প্রতীকী ছবি।
মন্দ কাজে তিরস্কার। কিন্তু ভাল কাজে পুরস্কার নয় কেন— এই প্রশ্নকে সামনে রেখেই গোড়া থেকে প্রশাসনিক ক্ষেত্রে নানা ভাবে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রথা চালু করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ বার ভাল কাজের নিরিখে বন্দিদেরও পুরস্কার চালু করল কারা দফতর। শংসাপত্র বা স্মারক নয়। একেবারে নগদে।
কারাকর্তাদের দাবি, জেল মানেই হাড়ভাঙা খাটুনি, সমাজজীবনের সঙ্গে সমস্ত রকম বিচ্ছেদ— এই ধারণা এখন পুরোপুরি অতীত। একদা রুপোলি পর্দায় প্রায়ই দেখা যেত, গোটা গায়ে কালিঝুলি মেখে হাতুড়ি দিয়ে পাথর ভাঙছেন বা কোদাল দিয়ে মাটি কাটছেন কয়েদিরা। কিন্তু কারাগার যে-দিন সংশোধাগারের তকমা পেয়েছে, সে দিন থেকে বন্দিরা লৌহকপাটের অন্দরে স্বাভাবিক জীবনের টুকরো স্বাদ পেতে শুরু করেছেন। সেই সংশোধনেরই অঙ্গ হিসেবে বন্দিদের ভাল কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ২০১৬ থেকে পুরস্কার চালু করেছে সরকার।
কারা দফতর সূত্রের খবর, প্রথম বছরে ৩৩৪ জন বন্দিকে পুরস্কৃত করা হয়েছে। এই খাতে খরচ হয়েছে সাত লক্ষ ৪৫ হাজার টাকা। বন্দিরা অবশ্য এর পুরোটাই পাবেন না। নিয়ম অনুযায়ী পুরস্কারমূল্যের অর্ধেক যাবে বন্দি উন্নয়ন তহবিলে, বাকিটা বন্দির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে। প্রয়োজন অনুযায়ী নিজের পারিবারিক কাজে ওই টাকা খরচ করতে পারবেন পুরস্কৃত বন্দি। কারাকর্তারা জানাচ্ছেন, পুরস্কার চালুর পরে এক দিকে জেলে হস্তশিল্পের মাধ্যমে বিবিধ সামগ্রীর উৎপাদন বেড়েছে, তেমনই কমেছে ঝামেলা-ঝঞ্ঝাট। জেলে সুস্থ পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য কড়া নজরদারির সঙ্গে সঙ্গে উপযুক্ত লোককে পুরস্কৃত করার এই সিদ্ধান্তই কারাকর্তাদের অন্যতম হাতিয়ার।
কাজ আদায় এবং কর্মপরিবেশ ঠিক রাখার জন্য পুরস্কারের মতো দাওয়াই যে আর কিছু হতে পারে না, মমতার সরকার সেটা উপলব্ধি করেছে অনেক দিন আগেই। তাই জেলে পুরস্কারের রেওয়াজ হালে চালু হলেও রাজ্য সরকারের তরফে বিডিওরত্ন, কৃষিরত্ন ও শিক্ষারত্ন পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে ছ’বছর ধরে। শুধু ব্যক্তিবিশেষকে নয়, দলবদ্ধ ভাবে ভাল কাজের জন্য এ বছর চালু হয়েছে সমবায়রত্ন পুরস্কারও।
আরও পড়ুন: বঙ্গের সম্মানে এ বার আমলাও
জেলে কারা পাচ্ছেন পুরস্কার?
এক কারাকর্তা জানান, এক দল বন্দি রং-তুলি দিয়ে ২০০ বছর আগের কলকাতাকে ফুটিয়ে তুলেছেন প্রেসিডেন্সি জেলের ভিতরের দেওয়ালে। তাঁদের সকলকে এক হাজার টাকা করে পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আগে মেদিনীপুর জেলের কিছু বন্দি যে-ভাবে মাঠ সাজিয়েছিলেন, সেই নিপুণতার পুরস্কার পেয়েছেন তাঁরাও। ভাল কাজের স্বীকৃতি মিলছে একক ভাবেও। যেমন, দেওরের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে স্বামীকে খুন করার অপরাধে উত্তরবঙ্গে জেল খাটছেন এক মহিলা। জেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বন্দিদের সেবা করাই এখন তাঁর ধ্যানজ্ঞান। তাঁকেও পুরস্কৃত করেছেন কারা-কর্তৃপক্ষ। একই ভাবে কয়েক বছর ধরে আলিপুর মহিলা জেলে যোগাসন শেখানোর স্বীকৃতি হিসেবে পুরস্কার পেয়েছেন এক বন্দিনী।