পর্যটক টানতে ও-পারে সফর

বিদেশি পর্যটক টানার দৌড়ে পশ্চিমবঙ্গ এখন দেশের মধ্যে পাঁচ নম্বরে। আর এ-পার বাংলায় সব চেয়ে বেশি বিদেশি পর্যটক আসেন ও-পার বাংলা থেকে। অথচ এত দিন বাংলাদেশি পর্যটক টানতে এই রাজ্যে পরিকল্পিত কোনও সরকারি উদ্যোগ ছিল না। পরিকল্পনার সেই ঘাটতি এ বার সম্ভবত মিটতে চলেছে।

Advertisement

সুরবেক বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৩:২১
Share:

বিদেশি পর্যটক টানার দৌড়ে পশ্চিমবঙ্গ এখন দেশের মধ্যে পাঁচ নম্বরে। আর এ-পার বাংলায় সব চেয়ে বেশি বিদেশি পর্যটক আসেন ও-পার বাংলা থেকে। অথচ এত দিন বাংলাদেশি পর্যটক টানতে এই রাজ্যে পরিকল্পিত কোনও সরকারি উদ্যোগ ছিল না। পরিকল্পনার সেই ঘাটতি এ বার সম্ভবত মিটতে চলেছে।

Advertisement

২০ এপ্রিল তিন দিনের সফরে বাংলাদেশ যাচ্ছেন রাজ্যের পর্যটন দফতরের এক দল প্রতিনিধি। নবান্নের খবর, এই ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক সম্মতি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দফতরের মন্ত্রী গৌতম দেব বা প্রতিমন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেনের মধ্যে কেউ ওই দলের নেতৃত্ব দেবেন।

পর্যটন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ‘ট্যুর অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’ বা তোয়াব-এর সভাপতি তৌফিকউদ্দিন আহমেদ কলকাতায় এসে পশ্চিমবঙ্গের পর্যটন দফতরের প্রতিধিদলকে বাংলাদেশে আমন্ত্রণ জানান। ঠিক হয়েছে, বাংলাদেশ থেকে পশ্চিমবঙ্গে পর্যটক আনেন এবং এ-পারের পর্যটক বাংলাদেশে নিয়ে যান, এমন ট্যুর অপারেটরেরাও ওই প্রতিনিধিদলে থাকবেন।

Advertisement

ট্যুর অপারেটরদের একাংশের হিসেব অনুযায়ী প্রতি মাসে লন্ডন থেকে প্যারিস যান গড়ে ১৫ হাজার পর্যটক। তার চেয়ে বেশি পর্যটক বাংলাদেশ থেকে পশ্চিমবঙ্গে আসেন প্রতি সপ্তাহে। শুধু তা-ই নয়, ভারতে আসা বিদেশি পর্যটকদের মধ্যেও বাংলাদেশির সংখ্যা এখন সব চেয়ে বেশি। সংখ্যাটা আট লক্ষেরও বেশি। এবং এ ক্ষেত্রে গত বছরই আমেরিকা ও ব্রিটেনকে পিছনে ফেলে দিয়েছে বাংলাদেশ। এখন ভারতে আসা মোট বিদেশি পর্যটকের প্রায় ১৫ শতাংশ বাংলাদেশি। তাঁদের ৯০ শতাংশ ভারতে ঢোকেন পশ্চিমবঙ্গ দিয়ে।

পর্যটনমন্ত্রী গৌতমবাবুর কথায়, ‘‘বাংলাদেশ আর আমাদের ভাষা, পোশাক, সংস্কৃতি, খাদ্যাভ্যাস আর মনন এক। আমাদের রাজ্যে পর্যটনের নতুন নতুন সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সব চেয়ে কাছের দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে সামিল করা জরুরি।’’

বাংলাদেশি পর্যটকদের কাছে কেনাকাটা, আরাম, আমোদ-প্রমোদের জায়গা হিসেবে কলকাতার কদর সব চেয়ে বেশি বলে জানাচ্ছেন ‘ইনবাউন্ড ট্যুর অপারেটর্স কাউন্সিল’-এর সভাপতি শুদ্ধব্রত দেব। তাঁর পর্যবেক্ষণ, বাংলাদেশিদের পছন্দের তালিকায় কলকাতার পরেই আছে দার্জিলিং। কারণ, তাঁদের দেশে তুষারশৃঙ্গ নেই। রবীন্দ্রনাথের জন্য শান্তিনিকেতন এবং নবাবি ঐতিহ্যের জন্য মুর্শিদাবাদও টানে ও-পারের বাঙালিদের। শুদ্ধব্রতববাবু বলেন, ‘‘বাংলাদেশিদের কাছে পশ্চিমবঙ্গের বিপণনের প্রধান কৌশল হওয়া উচিত, ‘ফিল অ্যাট হোম’-এর প্রচার। অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গ তাঁদের কাছে এমন বিদেশ, যেখানে থাকলে মনে হবে, যেন নিজের দেশেই আছি।’’

তবে বাংলাদেশের ‘মেডিক্যাল ট্যুরিস্ট’ বা চিকিৎসা-পর্যটকদের অভিযোগ, এই রাজ্যে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার খরচ খুব বেশি। বেসরকারি হাসপাতালের কর্তাদের সঙ্গে সাম্প্রতিক বৈঠকে এই প্রসঙ্গ তুলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রীও। ট্যুর অপারেটরদের অনেকে চাইছেন, বাংলাদেশের মেডিক্যাল ট্যুরিস্টদের জন্য রাজ্যের পর্যটন দফতর একটি ‘গ্রিভান্স সেল’ খুলুক। ওই পর্যটকেরা যাতে দক্ষিণ ভারতে চলে না-যান, সেটা দেখার উপযুক্ত ব্যবস্থা হোক। পর্যটনমন্ত্রী গৌতমবাবু বিষয়টি বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন