বন্দির অপমৃত্যুতে রাজনীতির দড়ি টানাটানি

দিন দশেক আগে গ্রেফতার হয়েছিলেন ডাকাতির মামলায়। বিচারাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার মৃত্যু হল জেলে। মইনুদ্দিন সর্দার (৫২) নামে ওই বন্দির অস্বাভাবিক মৃত্যু নিয়ে রাজনৈতিক টানাপড়েন শুরু হয়ে গিয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০১৫ ০৩:৩২
Share:

দিন দশেক আগে গ্রেফতার হয়েছিলেন ডাকাতির মামলায়। বিচারাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার মৃত্যু হল জেলে। মইনুদ্দিন সর্দার (৫২) নামে ওই বন্দির অস্বাভাবিক মৃত্যু নিয়ে রাজনৈতিক টানাপড়েন শুরু হয়ে গিয়েছে।

Advertisement

মইনুদ্দিন জয়নগর-কুলতলি এলাকায় তাদের সমর্থক বলে দাবি করেছে সিপিএম। আর ওই বন্দির পরিবারের অভিযোগ, জেলে শারীরিক অত্যাচারের জেরেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। এই মর্মে আলিপুর থানায় অভিযোগও দায়ের করা হয়েছে পরিবারের তরফে। তবে জেল সূত্রের দাবি, এ দিন গলায় খাবার আটকে মৃত্যু হয়েছে মইনুদ্দিনের।

মৃত্যু নিয়ে নালিশের সঙ্গে সঙ্গে জয়নগরের চালতাবেড়িয়ার বাসিন্দা মইনুদ্দিনের পরিবারের অভিযোগ, একটি ডাকাতির মামলায় তাঁকে ফাঁসানো হয়েছিল। এ দিন ওই বন্দির মৃত্যুর খবর পেয়ে বাঙুর হাসপাতালে যান সিপিএমের দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা সম্পাদক সুজন চক্রবর্তী এবং প্রাক্তন মন্ত্রী কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়। কান্তিবাবুর অভিযোগ, মইনুদ্দিন যে মারা গিয়েছেন, সেই খবর জেলের পক্ষ থেকে তাঁর বাড়িতেও জানানো হয়নি। জেলের মধ্যে তাঁর উপরে অত্যাচার করা হত। ‘‘আমরা এই ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়েছি,’’ বললেন কান্তিবাবু। একই অভিযোগ মইনুদ্দিনের ভাই মফিজুদ্দিন সর্দারের। এ দিন আলিপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করে তিনি বলেন, ‘‘দাদার কোনও অসুখবিসুখ ছিল না। হঠাৎ কী করে মারা গেল, সেটাই তো বুঝতে পারছি না। দাদার মৃত্যুর যথাযথ কারণ জানতে তদন্ত হোক।’’ আত্মীয়দের অভিযোগ, মইনুদ্দিনের দেহে বেশ কিছু আঘাতের চিহ্ন মিলেছে। তাঁদের সন্দেহ, জেলে পিটিয়েই মারা হয়েছে তাঁকে।

Advertisement

জয়নগর-কুলতলি এলাকা থেকে সম্প্রতি বহু অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। ওই ঘটনায় কিছু দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করা হয়। মইনুদ্দিনের পরিবারের অভিযোগ, ওই দুষ্কৃতীরা তৃণমূল-আশ্রিত। তাই স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের চাপে ১২ জুন মইনুদ্দিনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরের দিন বারুইপুর আদালতে তোলা হলে তাঁকে ১৪ দিন বিচার বিভাগীয় হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়।

মইনুদ্দিনের বোন আকলিমা সর্দারের অভিযোগ, তৃণমূলের ছেলেদের চাপেই পুলিশ তাঁর দাদাকে ধরে। মাঠে মজুরের কাজ সেরে বাড়ি ফেরার পরে মইনকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। অথচ পরে পুলিশ বলে, বন্দুক-সহ মইনুদ্দিনকে ধরা হয়েছে বাজারে। তিনি বলেন, ‘‘তৃণমূলের লোকজন তাদের দলে যাওয়ার জন্য দাদাকে চাপ দিচ্ছিল। দাদা রাজি হয়নি। তাই ওকে মিথ্যে মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়েছিল।’’

মইনুদ্দিনের পরিবারের অভিযোগ অস্বীকার করেছে কারা দফতর। আলিপুর জেলের এক কর্তা জানান, এ দিন সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ প্রাতরাশের সময় গলায় খাবার আটকে অসুস্থ হয়ে পড়েন মইনুদ্দিন। সঙ্গে সঙ্গেই তাঁকে জেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানকার চিকিৎসক তাঁকে বাঙুর হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন। সেখানে নিয়ে যাওয়ার পরে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

কারা দফতরের কর্তাদের একাংশ অবশ্য জানান, কুলতলিতে গ্রেফতার হওয়া তৃণমূল-আশ্রিত দুষ্কৃতীদের সঙ্গেই জেলে রাখা হয়েছিল মইনুদ্দিনকে। ওই দুষ্কৃতীরা তাঁর উপরে অত্যাচার চালিয়েছিল কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কারা দফতরের এক কর্তাই প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘ঘটনা ঘটল সকাল সাড়ে ৮টায়। জেল-কর্তৃপক্ষের দাবি, প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তা হলে সাড়ে ১২টার পরে পুলিশে খবর দেওয়া হল কেন?’’

বাঙুর হাসপাতাল সূত্রের খবর, মইনুদ্দিনকে আলিপুর জেল থেকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যাওয়া হয় সকাল ৯টা নাগাদ। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক জানিয়ে দেন, হাসপাতালে পৌঁছনোর আগেই মৃত্যু হয়েছে মইনুদ্দিনের। ময়না-তদন্ত করার নির্দেশ দেন হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষ। রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী জানান, বাঙুর হাসপাতালকে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। রিপোর্ট পেলেই বলা যাবে, মইনুদ্দিনের মৃত্যুর কারণ কী। তবে হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষ মৌখিক ভাবে জানিয়েছেন, তাঁকে মৃত অবস্থাতেই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন