টাকার দাবিতে বিক্ষোভ বদলে গেল সহমর্মিতায়

নোটের হাহাকার, ব্যাঙ্কের সামনে লাইন, অচল এটিএম— দুর্ভোগের ছবিটা সব জায়গায় একই রকম। সোমবার উলুবেড়িয়ার ধুলাশিমলা দেখল নোটের দাবিতে ব্যাঙ্কের সামনে এমন এক বিক্ষোভ, যা শেষ পর্যন্ত বদলে গেল সহমর্মিতায়!

Advertisement

নুরুল আবসার

উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:৫৪
Share:

টাকা না পাওয়ায় অবরোধ। সোমবার। ছবি: সুব্রত জানা

নোটের হাহাকার, ব্যাঙ্কের সামনে লাইন, অচল এটিএম— দুর্ভোগের ছবিটা সব জায়গায় একই রকম। সোমবার উলুবেড়িয়ার ধুলাশিমলা দেখল নোটের দাবিতে ব্যাঙ্কের সামনে এমন এক বিক্ষোভ, যা শেষ পর্যন্ত বদলে গেল সহমর্মিতায়!

Advertisement

এক গ্রাহকের বিয়েবাড়ি এবং আর এক গ্রাহক ক্যান্সার রোগী হওয়ায় তাঁদের জন্য ব্যাঙ্ক প্রায় দেড় লক্ষ টাকা সরিয়ে রাখায় যে বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল, শেষ পর্যন্ত ওই দু’জনের প্রয়োজনীয়তার গুরুত্ব বুঝলেন বিক্ষোভকারীরা। ব্যাঙ্কের সিদ্ধান্তকে সমর্থনই জানালেন তাঁরা। ব্যাঙ্ক সেই বিক্ষোভকারীদের হাতে তুলে দিল কুপন। যে কুপন দেখিয়ে আজ, মঙ্গলবার টাকা তোলার সময়ে তাঁরা অগ্রাধিকার পাবেন।

ধুলাশিমলায় একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ওই শাখার সামনে এ দিন ভোর থেকেই টাকা তোলার লাইন পড়ে। ব্যাঙ্ক খোলার পরে অন্তত ৫০ জন টাকা তুলতে পেরেছিলেন। তার মধ্যেই ব্যাঙ্কে ঢুকে পড়েন ওই ক্যান্সার রোগী এবং যাঁর বাড়িতে বিয়ে রয়েছে, তিনি। তাঁদের জন্য ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ আগেই টাকা সরিয়ে রেখেছিলেন। বেলা ২টো নাগাদ ভাঁড়ারে টান পড়ায় ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করেন, ওই দু’জনকে টাকা দেওয়ার পরে এ দিন আর টাকা পাওয়া যাবে না। বাইরে তখন অন্তত ২০০ গ্রাহক লাইনে দাঁড়িয়ে। তাঁদের ধৈর্যের বাঁধ ভাঙে। শুরু হয় বিক্ষোভ। বাইরে থাকা ব্যাঙ্ককর্মী এবং পুলিশকে জোর করে ভিতরে ঢুকিয়ে তাঁরা ব্যাঙ্কের কোলাপসিবল গেট বন্ধ করে দেন। অবরোধ করেন উলুবেড়িয়া-শ্যামপুর রোড। আসে পুলিশ। হাজির হন তৃণমূল নেতৃত্ব। ব্যাঙ্ক সূত্রের খবর, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক থেকে প্রতিদিন গড়ে চার লক্ষ টাকা করে নগদ পাঠানো হচ্ছে এই শাখায়। সেই টাকাই গ্রাহকদের মধ্যে ভাগাভাগি করে দেওয়া হচ্ছে প্রতিদিন। এ দিন যাঁর বিয়েবাড়ি, সেই ব্যক্তি এবং ক্যান্সার রোগীর জন্য টাকা সরিয়ে রাখার কারণেই বেশ কিছু গ্রাহককে টাকা দেওয়া যায়নি।

Advertisement

বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ টাকার অভাবের কথা বা দুই গ্রাহকের প্রয়োজনীয়তার কথা আগে জানালে তাঁরা হয়রান হতেন না। তৃণমূল নেতারা তাঁদের বুঝিয়ে শান্ত করেন। শেষ পর্যন্ত ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ বিক্ষোভকারীদের মধ্যে কুপন বিলি করেন। গোটা বিক্ষোভ-পর্ব চলে প্রায় আধ ঘণ্টা। তবে, এই সময়ে বিক্ষোভকারীরা ওই দুই গ্রাহককে কোনও বাধা দেননি। ব্যাঙ্কেও কোনও গোলমাল করেননি। অবরোধ শেষে ভোগান্তির শিকার এক গ্রাহক বলেন, ‘‘সকাট ৯টা থেকে লাইন দিয়েছিলাম। বাড়িতে সংসার খরচের টাকা নেই। কিন্তু দুপুরে যখন টাকা কম পড়ার কারণ জানলাম, দেখলাম, ওই দু’জনের প্রয়োজনটা বেশি জরুরি। কাল ফের লাইন দেব।’’

একই কথা শোনা গেল আরও অনেক গ্রাহকের গলাতেও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন