জেলাশাসকদের সরিয়ে কমিটির মাথায় সভাধিপতি

পঞ্চায়েতের ত্রিস্তরে সাড়ে তিন হাজার পদে স্বচ্ছতার সঙ্গে নিয়োগ করতে চেয়ে জেলাশাসকদের দায়িত্ব দিয়েছিলেন মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়।

Advertisement

জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০১৭ ০৪:৫৫
Share:

পঞ্চায়েতের ত্রিস্তরে সাড়ে তিন হাজার পদে স্বচ্ছতার সঙ্গে নিয়োগ করতে চেয়ে জেলাশাসকদের দায়িত্ব দিয়েছিলেন মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। কিন্তু গত ১৩ এপ্রিল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়াই। সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়ে দেওয়া হয়, যা হয়েছে তা সবই ‘হাইয়েস্ট অথরিটি’-র নির্দেশে। এ বার নিয়োগের ক্ষমতাও জেলাশাসকদের হাত থেকে কেড়ে নিয়ে তা দেওয়া হয়েছে ‘রাজনৈতিক প্রতিনিধি’ জেলা সভাধিপতিদের। নিয়োগে ‘আরও স্বচ্ছতা’ আনতে কমিটিতে ১৯টি জেলায় রাখা হয়েছে শাসক দলের ৫০ জন বিধায়ক অথবা নেতাকে। সেই তালিকাও এসেছে নবান্ন থেকে।

Advertisement

গত ২৬ মে জারি হওয়া এই নয়া বিজ্ঞপ্তির জেরে গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতির নিয়োগ ঘিরে জটিলতা আরও বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে মামলা মোকদ্দমার জেরে নিয়োগ আদৌ করা যাবে কি না, তা নিয়েও আশঙ্কায় রয়েছেন
দফতরের একাংশ।

কেন? পঞ্চায়েত দফতরের এক কর্তা জানান, জেলাশাসকদের নেতৃত্বাধীন কমিটি ইতিমধ্যেই মালদহ, দক্ষিণ দিনাজপুর, হুগলি, উত্তর ২৪ পরগনা, নদিয়া, আলিপুরদুয়ার, হাওড়ায় ফল প্রকাশ করে দিয়েছে। নির্বাচিত প্রার্থীদের পুলিশ ভেরিফিকেশন এবং স্বাস্থ্যপরীক্ষাও হয়ে গিয়েছে। বীরভূমে প্যানেল তৈরি হয়ে গিয়েছে। আর দক্ষিণ ২৪ পরগনায় লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা হয়ে গেলেও প্যানেল প্রকাশের মাঝপথেই সরকারি স্থগিতাদেশ পৌঁছয়। এর পর কোনও জেলা এক কদমও এগোতে পারেনি। পঞ্চায়েত দফতর নবান্নের নির্দেশ মতো জেলা সভাধিপতি এবং শাসক দলের নেতাদের নিয়ে নতুন করে নিয়োগ কমিটি তৈরি করলেও নিয়োগের উপর স্থগিতাদেশের বিজ্ঞপ্তি প্রত্যাহার করেনি। ধোঁয়াশা সেখানেই। প্রশ্ন উঠেছে, নতুন নিয়োগ কমিটি কি তা হলে নিয়োগ করতে পারবে না?

Advertisement

আরও পড়ুন: ‘এত টাকা নিচ্ছেন কেন?’ মুখ্যমন্ত্রীর তোপের মুখে স্কুল-কলেজ

পঞ্চায়েত দফতর জানাচ্ছে, বর্ধমান, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, পুরুলিয়া, জলপাইগুড়িতে লিখিত পরীক্ষা হলেও মৌখিক হয়নি। তবে উত্তর দিনাজপুর, কোচবিহার, মুর্শিদাবাদ, বাঁকুড়ায় কোনও পরীক্ষা শুরুই করা যায়নি। এক পঞ্চায়েত কর্তার কথায়, ‘‘গত ৫ এবং ১২ ফ্রেব্রুয়ারি জেলাগুলিতে লিখিত পরীক্ষা হয়েছিল। যেখানে অন্তত লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হয়ে গিয়েছে সেখানে নতুন নিয়োগ কমিটি কী ভাবে নিয়োগে যুক্ত হবে তার ব্যাখ্যা আমাদের কাছে নেই।’’

তা হলে এমন নিয়োগ কমিটি করা হল কেন? দফতরের এক শীর্ষ কর্তার বক্তব্য, ‘‘সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের নির্দেশেই পুরনো নিয়োগ কমিটি বাতিল করে শাসক দলের নেতাদের নিয়ে নতুন নিয়োগ কমিটি হয়েছে। এটা পঞ্চায়েত দফতরের সিদ্ধান্ত নয়।’’ তা হলে যে হাজার হাজার ছেলে মেয়ে পরীক্ষা দিয়েছেন, তাঁদের এখন কী হবে?

পঞ্চায়েত দফতর জানিয়েছে, নতুন কমিটি হলেও নিয়োগ প্রক্রিয়ার উপর স্থগিতাদেশ উঠে যায়নি। জেলা থেকে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তা আবার নবান্নের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। নবান্ন যেমন সিদ্ধান্ত নেবে তেমনই চলবে পঞ্চায়েত দফতর। তাতে মামলা মোকদ্দমার পথ খুলে গেলেও আপাতত চুপ থাকাই শ্রেয় মনে করছেন পঞ্চায়েত কর্তারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন