Howrah

হেলমেট না পরায় ফোঁটা দিয়ে পুলিশের ‘দিদিগিরি’

হেলমেট বিহীন সমস্ত বাইকচালকে ধরে ভাইফোঁটা দিল হাওড়া সিটি পুলিশ।‘সেফ ড্রাইভ সেফ লাইফ’ কর্মসূচি মেনে সর্বক্ষণ প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ।

Advertisement

নিজস্ব স‌ংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০১৬ ১৬:৫২
Share:

ব্যারাকপুরে হেলমেটহীনদের পাকড়াও করে ফোঁটা দিচ্ছেন মহিলা পুলিশকর্মীরা। নিজস্ব চিত্র।

হেলমেট না পরেই বাড়ি থেকে বাইকে চেপে বেরিয়ে পড়েছিলেন সুশীল। বাড়ির গলি ছাড়িয়ে বড় রাস্তায় তখন সুশীলের বাইক। হঠাৎ বুকের মধ্যে ধুকপুকানি। খানিকটা ভয় আর বিভিন্ন ভাবনা খেলে গেল মাথার মধ্যে। হেলমেট না পরে বাইক চালানোর মতো গর্হিত কাজ করে ফেলেছে সে। আর এই অপরাধে রাস্তার মোড়ে পুলিশি নজরদারির মুখে পড়তে হতে পারে। আবার কিছুটা দূর এগোয় তাঁর বাইক। টেনশনে কপাল থেকে কানের পাশ বেয়ে ঘাম চুঁইয়ে পড়ছে তখন।

Advertisement

রাস্তার পাশের বাড়িগুলো থেকে উলু আর শঙ্খধ্বনি। সুশীলের আবার মনে পড়ল দিদি প্রতিবার ফোঁটা দেওয়ার সময় বলেন, ‘ভাঁইয়ের কপাল দিলাম ফোঁটা যমের দুয়ারে পড়ল কাঁটা।’’ আজ তো ফোঁটাটাও নেওয়া হয়নি, তা হলে কি যমের দুয়ারে কাঁটা পড়ল না তাঁর জন্য? এ দিকে হেলমেটটাও পরা হয়নি। মনের মধ্যে ভয় আরও গেড়ে বসতে শুরু করেছে তখন। এই সব সাত-পাঁচ ভাবনার মধ্যে কখন যে বড় রাস্তার মোড়ে তিনি এসে পৌঁছেছেন খেয়ালই হয়নি। হঠাৎ পথ আটকে দাঁড়াল বেশ কয়েক জন পুলিশকর্মী। তত ক্ষণে ভয়ে তাঁর হৃদস্পন্দন কয়েক গুণ বেড়ে গিয়েছে। ছেড়ে দেওয়ার জন্য পুলিশের কাছে কাকুতি-মিনতি জুড়ে দিয়েছেন তিনি। হঠাৎই কিছু অল্পবয়সী মেয়ে উর্দিধারী পুলিশের পিছন থেকে এসে দাঁড়াল সুশীলের সামনে। হাতের চন্দনের বাটি থেকে কিছুটা চন্দন নিয়ে এক্কেবারে ভাইফোঁটার মন্ত্র উচ্চারণ করে চন্দনের ফোঁটা পরিয়ে দিল পল্টনের কপালে। আর এক জন পরম স্নেহে একটা মিষ্টি মুখে গুজে দিলেন। ভ্যাবাচ্যাকা সুশীল!

হাওড়ার ফাঁসিতলার মোড়েও পুলিশের তরফে ফোঁটা দেওয়া হল হেলমেটহীনদের। নিজস্ব চিত্র।

Advertisement

কী হল, কেন হল বুঝেই উঠতে পারলেন না তিনি! শুধু সুশীলের সঙ্গে এমনটা নয়, অনেকের সঙ্গেই এই রকম ঘটনাই ঘটল হাওড়া ময়দানের কাছে ফাঁসিতলার মোড়ে। হেলমেট বিহীন সমস্ত বাইকচালকে ধরে ভাইফোঁটা দিল হাওড়া সিটি পুলিশ।‘সেফ ড্রাইভ সেফ লাইফ’ কর্মসূচি মেনে সর্বক্ষণ প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। আর সেই প্রচারের অঙ্গ হিসেবে এই অভিনব কর্মসূচি নিল হাওড়ার পুলিশ। হেলমেট না পরে যে সব বাইকচালকরা ফাঁসিতলা মোড় দিয়ে যাচ্ছিলেন, তাঁদের পাকড়াও করে ফোঁটা দিয়ে, মিষ্টি খাইয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দিলেন তাঁরা। পুলিশের ট্রাফিক গার্ড অশোক চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘এই অনুষ্ঠানটি পুরোপুরিই প্রতীকী। ভাইফোঁটার দিন ট্রাফিক আইন ভঙ্গকারীদের সঙ্গে পুলিশের গাঁধিগিরি।’’ এমনই অদ্ভুত ঘটনার সাক্ষী রইল হাওড়া। ব্যারাকপুরেও একই ঘটনা ঘটেছে। মহিলা পুলিশ ধরে-বেঁধে হেলমেহীনদের ফোঁটা দিলেন। কিন্তু ঘটনার শেষে পুলিশের বক্তব্যে ছোট্ট সংযোজন, ‘আজ ফোঁটা দিয়েছি। কাল কেস দেব। সব গাড়ির নম্বর টুকে রেখেছি।’

আরও পড়ুন: শব্দ ব্রহ্ম, ডিজে’র বাজি মাত হবে কি

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন