বাসের পরে আলু। মুকুল রায়ের দৌত্যে উঠে গেল তিন দিনের আলু ধর্মঘটের ডাক, আজ থেকে যা শুরু হওয়ার কথা ছিল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁদের সঙ্গে দেখা করে সমস্যা নিয়ে আলোচনা করবেন তৃণমূল সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের কাছে এই মর্মে আশ্বাস পেয়ে ধর্মঘট আপাতত প্রত্যাহার করা হল বলে রবিবার আলু ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী উত্তরবঙ্গ সফর সেরে ফিরলে দু’পক্ষের বৈঠক হবে।
দাম বেড়ে যাওয়া সত্ত্বেও ১৪ টাকায় আলু বেচতে সরকারি চাপ, পাশাপাশি ভিন্ রাজ্যে আলু পাঠানোয় নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রতিবাদে প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতি আজ, সোমবার থেকে তিন দিনের ধর্মঘট ডেকেছিল। পরিণামে বাজারে নতুন করে আলু-সঙ্কটের আশঙ্কা দেখা দেয়। এ দিন ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণার প্রেক্ষিতে সরকারের দাবি, আপাতত বাজারে আলুর জোগান স্বাভাবিক থাকবে। হিমঘর থেকে পাইকারি বাাজারে বা আড়তে আলু সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার প্রতিশ্রুতি ব্যবসায়ীরাও দিয়েছেন। যদিও তাঁদের বক্তব্য: সরকারের বেঁধে দেওয়া ১৪ টাকায় নয়, সেই আলু কলকাতা-সহ রাজ্যের অন্যত্র খোলাবাজারে গৃহস্থকে কিনতে হবে কম-বেশি ২২ টাকা কেজি দরেই।
আজ উত্তরবঙ্গ সফরে যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। ফিরবেন ৪ সেপ্টেম্বর। তার পরে তাঁর সঙ্গে আলোচনায় বসবেন আলু-ব্যবসায়ীরা। প্রসঙ্গত, দু’সপ্তাহ আগে মুখ্যমন্ত্রীর সিঙ্গাপুর সফরকালে ডাকা বাস ধর্মঘট প্রত্যাহারের আর্জি নিয়ে মুকুলবাবুই বাস-মালিকদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেছিলেন। মালিকদের আশ্বাস দিয়েছিলেন, মুখ্যমন্ত্রী ফিরলে ভাড়াবৃদ্ধির বিষয়টি তাঁর গোচরে আনা হবে। মকুলবাবুর কথায় মালিকেরা ধর্মঘট তুলে নেন। মুখ্যমন্ত্রী কলকাতায় ফিরে মালিকদের সঙ্গে কথা বলে বাসভাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেন।
একই ভাবে আলু-সঙ্কটের প্রেক্ষাপটে গত শুক্রবার নিজাম প্যালেসে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন মুকুলবাবু। বলতে গেলে তাঁরই উদ্যোগে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলু-ব্যবসায়ীদের বৈঠকের আয়োজন হচ্ছে বলে এ দিন জানিয়েছেন প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতি-র সাধারণ সম্পাদক বরেন মণ্ডল। এবং তাঁরা আশাবাদী, বাসের মতো মুখ্যমন্ত্রী এ বার আলু-সমস্যা সমাধানেও উদ্যোগী হবেন। “আমরা আশা করছি, যে ভাবে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় বাসভাড়া সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান হয়েছে, তেমন আলু-সঙ্কটেরও একটা সুরাহা বেরোবে।” মন্তব্য বরেনবাবুর। তিনি জানিয়েছেন, ভিন্ রাজ্যে আলু বিক্রির উপরে যে নিষেধাজ্ঞা পশ্চিমবঙ্গ সরকার জারি করেছে, মূলত তা তুলে নিতে ব্যবসায়ীদের তরফে মুখ্যমন্ত্রীকে অনুরোধ করা হবে। বরেনবাবুর যুক্তি, বাইরের রাজ্যে আলুর দাম কেজি-পিছু ৩০ থেকে ৪০ টাকা। তাই সেখানে আলু বেচলে লাভের মুখ দেখা যায়। সেটা করতে না-দিয়ে রাজ্যের বাজারে সরকার বাঁধা দরে আলু বেচতে বাধ্য করলে ব্যবসায়ীদের আর্থিক ক্ষতি হবে বলে দাবি করেছেন তিনি।
শেষমেশ অবশ্য ধর্মঘটের ডাক উঠে যাওয়ায় সরকারি কর্তারা সাময়িক স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছেন। বরেনবাবু এ দিন জানান, হিমঘরের আলু স্বাভাবিক ভাবেই বাজারে পৌঁছবে। ধর্মঘট প্রত্যাহারের প্রশ্নে এ দিন বাঁকুড়ার কোতুলপুরে প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতি-র বৈঠকে অবশ্য তীব্র বাদানুবাদ হয়েছে। বরেনবাবু জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে ধর্মঘট তুলে সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসতে অনেক সদস্যই রাজি ছিলেন না। তবে ছ’ঘণ্টার বৈঠক শেষে আলোচনায় বসারই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
সূত্রের খবর, আজ ব্যবসায়ীরা ফের নিজেদের মধ্যে বৈঠক করবেন। সেখানে স্থির হবে, সমিতির তরফে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে কী দাবি-সনদ পেশ করা হবে।