মুকুটের পাল্টা সিংহাসন

শনিবার বিকেলে খররাশোল ব্লকে জনসভা দিয়ে সেই কর্মসূচির সূচনা হল। আর জেলা সভাপতি সভায় পৌঁছানের পরে বরণ পর্বেই ফের প্রকট হল গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে আঁচ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

খয়রাশোল শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০১৭ ০২:৪৫
Share:

শনিবার খয়রাশোলের সভায় অনুব্রত মণ্ডল। নিজস্ব চিত্র

নেতাকে খুশি করতে এ যেন প্রতিযোগিতা। এক পক্ষ দিল মুকুট, অন্য পক্ষ সিংহাসন।

Advertisement

পঞ্চায়েত নির্বাচনকে পাখির চোখ করে ব্লকে ব্লকে সভা করার কর্মসূচি নিয়েছে তৃণমূল। ডিসেম্বরের ২২ তারিখ পর্যন্ত ধাপে ধাপে জেলার ১৯টি ব্লক এবং বর্ধামনের কেতুগ্রাম, আউশগ্রাম ও মঙ্গলকোটে সভা হবে।

শনিবার বিকেলে খররাশোল ব্লকে জনসভা দিয়ে সেই কর্মসূচির সূচনা হল। আর জেলা সভাপতি সভায় পৌঁছানের পরে বরণ পর্বেই ফের প্রকট হল গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে আঁচ।

Advertisement

ব্লক কার্যকারি সভাপতি দীপক ঘোষ-সহ ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর নেতারা অনুব্রতর মাথায় রুপোর মুকুট পরানোর পরক্ষণেই রূপোর সিংহাসন দিলেন বিরোধী গোষ্ঠী প্রলয় ঘোষ, মৃণালকান্তি ঘোষ, উজ্জ্বল হক কাদেরি, শেখ জয়নালরা। ‘‘রাজার জন্য রাজমুকট ও রাজ সিংহাসন’’ বলে ঘোষক ব্যাপারটা রূপক করে দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু কাঠখোট্টা মানেটা ততক্ষণে কর্মীরা যে যা বোঝার, বুঝে ফেলেছেন। সভার সুরও বাঁধা হয়ে গিয়েছে।

বক্তৃতায় অনুব্রতও ব্যাপারটা এড়িয়ে যাননি। ‘‘উন্নয়েনের জোয়ারে বিরোধী সিপিএম আর বিজেপি-র মনোনয়ন দাখিল করার ক্ষমতা থাকবে না। সব আসনই আমরা পাব।’’—চিরাচরিত ঢঙে শুরু করেন তিনি। তৃণমূলকে ভোট দেওয়ার যুক্তি, উন্নয়েনের ফিরিস্তি এই সমস্ত উপস্থিত কয়েক হাজার কর্মী সমর্থককে বুঝিয়ে বলেন, ‘‘আমার চ্যালেঞ্জ, খয়রাশোল পঞ্চায়েত সমিতি আমরা জিতবই। আমাদের মধ্যে যাই-ই থাক। আপনারা ভাববেন না, এদের মধ্যে ঝগড়া আছে, দলাদলি আছে। এদের কিছু নেই। আমাদের মা-মাটি সরকারের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আছেন।’’ অনুব্রতর সংযোজন, ‘‘গোটা খয়রাশোলের ব্লকে মাত্র ৩৩টি বুথে আমরা পিছিয়ে রয়েছি। আমি জানি, কেন আমরা পিছিয়ে। কার দোষে পিছিয়ে রয়েছি। সেটা আমরা শুধরে নেব।’’

ঘটনা হল, খয়রাশোলে বরাররই তৃণমূলের গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব রয়েছে। গোড়ায় ছিল দুই নেতা অশোক ঘোষ এবং অশোক মুখোপাধ্যায়ের লড়াই। দুই নেতাই খুন হয়ে যান।

তৃণমূল কর্মীদের একাংশের দাবি, গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কারণেই দুই নেতা খুন হয়েছেন। কিন্তু তার পরেও নতুন চেহারায় দ্বন্দ্ব রয়েই গিয়েছে। তারই সূত্র ধরে খয়রাশোলের পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূল সভানেত্রী অসীমা ধীবরের বিরুদ্ধে আনাস্থা আসে। অনাস্থা আসে লোকপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে তৃণমূল প্রধানের বিরুদ্ধেও। দলের শীর্ষ নেতৃত্বের হস্তক্ষেপে শেষ পর্যন্ত বিষয়টি এড়ানো গেলেও বারবার প্রকট হয়েছে দ্বন্দ্ব।

তবে দ্বন্দ্বের সমীকরণটাও বদলেছে। অশোক ঘোষের ভাই তথা খয়রাশোলের ব্লক কার্যকরী সভাপতি দীপক ঘোষ এখন ব্লকের ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর। দলের কর্মীদের একাংশ জানান, ব্লক সভাপতিও তাঁর কথায় যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে চলেন। খয়রাশোল আর লোকপুরে অনাস্থা আনার পিছনে দীপক ঘোষের লোকজনেরই ইন্ধন ছিল বলে শোনা যায়। কিছু দিন আগে দীপক ঘোষের উপরেও গুলি চালানোর অভিযোগ উঠেছে। বিভিন্ন এলাকায় তাঁর বিরোধী কিছু লোকজন মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে। তার মধ্যে জয়নাল এবং প্রলয় ঘোষের মতো পঞ্চায়েত সমিতির কিছু সদস্যও রয়েছেন বলে তৃণমূল সূত্রের খবর।

এ দিন মুকুটের পাল্টা সিংহাসন দেওয়াটা সেই দ্বন্দ্বেরই প্রমাণ বলে মনে করছেন কর্মীদের একাংশ। তবে সভায় উপস্থিত জেলা পরিষেদের সভাপতি বিকাশ রায়চৌধুরী, সহ-সভাপতি অভিজিৎ সিংহ, মলয় মুখোপাধ্যায়রা পরস্পরের সঙ্গে বিবাদ মিটিয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করার কথা বলেন।

তবে দ্বন্দ্ব সহজে মেটার নয় বলেই মনে করছে স্থানীয় বেশ কিছু নেতা। তাঁদের কথায়, ‘‘কারও কাঁধে একক ভাবে দায়িত্ব না দিয়ে কয়েক জনের মিলিত কমিটি করে দিলে হয়তো পঞ্চায়েত ভোটটা ঠিকঠাক উতরে যাবে। না হলে সমস্যা থাকবেই।’’

এই সমস্ত ব্যাপারে অনুব্রতর মতামত অবশ্য মেলেনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন