শিল্পীর জমি বেদখল করে প্রকল্পের বাড়ি

প্রশাসনের এই পদক্ষেপে সন্তুষ্ট মনোময় বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী ওই অন্যায়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছেন দেখে আমরা কৃতজ্ঞ। তবে ওই ব্যক্তি যাতে গৃহহারা না হন, তা দেখতেও অনুরোধ করেছিলাম। দিদি সে কথাও রেখেছেন।’’

Advertisement

শুভ্র মিত্র

বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০১৭ ১০:১০
Share:

নির্দেশ: এই বাড়িই ভাঙতে বলা হয়েছে। —নিজস্ব চিত্র।

ভুয়ো নথি দেখিয়ে জমি দখল করে সরকারি প্রকল্পের টাকায় তৈরি হচ্ছে বাড়ি। সঙ্গীত শিল্পী মনোময় ভট্টাচার্য বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরে তাঁদের পৈতৃক জায়গায় এই বেনিয়মের অভিযোগ এনেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নজরে। তার পরেই সেই নির্মীয়মাণ বাড়ি ভেঙে ফেলতে নির্দেশ দিল রাজ্য পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর। শিল্পীর অনুরোধে সংশ্লিষ্ট উপভোক্তাকে অন্য জায়গায় বাড়িও তৈরি করে দিচ্ছে প্রশাসন।

Advertisement

‘সবার জন্য বাড়ি’ প্রকল্পে বিষ্ণুপুরে ৫৬৭টি বাড়ি তৈরি হচ্ছে। তার মধ্যে মহাপাত্র পাড়ায় জয়দীপ বাগদির নামে বরাদ্দ হওয়া (জেএল নম্বর ১০১, দাগ নম্বর ৩৪১৮) নির্মীয়মাণ বাড়ি ঘিরে বিতর্ক তৈরি হয়। ওই জমির অন্যতম শরিক মনোময়ের ছোটকাকা, খড়্গপুরের বাসিন্দা তুলসীদাস ভট্টাচার্যের অভিযোগ, ‘‘দীর্ঘদিন দেশের বাড়ি যাই না। সেই সুযোগে আমাদের জমি এক ব্যক্তি তাঁর নিজের জায়গা দাবি করে বাড়ি তৈরি করছিলেন।’’ মনোময় মুখ্যমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ জানিয়েছিলেন।

বিষ্ণুপুর পুরসভা জানাচ্ছে, ওই বাড়ি তৈরির জন্য দু’টি ধাপে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি জয়দীপবাবু প্রায় দু’লক্ষ টাকা পেয়েছেন। বিষ্ণুপুরের পুরপ্রধান তৃণমূলের শ্যাম মুখোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘ভুয়ো নথি জমা দেন ওই ব্যক্তি। তাঁকে ভর্ৎসনা করে ওই কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।’’ জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু বলেন, ‘‘১১ অগস্টের মধ্যে ওই ব্যক্তিকেই অবৈধ নির্মাণ ভাঙতে বলা হয়েছে।’’ তবে পুরপ্রধান জানান, ওই ব্যক্তির আর্থিক দুরাবস্থার জন্য পুরসভাই ওই বাড়ি ভাঙবে। জমি কিনে তাঁকে বাড়িও তৈরি করে দেবে।

Advertisement

প্রশাসনের এই পদক্ষেপে সন্তুষ্ট মনোময় বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী ওই অন্যায়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছেন দেখে আমরা কৃতজ্ঞ। তবে ওই ব্যক্তি যাতে গৃহহারা না হন, তা দেখতেও অনুরোধ করেছিলাম। দিদি সে কথাও রেখেছেন।’’

জমির প্রকৃত মালিক না হয়েও জয়দীপবাবু কী করে ওই প্রকল্পের উপভোক্তা নির্বাচিত হলেন? এই প্রশ্ন তুলে বাঁকুড়ার বাসিন্দা বিজেপির রাজ্য সহ-সভাপতি সুভাষ সরকারের অভিযোগ, ‘‘এই প্রকল্পে রাজ্য জুড়েই দুর্নীতি হচ্ছে। এ নিয়ে কেন্দ্রীয় পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রকের কাছে তদন্তের দাবি জানাব।’’

জয়দীপবাবুর দাবি, ‘‘কোনও ভুয়ো নথি দিইনি। যেখানে বাড়িটি তৈরি হয়েছে, সেখানকার শুধু মানচিত্র দিয়েছিলাম।’’ তাহলে পুরসভার কর্মীরা কি যাচাই করেননি? পুরপ্রধানের বক্তব্য, ‘‘যাঁদের উপরে তথ্য যাচাইয়ের ভার ছিল, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি। অন্য উপভোক্তাদের নথিও পুনরায় যাচাই করতে বলেছি।’’ জেলাশাসক জানান, আগে ওই নির্মাণ ভাঙা হোক। তার পরে প্রয়োজনে তদন্ত করা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন