বিজেপির ‘চক্রান্ত’, না শাসকের ‘গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব’?

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা  

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০১৮ ০৪:৪৩
Share:

নাগেরবাজারের বিস্ফোরণস্থল। —নিজস্ব চিত্র

কাজীপাড়ার বোমা বিস্ফোরণের ধোঁয়া থেকে বেরিয়ে আসছে রাজনীতি। এই ঘটনায় শাসক তৃণমূল আঙুল তুলেছে বিজেপি-আরএসএস-এর দিকে। আর ঘটনার এনআইএ তদন্ত দাবি করে বিজেপির পাল্টা অভিযোগ, তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বই ওই বিস্ফোরণের জন্য দায়ী। বিরোধী বাম এবং কংগ্রেসের নিশানাতেও শাসক শিবিরই।

Advertisement

মঙ্গলবার সকালে দমদম নাগেরবাজারের কাছে কাজীপা়ড়ার বোমা বিস্ফোরণে এক বালকের মৃত্যু হয়। ঘটনাস্থলে গিয়ে দক্ষিণ দমদম পুরসভার চেয়ারম্যান পাচু রায় বলেন, ‘‘সারা দেশে খুন-খারাপি চলছে। মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। এ দিন আমাকে নিশানা করা হয়েছিল।’’ পাচু বিজেপির নাম না করলেও রাজ্যের কারিগরি শিক্ষামন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু ঘটনাস্থলে গিয়ে বলেন, ‘‘কংগ্রেসের ক্ষমতা নেই। সিপিএমের মেরুদণ্ড ভেঙে গেছে। তৃণমূল এই কাজ করবে না। এই ঘটনার সঙ্গে আরএসএস কিংবা বিজেপির যোগাযোগ আছে।’’ রাজ্যের মন্ত্রী তথা উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূলের সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকও বলেন, ‘‘দক্ষিণ দমদম পুরসভার চেয়ারম্যান পাচু রায়কে নিশানা করে বোমা রেখে যাওয়া হয়েছিল। তিনি ওইখানে চা খেতে যান। অনেক সময় মন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসুও যান। যারা হিংসার রাজনীতি করছে, এটা তাদের চক্রান্ত। দেশের শাসনক্ষমতায় থেকে সর্বত্র হিংসা ছড়াচ্ছে। আজ মানুষের চোখের জল পড়ছে। কাল ওই চোখ দিয়েই আগুন বেরোবে। ওদের ভাষাতেই ওদের জবাব দেওয়া হবে।’’ এই বিস্ফোরণের প্রতিবাদে কাল, বৃহস্পতিবার জ্যোতিপ্রিয়বাবুর নেতৃত্বে দমদমে মিছিলের ডাক দিয়েছে তৃণমূল।

বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের অবশ্য দাবি, তৃণমূল নেতারা এখন সবেতেই বিজেপি-আরএসএসের ভূত দেখেন! আসলে পাচু রায়, দোলা সেন, পূর্ণেন্দু বসু— এই তিন জন আগে দাগী নকশাল ছিলেন। বোমা-গুলির ব্যবহারে ওঁরা পারদর্শী। এই বিস্ফোরণের পিছনে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব আছে। তাতে ওই নকশালরা জড়িত। মানুষের হাত থেকে পিঠ বাঁচাতে এখন তৃণমূল অন্যের ঘাড়ে দায় চাপাচ্ছে।’’ ওই বিস্ফোরণের এনআইএ তদন্ত দাবি করে তাঁর প্রশ্ন, দমদমের মতো জনবহুল এলাকায় বোমা রাখা থাকল, অথচ পুলিশ জানতে পারল না কেন?

Advertisement

প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র বলেন, ‘‘গোটা রাজ্য বারুদের স্তূপের উপরে বসে রয়েছে। যে সরকার শাসক দলের নেতাকে নিরাপত্তা দিতে পারে না, তারা বাংলার জনগণকে কী ভাবে নিরাপত্তা দেবে?’’

সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীরও প্রশ্ন, ‘‘প্রশাসন কী করে? আমডাঙার বেলায় বলা হয়, বাংলাদেশ থেকে সিপিএম অস্ত্র আনছে! নাগেরবাজারে অন্য কেউ বোমা ফাটাচ্ছে! পুলিশ-প্রশাসনের কাজ কি দাঁড়িয়ে দেখা?’’

বাস্তবে দক্ষিণ দমদমে বিরোধী সিপিএমের ৩ জন কাউন্সিলর রয়েছেন। বিজেপির এক জনও নেই। দক্ষিণ দমদম এলাকায় গেরুয়া শিবির রাজনৈতিক সভায় লোকও পায় না। ওয়াকিবহাল মহলের দাবি, দক্ষিণ দমদমে কিছু বহুতলের নকশা অনুমোদন না করাকে কেন্দ্র করে পাচুবাবুর সঙ্গে রাজারহাট-গোপালপুর এলাকায় তৃণমূলের প্রভাবশালী একটি অংশের দূরত্ব তৈরি হয়েছে। এ দিনের ঘটনা তারই পরিণতি কি না, উঠছে সে প্রশ্নও। যদিও দলের সকলেই এই সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছেন। পাচুবাবু নিজেকে ওই বিস্ফোরণের নিশানা বলে দাবি করলেও তার দায় সম্পর্কে নির্দিষ্ট ভাবে বিজেপির নাম উচ্চারণ করেননি।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, এটা অর্থবহ। পাচুবাবুকে দক্ষিণ দমদমের চেয়ারম্যান পদে বসিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন