চাপে পড়েই ব্যবস্থা নিল পুলিশ, দাবি বাসিন্দাদের

ধূপগুড়ির স্কুল ছাত্রীকে ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগে অন্যতম অভিযুক্ত তৃণমূল কাউন্সিলরের স্বামী সহ আরও ৪ জনকে গ্রেফতার করল রেল পুলিশ। শনিবার রাতে গোপন সূত্রে খবর পেয়ে ধূপগুড়ি থেকে অভিযুক্তদের ধরা হয় বলে রেল পুলিশের দাবি। পুলিশ জানায়, ধূপগুড়ির একটি ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলরের স্বামী চন্দ্রকান্ত রায় সহ গোবিন্দ ভৌমিক, সহিদুল ইসলাম এবং বিনোদ মণ্ডলকে গ্রেফতার করে রবিবার জলপাইগুড়ি জেলা আদালতে তোলা হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০১৪ ০২:৪৮
Share:

জলপাইগুড়ি আদালত চত্বরে বিক্ষোভ। রবিবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

ধূপগুড়ির স্কুল ছাত্রীকে ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগে অন্যতম অভিযুক্ত তৃণমূল কাউন্সিলরের স্বামী সহ আরও ৪ জনকে গ্রেফতার করল রেল পুলিশ। শনিবার রাতে গোপন সূত্রে খবর পেয়ে ধূপগুড়ি থেকে অভিযুক্তদের ধরা হয় বলে রেল পুলিশের দাবি। পুলিশ জানায়, ধূপগুড়ির একটি ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলরের স্বামী চন্দ্রকান্ত রায় সহ গোবিন্দ ভৌমিক, সহিদুল ইসলাম এবং বিনোদ মণ্ডলকে গ্রেফতার করে রবিবার জলপাইগুড়ি জেলা আদালতে তোলা হয়। গোবিন্দবাবু তৃণমূলের সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি। ধৃতদের জেরা করার হেফাজতে চাইলে আদালত সকলকে ৫ দিনের পুলিশি হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। এ দিন ধৃতদের আদালত চত্বরে আনা হলে, এসএফআই এবং ডিওয়াইএফের সমর্থকেরা শাস্তি চেয়ে বিক্ষোভ দেখান।

Advertisement

গত ১ সেপ্টেম্বর স্থানীয় তৃণমূলের কাউন্সিলর নমিতা রায়ের স্বামী তথা স্থানীয় তৃণমূল নেতা চন্দ্রকান্ত রায়ের ডাকা সালিশি সভায় বাবাকে মারধরের প্রতিবাদ করার পর থেকেই ওই দশম শ্রেণির ছাত্রী নিখোঁজ হয়ে যায় বলে অভিযোগ। পরদিন সকালে সালিশি সভার স্থান থেকে কিছুটা দূরে রেল লাইনের পাশ থেকে ছাত্রীর বিবস্ত্র দেহ উদ্ধার হয়। ট্রাক্টর ভাড়ার পাওনাগণ্ডা নিয়ে নিহত ছাত্রীর বাবার সঙ্গে পড়শির বিবাদের জেরেই ১ সেপ্টেম্বর এলাকায় ওই সালিশি সভা ডাকা হয় বলে দাবি। সেই সভাতে বাবাকে মারধর শুরু হলে ওই ছাত্রী তার প্রতিবাদ করেন বলে এলাকাবাসীদের অনেকের দাবি। সে সময় সালিশি সভা থেকেই ওই ছাত্রীকে ‘দেখে নেওয়া’ হবে বলে শাসানো হয়। তৃণমূল নেতা চন্দ্রকান্তের নির্দেশেই ওই ছাত্রীকে ‘থুতু চাটানো’র হুমকিও দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। এরপরেই সালিশি সভা থেকে ছাত্রীটি দৌড়ে পালিয়ে যায় বলে পরিবারের তরফে দাবি করা হয়েছে। গভীর রাতে ওই ঘটনার পরে, ছাত্রীকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। পরদিন রেল লাইন থেকে দেহ উদ্ধার হয়। এই ঘটনায় তৃণমূল কাউন্সিলরের স্বামী সহ ১৩ জনের নামে ধূপগুড়ি থানায় অভিযোগ দায়ের হয়। তারপর থেকেই অভিযুক্তরা এলাকায় ছিল না বলে রেল পুলিশের তরফে দাবি করা হয়।

