কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়।
অতিরিক্ত ছাত্রছাত্রী ভর্তি নেওয়ার জন্য এক দিকে ছাত্র সংগঠনের চাপ।
অন্য দিকে বাড়তি পড়ুয়া নিতে নিষেধ বিশ্ববিদ্যালয়ের!
একই বিষয়ে চাপের এই জাঁতাকলে পড়ে অনেক কলেজ-অধ্যক্ষেরই শ্যাম রাখি না কুল রাখি অবস্থা! পরিস্থিতি এতটাই সঙ্গিন যে, অধ্যক্ষদের একাংশ নিরাপত্তার দাবিতে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের দ্বারস্থ হতে চলেছেন। নিরাপত্তার অভাব বোধ করায় মধ্য কলকাতার একটি কলেজের অধ্যক্ষ ছুটি নিয়ে অন্যত্র চলে গিয়েছেন বলেও জানাচ্ছেন ওই অধ্যক্ষেরা।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন বেশ কয়েকটি কলেজে গত বছর অতিরিক্ত ছাত্র ভর্তির অভিযোগ উঠেছিল। সেই অনিয়মকে ঘিরে বিস্তর গন্ডগোলও হয়। শেষ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সিদ্ধান্ত নেয়, বাড়তি পড়ুয়াদের রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হবে না। আসন ফাঁকা রয়েছে, এমন কলেজে ভর্তি হতে হবে। নইলে বিষয় পরিবর্তন করতে হবে ছাত্রছাত্রীদের। এর জেরে গোলমাল শুরু হয়। বিভিন্ন কলেজের ছাত্র সংগঠন চাপ দিতে থাকে, ভর্তি হলে সকলকেই রেজিস্ট্রেশন দিতে হবে। জোড়া চাপের মুখে মুশকিল আসানের আবেদন নিয়ে বিভিন্ন কলেজের কর্তৃপক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বারস্থ হন। গত সপ্তাহে সিন্ডিকেটের বৈঠকে পুরনো অবস্থানেই অনড় থাকার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ অতিরিক্ত ছাত্রছাত্রীদের কোনও ভাবেই রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হবে না।
তার পরে অধ্যক্ষদের সমস্যা আরও বেড়েছে। প্রশাসনিক জটিলতার চাপ ছাড়াও ব্যক্তিগত নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন তাঁদের অনেকেই। কেননা ছাত্র সংগঠনের নিরন্তর চাপের কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্দেশও ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে নিস্তার পাচ্ছেন না তাঁরা। মধ্য কলকাতার এক অধ্যক্ষ বলেন, ‘‘কলেজগুলিতে কী ভাবে ভর্তি হয়, বিশ্ববিদ্যালয় তার পুরোটাই জানে। তা সত্ত্বেও বাড়তি পড়ুয়াদের রেজিস্ট্রেশন না-দেওয়ার নিয়ম করে পুরোটাই আমাদের ঘাড়ে ঠেলে দিল। এটা চলতে পারে না। তাই তাঁদের কাছেই নিরাপত্তার দাবি জানাব।’’
সব থেকে বেশি অতিরিক্ত পড়ুয়া ভর্তি হয়েছেন কলকাতার আনন্দমোহন কলেজেই। গোলমালও হয়েছে। তাই নিরাপত্তার অভাবেই ওই কলেজের অধ্যক্ষ প্রদীপ মাইতি ছুটিতে গিয়েছেন বলে শোনা যাচ্ছে কলেজের অন্দরে। বক্তব্য জানতে রবিবার তাঁকে ফোন করা হয়। কিন্তু তাঁর মোবাইল বন্ধ ছিল। এসএমএসেরও জবাব দেননি তিনি।
কী বলছে বিশ্ববিদ্যালয়?
‘‘কলেজের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হলে সেটা রাজ্য প্রশাসন দেখবে, বিশ্ববিদ্যালয় নয়,’’ বলছেন রেজিস্ট্রার রাজাগোপাল ধরচক্রবর্তী।