‘বেরিয়ে যান’ শুনেই পিঠে কষে কামড়

বেলা দশটা। বাইরে চড়া রোদ। ঘামে জামাকাপড় একেবারে সাপটে রয়েছে গায়ে। আইসিডিএস কর্মী ও হেল্পারদের নিয়ে সবে মিটিংয়ে বসেছিলেন বেলডাঙা ২ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস কাউন্সিলর মধুমিতা বিশ্বাস। হঠাৎই পুরনো কাঠের দরজাটা সজোরে ঠেলে ঘরে ঢুকলেন ওঁরা। হতভম্ব কাউন্সিলর খানিক ক্ষুণ্ণ হয়েই ছুড়ে ছিলেন প্রশ্নটা— ‘‘আপনারা?’’ ভাবতে পারেননি উত্তরটা ফিরে আসবে একগুচ্ছ গালাগালি হয়ে।

Advertisement

সেবাব্রত মুখোপাধ্যায়

বেলডাঙা শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০১৬ ০২:১৪
Share:

বেলা দশটা। বাইরে চড়া রোদ। ঘামে জামাকাপড় একেবারে সাপটে রয়েছে গায়ে।

Advertisement

আইসিডিএস কর্মী ও হেল্পারদের নিয়ে সবে মিটিংয়ে বসেছিলেন বেলডাঙা ২ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস কাউন্সিলর মধুমিতা বিশ্বাস।

হঠাৎই পুরনো কাঠের দরজাটা সজোরে ঠেলে ঘরে ঢুকলেন ওঁরা। হতভম্ব কাউন্সিলর খানিক ক্ষুণ্ণ হয়েই ছুড়ে ছিলেন প্রশ্নটা— ‘‘আপনারা?’’ ভাবতে পারেননি উত্তরটা ফিরে আসবে একগুচ্ছ গালাগালি হয়ে। নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে কিছু একটা বলতে গিয়েছিলেন মধুমিতা। এ বার গালমন্দে বহর চড়ল আরও।

Advertisement

রাগ-লজ্জায় চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে মধুমিতা তোপ দাগলেন— ‘‘বেরোন, বেরিয়ে যান এখুনি।’’ টেবিলের ও পারে দাঁড়িয়ে থাকা মাঝবয়সী মা আর ছেলে দু’পা পিছিয়ে গিয়েছিলেন বটে, তবে চমকে দেওয়া ঘটনাটা ঘটল তার পরেই।

সবুজ বেঞ্চিতে গাদাগাদি করে বসে থাকা আইসিডিএস কর্মীদের মধ্যে থেকে তড়াক করে উঠে দাঁড়ালেন ছিপছিপে এক তরুণী। মধুমিতা কিছু বোঝার আগেই চেয়ার ডিঙিয়ে তেড়ে এলেন সেই তরুণী। তার পরেই ঘ্যাঁক, মধুমিতার পিঠে মোক্ষম এক কামড় দিয়ে শাড়ির কোঁচড়ে মুখ মুছে বেরিয়ে গেলেন তিনি।

মঙ্গলবার সকালে ওই ‘ঘ্যাঁক কাণ্ড’ বেলডাঙা বড়ুয়া কলোনী মাঠের ধারে পুর অফিসে। কাঁধের কাছে খানকয়েক পুরুষ্টু দাঁতের অত্যাচার আড়াল করতে অতঃপর দিনভর আঁচল জড়িয়েই থাকতে হয়েছিল কাউন্সিলরকে।

কামড়াকামড়ির কথা শুনে পরে পরিস্থিতি সামলাতে ঘটনাস্থলে আসতে হয় বেলডাঙা ব্লক ১-এর সিডিপিও সৌরভ শীলকে। কামড়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে যাঁর বিরুদ্ধে, তিনি এক আইসিডিএস কর্মী। আর সেই দুই আগন্তুক, ওই কর্মীরই মা ও দাদা।

সব শুনে সিডিপিও ওই কর্মীকে কামড়ের কারণ দর্শানোর নোটিস ধরিয়েছেন। আর, মধুমিতা ওই কর্মী, তাঁর মা ও দাদার বিরুদ্ধে হেনস্থা, কাজ করতে না দেওয়া ও মারধরের অভিযোগ দায়ের করেছেন থানায়।

ঘটনার সূত্রপাত বেশ কিছু দিন আগেই। স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে খবর, বেলডাঙা পুরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের আইসিডিএস কেন্দ্রে খাবারের গুণমান নিয়ে অভিযোগ দীর্ঘদিনের। সেই নিয়ে কেন্দ্রের সহায়িকা ও কর্মীদের মধ্যে গন্ডগোল লেগেই থাকত। এ নিয়ে ওই কেন্দ্রের আইসিডিএস-কর্মী সোমা দাসকে অভিযোগও জানানোও হয়েছিল। কিন্তু আখেরে কোনও কাজ হয়নি। পরে স্থানীয় কাউন্সিলরের পক্ষ থেকেও তাঁকে সাবধান করা হয়। কিন্তু লাভের লাভ হয়নি তাতেও।

গত শনিবার ওই কর্মীর সহকারী মনিকা হাওলাদার মিস্ত্রী নিজেই চলে যান কাউন্সিলারের কাছে। নিম্নমানের ডালের কিছু নমুনা নিয়ে গিয়ে দেখান তাঁকে। সব দেখেশুনে, মধুমিতাদেবী আশ্বাস দেন, এ বার তিনি কিছু একটা হেস্তনেস্ত করেই ছাড়বেন।

সেই ফয়সালা করতেই মিটিং বসেছিল এ দিন সকালে। মধুমিতা বিশ্বাস ছাড়াও হাজির ছিলেন স্থানীয় ওয়ার্ড কমিটির কয়েক জন কর্তা। সেই সঙ্গে আইসিডিএস কর্মী ও সহায়িকারা। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গেই উত্তপ্ত হতে শুরু করে পরিস্থিতি। কর্মীদের মুখে বারেবারেই নাম উঠতে থাকে সোমার। পাল্টা চিৎকার চেঁচামেচি করে তিনিও।

এ সব হট্টগোলের মধ্যে একটা লিখিত বোঝাপড়ায় যেতে চাইছিলেন মধুমিতাদেবী। সবে তখন কলম ধরেছিলেন। হঠাৎই প্রবেশ দুই আগন্তুকের।

তাঁদের গালমন্দ শুনে উত্তেজিত কাউন্সিলর দু’কথা বলতেই ধস্তাধস্তির উপক্রম হয়।

এই সময়ই ‘আমার বাড়ির মেয়ের নামে নিন্দামন্দ’, বলে তেড়ে আসেন সোমার মা। জানা গিয়েছে, আইসিডিএস কেন্দ্রের কাছেই সোমা দাসের বাড়ি। টেবিল চাপড়ানির আওয়াজ পৌঁছেছিল সেখানেও। মেয়েকে বাঁচাতে বাড়ি থেকে তাই তেড়ে এসেছিলেন সোমার মা ও দাদা।

তার পরেই ওই গালমন্দ এবং পাল্টা ‘বেরিয়ে যান’ পর্ব। কামড় খেয়ে ভড়কে গিয়েছিলেন কাউন্সিলর। অবাক হয়ে কয়েক জোড়া বিস্ফারিত চোখ তখন তাঁর দিকে চেয়ে। আর, যন্ত্রণাক্লিষ্ট মধুমিতা মরিয়া হয়ে আড়াল করার চেষ্টা করছেন তাঁর ক্ষতবিক্ষত পিঠ।

এর পর মিটিং আর শেষ হয়নি। কোনও সিদ্ধান্তেও পৌঁছনো যায়নি।

আপাতত এই কামড়ের জবাব চাই মধুমিতা দেবীর। তাঁর কথায়, ‘‘ওই কেন্দ্র নিয়ে নিম্নমানের খাবার দেওয়ার অভিযোগ ছিল। আমি নিজের উদ্যোগে একটা মিটিং করে সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু মিটিং চলাকালীন ওই কর্মীর মা পদ্মা দাস ও দাদা বাপি দাস আচমকা ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়েন। তাঁরা বহিরাগত, তাই আপত্তি জানাই। তাতে কি না কামড়ে দিলেন সোমা!’’ সোমাদেবী অবশ্য এখনও বলছেন, ‘‘আমার মা আর দাদার গায়ে হাত তুলেছিলেন উনি। তাই প্রতিবাদ জানিয়েছি।’’

তা বলে কামড়ে?

—‘‘মাথায় রাগ চড়ে গিয়েছিল কি না!’’ আমতা আমতা করছেন সোমা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন