—প্রতীকী চিত্র।
নেপালের প্রাক্তন মাওবাদীদের ২৫ জনের একটি দল সীমান্ত পার হয়ে দার্জিলিঙে পাহাড়ে পৌঁছাতে সক্রিয় হয়ে উঠেছে বলে পুলিশ-প্রশাসনের কাছে খবর এসেছে। পুলিশ সূত্রের খবর, নেপালের ইলাম ও ঝাপা জেলার ওই বাসিন্দারা পাহাড়ের কোনও গোপন ঘাঁটিতে পৌঁছতে চেষ্টা করছেন।
পাহাড়ে বন্ধ, অস্থিরতা তৈরির মাসখানেকের মধ্যে নেপালের প্রাক্তন মাওবাদীদের অন্তত ৫০ জনের একটি পাহাড়ে ঢুকেছিল বলে পুলিশ খবর পেয়েছিল। দলটির খোঁজে তল্লাশি শুরুও হয়। এর মধ্যেই আলাদা রাজ্যের দাবিদার জিএনএলএফ প্রকাশ্যে ঘোষণা করেন, দার্জিলিং সদর লাগোয়া কয়েকটি চা বাগান এলাকায় চটি পরা বাইরের লোকজনের দেখা যাচ্ছে। বিভিন্ন আইইডি বিস্ফোরণ, গ্রেনেড হামলার প্রশিক্ষণ এবং রসদ সরবরাহের কাজে দলটিকে ব্যবহার করা হচ্ছিল বলে অভিযোগ।
দার্জিলিং পুলিশের এক কর্তা জানান, একের পর এক বিস্ফোরণের পর তল্লাশি বাড়তেই রাতারাতি দলটি হাওয়া হয়ে যায়। কিছু স্থানীয় কজন আত্মীয়দের বাড়িতে গা ঢাকা দিয়েছে বলে খবর আসে। আবার একদল পশুপতি সীমান্ত দিয়ে ফেরত চলে যায় বলেও খবর মেলে। কিন্তু গত তিনদিন ধরে ফের জানা যাচ্ছে, ২৫ জনের একটি প্রশিক্ষিত দলকে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। বিভিন্ন সূত্র, মোবাইলের কথপোকথন থেকে তা কিছুটা বোঝা যাচ্ছে। পাহাড়ের একদল যুব নেতা ওই যোগাযোগ শুরু করেছেন বলে অভিযোগ। দল বেঁধে না এসে ১/২ জন করে আসার কথাও বলা হয়েছে। আপাতত কোনও নাশকতা নয়, কোনও এক পাহাড়ের নেতার সুরক্ষা বলয়ে ওই প্রাক্তন মাওবাদীদের সামিল করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে খবর মিলছে।
ইতিমধ্যে সীমান্তে মোতায়েন সশস্ত্র সীমা বলের (এসএসবি) অফিসারদের বিষয়টি জানিয়ে সতর্ক করা হয়েছে। এসএসবি’র উত্তরবঙ্গের এক কর্তা জানান, দুটি সীমান্তের বিভিন্ন গ্রামে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। সাধারণ মজদুর বা কাজের কথা বলে এ পারে এসে লোকজন যাতে অন্যত্র না চলে যায়, তা দেখার চেষ্টা করা হচ্ছে। গত শুক্রবার রাতেই বাগডোগরা থানায় সিকিমের একটি গাড়ির দুই আরোহীকে আগ্নেয়াস্ত্র, রাজ্য বিরোধী পোস্টার সহ গ্রেফতার করা হয়। এরাই মিরিক লাগোয়া পানিঘাটা, দুধিয়ার দিকে যাচ্ছিলেন। এলাকাগুলি থেকে ঘণ্টা দু’য়েকের মধ্যে সীমান্তে পৌঁছানো যায়।
পুলিশের সন্দেহ, কোনও ঘাঁটি বা কারও হাতে ওই পোস্টার এবং আগ্নেয়াস্ত্র তুলে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছিল। ধৃতদের জেরা করে জানা গিয়েছে, তরাই ছাড়াও ধৃতদের নেপালে পরিচিত কয়েকজন আছে। এর আগেও তারা সিকিম থেকে সীমান্ত এলাকায় গিয়েছেন। পাহাড়ের নিচে সমতলে কোনও নতুন করে ঘাঁটি তৈরি হয়েছে কি তা দেখছে পুলিশকে। বিশেষ করে, পাহাড় লাগোয়া তরাইয়ের চা বাগান এলাকাগুলিতে খোঁজখবর শুরু হয়েছে।
শিলিগুড়ি পুলিশের এক কর্তা জানান, পাহাড়ে ধরপাকড়, তল্লাশি বাড়তেই নিচে সীমান্ত এলাকায় নতুন ঘাঁটি তৈরির সম্ভাবনা রয়েছে। সেখানে নেপালের লোকজন এসে জড়ো হতে পারে। তেমনই, প্রয়োজনে উপর থেকে তাড়া খেলে এসে ঠাঁই মেলার ব্যবস্থা থাকতে পারে। সেই সঙ্গে সুযোগ বুঝে সেখান থেকে নেপাল বা পাহাড়ে উঠে পড়া সম্ভব। নেপালের প্রাক্তন মাওবাদীদের দলটিকে সেখানেই প্রথমে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে কি না তা এখন পুলিশ অফিসারেরা খুঁজে বার করার চেষ্টা করছেন।