Pranab Mukherjee

ছিলেন ঠিক দাদার মতো

পরিচয় পাওয়ার পরে উনি আশীর্বাদ করে বলেছিলেন, ‘‘দেশ ও দশের কাজ করে যাও।’’

Advertisement

রবি চট্টরাজ

শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৫:৫২
Share:

তখন প্রতিরক্ষামন্ত্রী। লে-তে ১২ অগস্ট, ২০০৪ সালে। পিটিআইয়ের ফাইল ছবি

আমরা কংগ্রেসি পরিবার। আমার বাবা, প্রয়াত সুধাকৃষ্ণ চট্টরাজ ছিলেন কংগ্রেস পরিচালিত স্থানীয় কড়েয়া ইউনিয়ন বোর্ডের সদস্য। সেই সুবাদে ওঁদের পরিবারের সঙ্গে আমাদের পরিবারের একটা সৌহার্দ্য ছিল। কিন্তু প্রণববাবুর সঙ্গে আমার যখন প্রথম বার সরাসরি কথা হয়, তখন আমি ১৯-২০ বছরের তরুণ, লাভপুর ব্লক যুব কংগ্রেসের সভাপতি তথা ব্লক কংগ্রেসের পদাধিকারী সদস্য। প্রণববাবু তখন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। নানুর ব্লক কংগ্রেসের পক্ষ থেকে কীর্ণাহার লক্ষ্মীতলায় তাঁকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছিল। সেই সভায় তাঁর পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করি। পরিচয় পাওয়ার পরে উনি আশীর্বাদ করে বলেছিলেন, ‘‘দেশ ও দশের কাজ করে যাও।’’

Advertisement

সেই দিনটার কথা আজও ভুলিনি। তার পরে বৈবাহিক সূত্রেই ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। আমার শ্বশুরমশাই, প্রয়াত লক্ষ্মীনারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায়ও কড়েয়া ইউনিয়ন বোর্ডের প্রেসিডেন্ট ও পরে কড়েয়া পঞ্চায়েতের প্রধান নির্বাচিত হন। আমার স্ত্রী দীপালিও পঞ্চায়েত সদ্যসা ছিলেন। সেই সূত্রে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। বৌদির কাছে ভ্রাতৃস্নেহ পেয়েছি। উনি ছিলেন ‘ইন্টেনসিভ খাদি অ্যান্ড রুরাল সোসাইটি’র প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারপার্সন। আমি বোর্ড মেম্বার। ওই প্রতিষ্ঠানে দুঃস্থ বেকার যুবক-যুবতীদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়। পরামর্শদাতা ছিলেন প্রণববাবু স্বয়ং।

ক্রমশ আমি তাঁদের পরিবারেরই এক জন হয়ে উঠি। প্রতি বছর দুর্গাপুজোর আগে সচিবালয় থেকে তাঁর মিরিটি সফরের নির্ঘণ্ট জানানো হত। কখনও দাদাও ফোনে নির্দেশ দিতেন। পুজোর আগেই মিরিটি হয়ে উঠত আমার দ্বিতীয় বাড়ি। দুর্গাপুজোয় কীর্ণাহারের গ্রামের বাড়িতে এলেই
তিনি অন্য মানুষ। চণ্ডীপাঠ করতেন যখন, কে বলবে, ইনি কেন্দ্রের এত গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রক সামলেছেন! রাষ্ট্রপতি হওয়ার পরেও নিরাপত্তা বলয়ে মুড়ে হেলিকপ্টারে চড়ে যখন কীর্ণাহারে পৌঁছতেন, তখন তিনি আদ্যন্ত গ্রামের মানুষ। অন্নপূর্ণাদির (প্রণববাবুর দিদি অন্নপূর্ণা বন্দ্যোপাধ্যায়) আদরের পল্টু।

Advertisement

প্রণববাবুর হয়ে ২০০৪ সালে জঙ্গিপুরেও নির্বাচনের কাজ করতে গিয়েছি। রাতের পর রাত রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে কথা হয়েছে। তখন তাঁকে
রাজনীতির চাণক্য মনে হয়েছে। তাঁর নির্দেশে জঙ্গিপুরে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে শামিল হয়েছি। তাঁর দিল্লির বাড়িতেও একাধিক বার গিয়েছি। বৌদি নিজের হাতে রান্না করে খাইয়েছেন। পাশাপাশি এক টেবিলে খেতে খেতে এলাকার খবরাখবর নিয়েছেন।

দাদা নারকেল নাড়ু খুব পছন্দ করতেন। নিয়ে গেলে খুব খুশি হতেন। অবাক হতাম, যে মানুষটা চাইলে দুনিয়ার ভাল ভাল খাবার নিমেষে হাজির হয়ে যাবে, সেই তিনি নারকেল নাড়ু খেয়ে কী খুশি! প্রণববাবুর অনেক উত্থানপতনের সাক্ষী থেকেছি। উত্থানে যেমন উচ্ছ্বাস দেখিনি, তেমনই পতনে খুব একটা মুষড়ে পড়েননি। স্ত্রী-বিয়োগের পরে শূন্যতা সৃষ্টি হলেও বাইরে থেকে বোঝার কোনও উপায় ছিল না। প্রতি বারের মতো গত বার পুজোয় এসেও সবাইকে শুভকামনা জানিয়েছিলেন। গত বছর জন্মাষ্টমীর দিনেই তাঁর ১০ নম্বর রাজাজি মার্গের বাড়িতে প্রসাদ খেয়ে ঘণ্টাখানেক কাটিয়ে এসেছি।

(লেখক কীর্ণাহারের প্রাক্তন স্বাস্থ্যকর্মী, কংগ্রেস নেতা)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন