ভাগাড়-কাণ্ডে চার্জশিট হল না ৯০ দিনেও

ভারতী ঘোষের মামলাতেও ৯০ দিনের মধ্যে চার্জশিট দিতে পারেনি সিআইডি।

Advertisement

শুভাশিস ঘটক

শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০১৮ ০২:০৮
Share:

—ফাইল চিত্র।

আদালতে সময় মতো অর্থাৎ ৯০ দিনের মধ্যে চার্জশিট দাখিল না করায় ভাগাড়-কাণ্ডে অভিযুক্তেরা জামিন পেয়ে যেতে পারেন বলে আশঙ্কায় আইনজীবী মহল।

Advertisement

প্রাক্তন আইপিএস ভারতী ঘোষের বিরুদ্ধে সোনা লুঠ ও প্রতারণার যে মামলা করেছে সিআইডি, ভাগাড়-কাণ্ডেও তার ছায়া দেখছেন ওই আইনজীবীরা। ভারতী ঘোষের মামলাতেও ৯০ দিনের মধ্যে চার্জশিট দিতে পারেনি সিআইডি।

ভাগাড়-কাণ্ডে গত এপ্রিল মাসের শেষ দিকে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে তল্লাশি চালিয়ে ১২ জন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছিল ডায়মন্ড হারবার জেলা পুলিশ। পরে ওই মামলার দায়িত্বভার নেয় সিআইডি। কিন্তু মামলার প্রায় ৯১ দিন পেরিয়ে যাওয়ার পরেও আদালতে চার্জশিট পেশ করতে পারেনি সিআইডি। ভারতীয় কার্যদণ্ডবিধির ১৭৩ ধারায় ৯০ দিনের মধ্যে চার্জশিট পেশ না করলে অভিযুক্তেরা জামিন পাওয়ার আইনি সুবিধা পেতে পারেন। ইতিমধ্যেই ভাগাড়-কাণ্ডে চার জন অভিযুক্তের জামিন মঞ্জুর হয়েছে।

Advertisement

নির্দিষ্ট সময়ে চার্জশিট না দিতে পারায় এ বার বাকি অভিযুক্তেরাও জামিন পেয়ে যাবেন বলেই আশঙ্কা আলিপুর আদালতের আইনজীবীদের একাংশের।

গত ফেব্রয়ারিতে পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুর থানায় প্রাক্তন আইপিএস অফিসার ভারতী ঘোষ ও তাঁর ঘনিষ্ঠ ছয় পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে সোনা লুঠ ও প্রতারণার মামলার তদন্ত শুরু করে সিআইডি। ওই মামলায় ভারতী ফেরার কিন্তু তাঁর ঘনিষ্ঠ ছয় পুলিশ অফিসারকে গ্রেফতার করে সিআইডি। কয়েক কোটি নগদ টাকা ও গয়না বাজেয়াপ্ত হয়। কিন্তু সময় অনুযায়ী চার্জশিট দাখিল না করায় ভারতী ঘনিষ্ঠ পুলিশ অফিসাররা জামিন পেয়ে গিয়েছেন।

আলিপুর আদালতের এক আইনজীবী বলেন, ‘‘ভারতী ঘোষের মামলার মতো ভাগাড়-তদন্তেও সিআইডি ব্যর্থ।’’ ভাগাড়-মামলার বিশেষ সরকারি আইনজীবী নবকুমার ঘোষ বলেন, ‘‘আইন অনুযায়ী সময়সীমার মধ্যে চার্জশিট দাখিল না হলে অভিযুক্তদের জামিন পাওয়া খুবই সহজ হয়ে যায়।’’

আদালত সূত্রের খবর, গত ১৯ এপ্রিল ডায়মন্ড হারবার জেলা পুলিশ বজবজ থানা এলাকা থেকে ভাগাড়-কাণ্ডে তিন জনকে গ্রেফতার করে। ধৃতদের জেরা করে উত্তর ২৪ পরগনা ও কলকাতার নারকেলডাঙা থানা এলাকা থেকে ওই তিন জন-সহ ১২ জনকে গ্রেফতার করা হয়। ঘটনার কয়েক দিন পরেই পাচার চক্রের সঙ্গে সরাসরি যোগ না থাকায় বজবজ থেকে ধৃত দু’জনের জামিন মঞ্জুর হয়। কয়েক দফা পুলিশি হেফাজতের পরে বাকি ১০ জনের জেল হেফাজত হয়। সম্প্রতি চার জনের জেল হেফাজত থেকে জামিন মঞ্জুর হয়েছে। এখন জেল হেফাজতে রয়েছে ভাগাড়-কাণ্ডের মূল অভিযুক্ত বিশ্বনাথ ঘড়ুই-সহ আরও ছ’জন। আইনজীবীদের একাংশের কথায়, ভাগাড় থেকে পচাগলা মাংস পাচার চক্র খুবই প্রভাবশালী। ওই চক্রে আরও পাণ্ডা রয়েছে। ঘটনার পর ওই পাণ্ডারা গা-ঢাকা দিয়েছিল। বাকি মাথারা জামিন পেলে ফের ওই কারবার চালু হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

কেন ৯০ দিনে চার্জশিট পেশ করতে পারল না সিআইডি?

সিআইডি দায় চাপাচ্ছে ফরেন্সিক ল্যাবরেটরির উপরে। সিআইডি-র এক কর্তা বলেন, বেলগাছিয়া ফরেন্সিক ল্যাবরেটরি ভাগাড়ের মাংসের রিপোর্ট পেশ করতে পারেনি। ওই ল্যাবরেটরির এক কর্তার কথায়, ‘‘ওই মাংসের নমুনা একাধিক ল্যাবরেটরিতে পৌঁছেছে। সবগুলো থেকে রিপোর্ট এলে আমাদের তরফে একত্রিত করে সিআইডি-কে দেওয়া হবে।’’

তা ছাড়া এখন পর্যন্ত ধৃতদের কাছ থেকে ভাগাড়ের পচা মাংস কিনেছেন এমন কোনও ব্যক্তির সন্ধান মেলেনি। সিআইডি-র তদন্তকারীদের দাবি, পচা মাংস যাঁরা কিনেছেন তাঁরাও অভিযুক্তের তালিকাভুক্ত হবেন। তাই কোনও ব্যক্তিই তা স্বীকার করেনি।

সিআইডির এক শীর্ষ কর্তার আশ্বাস, ‘‘অভিযুক্তেরা জামিনে মুক্তি পেয়ে গেলেও ওই অভিযুক্তদের উপর কড়া নজরদারি থাকবে। ফের পাচার চক্র শুরু হলেই গ্রেফতার করা হবে ওই অভিযুক্তদের।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন