বিভিন্ন বেসরকারি অর্থ লগ্নি সংস্থার বহু লগ্নিকারী, এমনকী অনেক ডিরেক্টরের হদিস শেষ পর্যন্ত পাওয়া যায় না। একই ধরনের ভুতুড়ে ব্যাপার ধরা পড়ছে রোজ ভ্যালিতে। অনেকে ডিবেঞ্চারের মাধ্যমে রোজ ভ্যালিতে বিনিয়োগ করেছেন, এমন একটি তালিকা পেয়েছিল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডি। কিন্তু তদন্ত চালাতে গিয়ে সেই সব লগ্নিকারীর অধিকাংশকে খুঁজেই পাচ্ছে না তারা।
এই ধরনের বিনিয়োগকারীর অস্তিত্ব আদৌ আছে কি না, তদন্তকারীরা তা খতিয়ে দেখছেন। ইডি-র দাবি, এই ধরনের ডিবেঞ্চার ইস্যু করার জন্য যে-অনুমতি দরকার হয়, তা-ও ছিল না রোজ ভ্যালির।
ইডি সূত্রের খবর, রোজ ভ্যালির তদন্তে নেমে ডিবেঞ্চারের মাধ্যমে বিনিয়োগ করা ২৫ জনের তালিকা পাওয়া গিয়েছিল। সেই তালিকা ধরে বিনিয়োগকারীদের নোটিস পাঠায় ইডি। কিন্তু ছ’টি বাদে ১৯টি নোটিসই ইডি-র দফতরে ফেরত এসেছে। এর ফলে তদন্তকারীদের মনে হয়েছে, ওই বিনিয়োগকারীরা ভুতুড়ে হতে পারেন।
এখানেই ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছেন তদন্তকারীরা। তাঁদের একাংশের মতে, বেসরকারি অর্থ লগ্নি সংস্থার ক্ষেত্রে এই ধরনের ভুতুড়ে নামে বিনিয়োগ দেখানোটা অভিনব কোনও ব্যাপারই নয়। অনেক লগ্নি ব্যবসায়ীই নিজেদের স্বার্থে কখনও তাদের গাড়ির চালক বা সাধারণ কর্মীদের সংস্থার ডিরেক্টর করে দেন। অথচ সংশ্লিষ্ট গাড়িচালক বা সাধারণ কর্মী তা জানতেও পারেন না। অনেক ক্ষেত্রে আবার সংস্থার কোনও কোনও ডিরেক্টর বা বিনিয়োগকারীরও অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না। যেমন, সারদা গোষ্ঠীর আর্থিক কেলেঙ্কারির মামলায় চিত্রশিল্পী শুভাপ্রসন্নের দেবকৃপা ব্যাপার লিমিটেডের ডিরেক্টর থেকে শেয়ার হোল্ডারদের একাংশের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। ওই সংস্থার ঠিকানায় গিয়ে দেখা গিয়েছে, সেটি কাবুলিওয়ালাদের আস্তানা!
ওই ধরনের ভুতুড়ে কাণ্ডের সঙ্গে রোজ ভ্যালি-রহস্যে জড়িয়েছে ভারতীয় জীবন বিমা নিগমের নামও। ইডি-র পাশাপাশি রোজ ভ্যালির তদন্তে তথ্য জানতে চেয়ে ভারতীয় জীবন বিমা নিগমের কাছে নোটিস পাঠিয়েছে সিবিআই-ও। তদন্তকারী সংস্থা সূত্রের খবর, জীবন বিমা নিগমের কর্পোরেট এজেন্ট হিসেবে কাজ করত রোজ ভ্যালি। সেই সংক্রান্ত চুক্তি সম্পর্কে তথ্য জানতেই ওই নোটিস পাঠানো হয়েছে। তদন্তকারীদের কেউ কেউ জানান, আইআরসিটিসিকে সামনে রেখে সারদা যেমন বাজার থেকে টাকা তুলেছিল, রোজ ভ্যালি তেমনই জীবন বিমা নিগমকে ব্যবহার করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তাই সংশ্লিষ্ট যাবতীয় তথ্য যাচাই করা হবে।
সিবিআইয়ের খবর, জীবন বিমা নিগমের কর্পোরেট এজেন্ট ছিল রোজ ভ্যালি চেন মার্কেটিং সিস্টেম লিমিটেড। ২০০২ সালের ডিসেম্বরে ওই সংস্থা ইনসিওরেন্স রেগুলেটরি ডেভেলপমেন্ট অথরিটি বা আইআরডিএ-র অনুমতি (বিয়ারিং নম্বর ৮৮৩৮৯৯) পায়। ২০০৫ এবং ২০০৮ সালে সেই অনুমতির নবীকরণও হয় যথারীতি। ২০১১ সাল পর্যন্ত জীবন বিমা নিগমের কর্পোরেট এজেন্ট হিসেবে কাজ করার অনুমোদন ছিল রোজ ভ্যালির।
তদন্তকারীদের একাংশ জানান, ২০১০ থেকে আইআরডিএ-র কাছে রোজ ভ্যালি সম্পর্কে অভিযোগ জমা পড়ে। অভিযোগ, জীবন বিমা নিগমকে সামনে রেখে, তাদের লোগো ব্যবহার করে রোজ ভ্যালি নিজেদের বিভিন্ন প্রকল্পে বাজার থেকে টাকা তুলছে। এই অভিযোগের তদন্ত করার পরে আইআরডিএ ২০১২-য় রোজ ভ্যালির অনুমোদন বাতিল করে দেয়। লগ্নি সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্তের দাবি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলাকারীদের অন্যতম অমিতাভ মজুমদার বলেন, ‘‘রোজ ভ্যালি যে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে মুনাফা লুটতেই এ কাজ করেছে, সেটা এ বার স্পষ্ট হচ্ছে।’’