নানা চাপে পড়েই দেরিতে হলেও পুলিশ পদক্ষেপ করতে বাধ্য হয়েছে বলে বাসিন্দাদের একাংশ এ দিন দাবি করছেন। তবে পুলিশি তদন্তের উপরেই ‘ভরসা’ রাখছেন তৃণমূল নেতা চন্দ্রকান্তের স্ত্রী তথা কাউন্সিলর নমিতা দেবী। তিনি বলেন, “পুলিশের তদন্তের উপর ভরসা রয়েছে। এই তদন্তেই প্রমাণ হবে যে, আমার স্বামী সহ অন্যরা সম্পূর্ণ নির্দোষ।” বিরোধীদের একাংশ অবশ্য তৃণমূল কাউন্সিলরের এই বিবৃতিকেও পুলিশের উপর চাপ তৈরির চেষ্টা বলে মনে করেছিলেন। যদিও দলের জেলা সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তী দাবি করেন, “কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নন। নিরপেক্ষ তদন্তে অপরাধ প্রমাণিত হলে, যে-ই দোষী হোক, তার যেন শাস্তি হয় সেটাই চাইব।”

Advertisement

আদালতের হাজতে আনার সময় ধৃতদের কেউ এ দিন কোনও মন্তব্য করতে চাননি। শিলিগুড়ির রেল পুলিশ সুপার দেবাশিস সরকার বলেন, “দীর্ঘ দিন ধরেই অভিযুক্তদের খোঁজা হচ্ছিল। শনিবার গোপন সূত্রে খবর পেয়ে অভিযুক্তদের ধরা হয়। অভিযোগে নাম থাকা ১৩ জনকেই গ্রেফতার করা হল। আইন অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ হবে।”

ওই সালিশি সভা ডাকা এবং তারপরে ছাত্রীকে ধর্ষণ এবং খুনের অভিযোগে দলের নেতাদের নাম জড়িয়ে পড়ায় অস্বস্তিতে পড়ে যান তৃণমূল নেতারা। দলের জেলা নেতাদের একাংশ ঘটনাটিকে আত্মহত্যা বলেও দাবি করেছিলেন। ছাত্রীর দেহ উদ্ধারের পর থেকেই ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টারও অভিযোগ করেছিলেন ওই পরিবারের সদস্যেরা এবং এলাকাবাসীদের একাংশ। দেহ উদ্ধারের দিন রাতেই স্থানীয় তৃণমূল নেতা সহ অন্যদের নামে অভিযোগ দায়ের করতে গেলে ধূপগুড়ি থানা থেকে মামলাটি ময়নাগুড়ির রেল পুলিশ থানায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ছাত্রীর বাড়িতে প্রশাসনের আধিকারিকরা তদন্তে এলে অথবা ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা ঘটনাস্থলে নমুনা সংগ্রহ করতে গেলে স্থানীয় তৃণমূল নেতারা উপস্থিত থেকে তদন্ত প্রভাবিত করার চেষ্টা করেন বলেও অভিযোগ ওঠে। এমনকী, অভিযুক্তদের অনেকেই এলাকায় ঘোরাফেরা করলেও পুলিশ তাদের গ্রেফতার করা তো দূরের কথা, জিজ্ঞাসাবাদও করেনি বলে অভিযোগ। শুধু তাই নয়, সালিশি সভায় ছিলেন না এমন দুই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা নিয়েও বির্তক তৈরি হয়।

ছাত্রীর পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে কলকাতা থেকে বিশিষ্টজনেদের একটি দল ধূপগুড়িতে আসে। তাঁদের হস্তক্ষেপেই তদন্তে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হতে কলকাতায় যান ছাত্রীর বাবা ও আত্মীয়রা। গত ১৪ সেপ্টেম্বর ছাত্রীর পরিবারের তরফে কলকাতায় রওনা হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পুলিশ দুই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে। চাপে পড়েই পুলিশ পদক্ষেপ করে বলে পরিবারের তরফে দাবি করা হয়। তদন্ত নিয়ে টানাপোড়েনের অভিযোগ ওঠে। মামলাটির তদন্তভার জেলা পুলিশের হাতে দেওয়ার জন্য সরকারি আইনজীবীর মাধ্যমে জেলা আদালতে আবেদন করেছিল রেল পুলিশ। যদিও সে আবেদন নিয়ে আদালত কোনও নির্দেশ দেননি বলে জানা গিয়েছে। এরপরে গত ২৩ সেপ্টেম্বর উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব ছাত্রীর পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে গেলে পরিবারের লোকজন তদন্ত নিয়ে অভিযোগ জানায়। ছাত্রীর পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে ধূপগুড়িতে এসেছিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রও।

অভিযুক্ত সকলের গ্রেফতারের খবর পেয়ে কিছুটা হলেও স্বস্তি পেয়েছেন বলে দাবি করেছেন ছাত্রীর বাবা। তিনি বলেন, “শেষ পর্যন্ত পুলিশ ওদের ধরেছে। তবে এখনও অনেক বাকি আছে। ওদের শাস্তি কী হয়, সেটাও দেখব। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির অপেক্ষায় আছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন