কংগ্রেসে ‘না’ নেই, চমকে দিলেন কারাট

প্যারিসে গেলে ফরাসি হতে হয়! পুরনো এই প্রবাদের কথা বুধবার মনে পড়িয়ে দিলেন প্রকাশ কারাট! কলকাতা প্লেনামের চতুর্থ দিনে পশ্চিমবঙ্গের ‘অভূতপূর্ব’ রাজনৈতিক পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট-সম্ভাবনা খারিজ করলেন না সিপিএমের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৩:৫০
Share:

প্যারিসে গেলে ফরাসি হতে হয়!

Advertisement

পুরনো এই প্রবাদের কথা বুধবার মনে পড়িয়ে দিলেন প্রকাশ কারাট! কলকাতা প্লেনামের চতুর্থ দিনে পশ্চিমবঙ্গের ‘অভূতপূর্ব’ রাজনৈতিক পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট-সম্ভাবনা খারিজ করলেন না সিপিএমের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক! উপরন্তু, জানিয়ে দিতে ভুললেন না, রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু হয় না। অর্থাৎ কংগ্রেস এবং বিজেপি-র থেকে সমদূরত্ব রেখে চলার পার্টি কংগ্রেসের লাইনও পরিস্থিতিসাপেক্ষে পরিবর্তনযোগ্য!

কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতার সম্ভাবনা নাকচ না করেই কারাট এ দিন জানিয়েছেন, প্লেনামের পরে ৪-৬ সপ্তাহের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটি জোটের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে। তার পরে তা অনুমোদনের জন্য পলিটব্যুরোর কাছে যাবে। এবং এ ব্যাপারে তাঁরা এটাই মাথায় রাখবেন যে, তৃণমূলকে হারাতে পশ্চিমবঙ্গে ‘বিশেষ কিছু’ একটা করতে হবে!

Advertisement

পরমাণু চুক্তিকে কেন্দ্র করে ইউপিএ-১ সরকারের উপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়ে এ রাজ্যে তৃণমূলের সঙ্গে কংগ্রেসের জোটের রাস্তা প্রশস্ত করেছিলেন সিপিএমের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক। তার পরের ৭ বছরে রাজ্য কমিটির বৈঠক থেকে রাজ্য সম্মেলন, নানা মঞ্চেই বঙ্গ ব্রিগেডের কড়া আক্রমণের মুখে পড়তে হয়েছে কারাটকে। রাজ্যে বিধানসভা ভোটের আগে প্লেনামের অবসরে বুধবার আলিমুদ্দিনে রাজ্যের পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিমকে পাশে নিয়ে সেই কারাটই তাঁর গায়ে লেগে-যাওয়া ‘কট্টরপন্থী’ তকমা মোছার চেষ্টা করলেন! যা দেখে এক কংগ্রেস নেতার টিপ্পনি, ‘‘ঠেলায় পড়লে বিড়ালও গাছে ওঠে!’’

কংগ্রেসের সঙ্গে বামেদের বোঝাপড়া সম্ভব কি না, তা নিয়ে প্রশ্নের জবাবে কারাট এ দিন বলেছেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে এক অভূতপূর্ব পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। মানুষের মনোভাব হল, যে কোনও উপায়ে তৃণমূলের সরকারকে পরাজিত করতে হবে। এই পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখেই আমাদের যা করণীয়, করতে হবে।’’ বিশাখাপত্তনমের পার্টি কংগ্রেসেও সিদ্ধান্ত ছিল, কংগ্রেসের সঙ্গে নির্বাচনী আঁতাঁতে যাবে না সিপিএম। সেখান থেকে কি সরে আসা সম্ভব? কারাটের তাৎপর্যপূর্ণ জবাব, ‘‘রাজনীতিতে চূড়ান্ত ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ বলে কিছু হয় না! সময়ের সঙ্গে সব কিছুই পরিবর্তন হয়। এখানে আমাদের এখনও বিভিন্ন বাম দলের সঙ্গে জোট রয়েছে। রাজ্য কমিটি আরও কারও সঙ্গে জোট করতে চায় কি না, তা এখনই বলা সম্ভব নয়।’’

সাংগঠনিক প্লেনাম হলেও কংগ্রেস-প্রশ্নে চর্চা অবশ্য বারেবারেই উঠে আসছে প্রতিনিধিদের আলোচনায়। সরাসরি কংগ্রেসের নাম না করেও এ দিন কৌশলী সওয়াল করেছেন রাজ্যসভার সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘নমনীয় কৌশলে’র পক্ষে দাঁড়িয়েই তিনি বলেন, মানুষ কী চাইছেন, তা পুরোপুরি অগ্রাহ্য করে দলের পক্ষে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। যে সময়ের যা কাজ, তা ফেলে রাখাও যায় না। ইতিমধ্যেই সিপিএম যথেষ্ট জমি হারিয়েছে এবং ‘বাস মিস’ করতে থাকলে তারা আরও অপ্রাসঙ্গিক হবে— যুক্তি দিয়েছেন ঋতব্রত। আবার কেরলের সাংসদ কে এন বালাগোপাল সংসদেই কংগ্রেসের ভূমিকা টেনে তাদের সঙ্গে সমঝোতার বিপদ নিয়ে সরব হয়েছেন!

এই টানাপড়েনের মধ্যেও বড় চমক অবশ্যই কারাটের নমনীয়তা! নিজের সম্পর্কে প্রশ্ন শুনে যিনি সহাস্য বলছেন, ‘‘কাউকে কাউকে কেন কট্টরপন্থী আখ্যা দেওয়া হয়, জানি না! আমরা সকলেই পরিস্থিতির উপরে ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নিই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন