টিভিতে কর্তারা, ফোনে পাবলিক

কর্তারা আশ্বাস দেন, তাঁরা খোঁজ নিয়ে দেখবেন। আহিরণ থেকে ফোন আসে: অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের ভাতা শুধু কম দেওয়া হচ্ছে তা-ই নয়, সেও অনিয়মিত। তাঁকেও জানানো হয়, কেন সমস্যা হচ্ছে, সংশ্লিষ্ট বিভাগের অফিসারদের তা দেখতে বলা হচ্ছে।

Advertisement

সামসুদ্দিন বিশ্বাস

বহরমপুর শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০১৭ ০৩:১৯
Share:

টিভির পর্দায় কর্তারা হাজির, ফোনের ও পারে জনতা।

Advertisement

মন কি বাত, মুর্শিদাবাদী সংস্করণ।

তবে এক কাঠি বাড়া। রেডিওর বদলে টিভি, বাতচিতের সঙ্গে জেলা পরিষদের কর্তা-কর্ত্রীদের আশ্বাস ভরা হাসিমুখও পর্দায় ঝলমল।

Advertisement

ফোন বাজছে।

সহ-সভাধিপতি শাহনাজ বেগম চোস্ত অ্যাঙ্করের কায়দায় ফোন ধরেন — ‘কে বলছেন? কী আপনার প্রশ্ন?’

ও পাশেও নারীকণ্ঠ: ‘বহরমপুর থেকে রিতা সরকার বলছি। এই শহর থেকে বীরভূমের কীর্ণাহার রুটের বাস খুব কম। যদি কিছু করেন...।’’

শাহনাজ বলেন, ‘‘আচ্ছা, আমরা বিষয়টা দেখছি।’’

হরিহরপাড়া থেকে আইনুদ্দিন শেখের ফোন আসে: মাগুরার রাস্তার শিলান্যাস হল। কিন্তু জেলা পরিষদের এক অফিসার বলে গিয়েছেন, এখানে রাস্তা তৈরি করার খুবই অসুবিধে।

কর্তারা আশ্বাস দেন, তাঁরা খোঁজ নিয়ে দেখবেন। আহিরণ থেকে ফোন আসে: অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের ভাতা শুধু কম দেওয়া হচ্ছে তা-ই নয়, সেও অনিয়মিত। তাঁকেও জানানো হয়, কেন সমস্যা হচ্ছে, সংশ্লিষ্ট বিভাগের অফিসারদের তা দেখতে বলা হচ্ছে।

দিন দুয়েক আগে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা থেকে এমন আমদরবার বসল মুর্শিদাবাদের একটি চালু কেবল চ্যানেলে। শাহনাজ ছাড়াও পর্দায় দেখা গেল কৃষি কর্মাধ্যক্ষ মোশারফ হোসেন, বহরমপুরের মহকুমাশাসক দিব্যনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়দের। টানা আধ ঘণ্টা ধরে হরেক প্রশ্নের জবাব দিলেন তাঁরা। যাঁপা ফোন পেলেন না, তাঁদেরও মনখারাপ করার কিছু নেই। কেননা আসছে সোমবার ফের সুযোগ মিলবে দরবার করার।

শাহনাজ বলেন, “এই চিন্তাটা হঠাৎই আমাদের মাথায় এসেছিল। ভাল পরিষেবা দিতে গেলে সরাসরি যোগাযোগ বাড়ানো দরকার। কন্যাশ্রী থেকে শুরু করে রাজ্য সরকারের নানা প্রকল্পের কথাও সকলের সামনে তুলে ধরা হচ্ছে।”

গত ফেব্রুয়ারিতে জেলা পরিষদের অর্থ স্থায়ী সমিতির সভায় সিদ্ধান্ত হয়, নিজস্ব তহবিল থেকে এর খরচ মেটানো হবে। তিন লক্ষ টাকায় এক বছরের জন্য কেবল চ্যানেলের সঙ্গে চুক্তি করা হয়। মার্চ থেকে শুরু হয়ে যায় ফি সোমবার ‘জেলার কথা’। সব সপ্তাহে সবাই থাকতে পারেন না। হাজিরা দেন ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে। মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক নিরুপম বিশ্বাস যেমন আগেই মুখ দেখিয়ে গিয়েছেন। আবার শিগগিরই হাজির হবেন জেলা সভাধিপতি বৈদ্যনাথ দাস।

বিরোধীরা অবশ্য ফুট কাটতে ছাড়ছেন না। জেলা কংগ্রেস সভাপতি আবু তাহের খানের কটাক্ষ, ‘‘সরকারি টাকা অপচয় করে ওঁরা নিজেদের ঢোল বাজাচ্ছেন। ওই টাকায় উন্নয়নের কাজ করা যেত।” শাহনাজের পাল্টা, ‘‘মানুষের অভাব-অভিযোগ শোনা, তাঁদের সরকারি প্রকল্প নিয়ে সচেতন করা উন্নয়নের কাজের মধ্যেই পড়ে।’’

পিঁইক-পিঁইক ফোন বাজে। বহরমপুর থেকে কল্যাণ চক্রবর্তী বলেন, “জেলায় একটা বিশ্ববিদ্যালয় নেই। ছেলেমেয়েদের অন্যত্র ছুটতে হয়। কিছু করবেন কি?” বল গিয়ে পড়ে মহকুমাশাসকের কোর্টে। গলা ঝেড়ে তিনি বলেন, “এটা সত্যিই প্রয়োজন। আমরা রাজ্যকে জানাব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন