাপ-ছেলে’র নাম চিত্ত সাহা ও বাপি সাহা বলে জানত পুলিশ। ঠিকানা মালদহের সুভাষপল্লি। অথচ সেখান থেকে খালি হাতে ফিরতে হয়েছে পুলিশকে।

কার্বনপেপার পেয়ে ভাবনার গিঁট খুলল। সি আদ্যক্ষরে কৃষ্ণনগরের চার্চ মিশনারি সোসাইটি সেন্ট জনস হাই স্কুল। স্কুলের ফাদার ছবি দেখে চিনলেন। ছাত্রটির নাম গোপী সিংহ। গত ৯ জুলাই তাকে ভাল স্কুলে ভর্তি করা হবে বলে নিয়ে গিয়েছে ‘কাকু’। স্কুলের এক ছাত্র মারফত সেই রাতেই ‘কাকুটি’র রানাঘাটের ঠিকানায় হাজির হল পুলিশ।

তদন্তকারী অফিসাররা এখনও হাত কামড়ান, হয়তো আর একটু আটঘাট বাঁধলে পাখি ফাঁদে পা দিত। তবে এটা জানা গেল, অভিযুক্তের আসল নাম অলোক দেবদাস। সে-রাতে বাড়িতে তার স্ত্রী এবং মা-ই শুধু ছিলেন। ১৮ বছর বাদে অলোকের স্ত্রী বলেন, ‘‘বিশ্বাস করুন, ওর সঙ্গে আমার এর পরে এক বারও কথা হয়নি। বাড়িতে পুলিশ আসার খবর সে কোত্থেকে পেল, কে জানে!’’ জলজ্যান্ত লোকটা কর্পূরের মতো উবে গিয়েছে।

পুলিশ জানতে পারে, গোপীর মা আড়ংঘাটার বাসিন্দা নমিতা সিংহের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল অলোকের। স্বামীবিচ্ছিন্না নমিতার দুই ছেলেমেয়ে। গোপী থাকত কৃষ্ণনগরে হস্টেলে। শিলিগুড়ির হংকং মার্কেটের ‘মাল’ নিয়ে এসে কলকাতায় বিক্রি করতেন নমিতা। তখনই অলোকের সঙ্গে আলাপ। তদন্তে উঠে আসে, ২০০০-এর ৮ জুলাই অলোকের সঙ্গে বাড়ি থেকে বেরোন নমিতা ও তাঁর মেয়ে। পরের দিন অলোক এসে ম্যাটাডরে কিছু জিনিস নিয়ে যান। আর গোপীকে সঙ্গে নিয়ে বাবা-ছেলে পরিচয়ে নাম ভাঁড়িয়ে ওঠেন জাকারিয়া স্ট্রিটের হোটেলে। হোটেলের ঘরের তালাবন্ধ দরজার ফাঁকে প্রথম চোখে পড়ে বালকের দেহ। কিন্তু কেন এই খুন, তার জবাব মেলেনি। যেমন, জবাব মেলেনি কোথায় উবে গেলেন নমিতা ও তাঁর মেয়ে?

পুলিশের দাবি, অলোকের নামে রানাঘাটে রেখা সরকার বলে এক মহিলাকে খুনের মামলাও আছে। ক’মাস জেল খেটে সে জামিন পেয়েছিল। এর এক বছরের মধ্যেই গোপী-খুনের কাণ্ড! বিয়ে-বহির্ভূত সম্পর্কের সব চিহ্ন মুছতেই কি এই অপরাধ, সন্দেহ পুলিশের। সম্প্রতি লালবাজারের ক্রাইম কনফারেন্সে পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার বলেছেন, এই অসম্পূর্ণ তদন্তের কিনারা চাই। গোপী খুনের কিনারা ছাড়াও জানা চাই, নমিতা ও তাঁর মেয়ের কী হল?

ধুরন্ধর অপরাধীকে কব্জা করতে নতুন করে তাই ফাঁদ পাতা হয়েছে। এখন অপেক্ষা।

(চলবে)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন