Shankha Ghosh

‘শব্দহীন হও’, রাষ্ট্রীয় সম্মানে নিমতলা শ্মশানে তোপধ্বনি ছাড়াই হবে কবির শেষকৃত্য

তোপধ্বনি দেওয়া হবে না। কারণ কবি তা পছন্দ করতেন না। কবির ইচ্ছেকে সম্মান জানিয়ে, তাঁর পরিবারের সঙ্গে কথা বলেই এই সিদ্ধান্ত।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০২১ ১৩:১১
Share:

কোভিড সুরক্ষাবিধি মেনেই কবির শেষকৃত্য। শোক বার্তা দিয়ে জানালেন মুখ্যমন্ত্রী।

‘... শব্দহীন হও, শষ্পমূলে ঘিরে রাখো আদরের সম্পূর্ণ মর্মর...’ লিখেছিলেন কবি শঙ্খ ঘোষ। শেষ যাত্রায় কবির প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপনেও তাই শব্দহীন হওয়ার সিদ্ধান্ত নিল প্রশাসন।

Advertisement

প্রয়াত কবিকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শেষ বিদায় জানাবে রাজ্য সরকার। তবে তোপ ধ্বনি দেওয়া হবে না। কারণ, কবি তা পছন্দ করতেন না। কবির ইচ্ছেকে সম্মান জানিয়েই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে বুধবার ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতা বললেন, কবিকে সম্মান জানানোর অন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে রাজ্যের মুখ্যসচিবকে যাবতীয় নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

বুধবার বেলা সাড়ে ১১ টা নাগাদ কলকাতায় নিজের বাড়িতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন কবি। তাঁর মৃত্যুতে শোকজ্ঞাপন করে মমতা বলেন, ‘‘শঙ্খদার মৃত্যুতে শোকজ্ঞাপন করছি। তাঁর পরিবার এবং শুভানুধ্যায়ীদের সকলকে সমবেদনা জানাই। করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন শঙ্খদা। তার পরও যাতে রাষ্ট্রীয় সম্মানের সঙ্গে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন করা যায়, সে ব্যাপারে মুখ্যসচিবকে নির্দেশ দিয়েছি। তবে শঙ্খদা গান স্যালুট পছন্দ করতেন না। সেটা বাদ রাখছি।’’

Advertisement

সাধারণত, রাষ্ট্রীয় মর্যাদা প্রদর্শনের অঙ্গ হিসেবেই তোপ ধ্বনি দিয়ে সম্মান জানানো হয়। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, কবির পরিবারের সঙ্গে কথা বলেই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মমতা বলেন, ‘‘ওঁর মেয়ের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তাঁকেও সব বলেছি।’’ প্রশাসনিক সূত্রে খবর, কবির অন্ত্যেষ্টি হবে কোভিড সুরক্ষাবিধি মেনেই। সরকারের তরফেই গাড়ি পাঠানো হবে। সমস্ত সুরক্ষা বিধি বজায় রেখেই হবে শেষকৃত্য।

নিমতলা মহাশ্মশানে শেষকৃত্য হবে কবির। কোভিড সুরক্ষাবিধির কথা মাথায় রেখে শেষকৃত্য হলেও কবির দেহ শ্মশানে নিয়ে যাওয়া হবে সরকারের শববাহী গাড়িতেই। বুধবার সরকারের তরফে মন্ত্রী সাধন পাণ্ডে এবং মেয়র ফিরহাদ হাকিম গিয়েছিলেন কবির বাড়িতে। তাঁরা জানিয়েছেন, অনেকেই কবিকে শ্রদ্ধা জ্ঞাপনে আসতে চেয়েছিলেন। কিন্তু কোভিড সুরক্ষার কথা মাথায় রেখেই তাঁদের আসতে বারণ করা হয়েছে।

করোনায় আক্রান্ত কবির স্ত্রী। তাঁর ছোট মেয়ের পরিবারও করোনা সংক্রমিত হয়েছে। এমনকি বাড়ির দুই পরিচারিকাও করোনায় আক্রান্ত। তাই সুরক্ষাবিধির কথা মাথায় রেখেই বাড়িতে আসতে বারণ করা হয়েছে বাকিদের, জানিয়েছে কবির পরিবার।

পরে পশ্চিমবঙ্গের তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগে তরফে মুখ্যমন্ত্রী শোকবার্তাও প্রকাশ করা হয়, শোকবার্তায় মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, ‘‘বিশিষ্ট কবি, সাহিত্য সমালোচক ও রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞ শঙ্খ ঘোষের প্রয়াণে আমি গভীর শোক প্রকাশ করছি। তিনি আজ সকালে কলকাতায় নিজ বাসভবনে প্রয়াত হন। বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর। শঙ্খবাবুর সাথে আমার অত্যন্ত সুসম্পর্ক ছিল। তাঁর প্রয়াণে সাহিত্য জগতের এক অপূরণীয় ক্ষতি হল। আমি প্রয়াত শঙ্খ ঘোষের আত্মীয় পরিজন ও অনুরাগীদের আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি।’’

যাদবপুর, দিল্লি ও বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা সাহিত্যের অধ্যাপনা করেছেন কবি। শোকবার্তায় তার উল্লেখ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। উল্লেখ করেছেন কবির লেখা বাবরের প্রার্থনা, মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে, ওকাম্পোর রবীন্দ্রনাথ, ধূম লেগেছে হৃদকমলে, এ আমির আবরণ-এর মতো বইয়ের নাম। এ ছাড়া জ্ঞানপীঠ, পদ্মভূষণ, দেশিকোত্তম, সাহিত্য অকাদেমি, রবীন্দ্র স্মৃতি পুরস্কার-সহ যে অজস্র সম্মানে কবিকে ভূষিত করা হয়েছে শোকবার্তায় তারও উল্লেখ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন