পুবে ‘অধিকার’-ই শেষ কথা, তবু স্বপ্ন বিজেপির

তৃণমূল-গড়ে গেরুয়া। বাড়ছে কাটমানি-ক্ষোভও। কারণ কী? জেলাওয়াড়ি অন্বেষণভরা আষাঢ়ে যেখানে বসে কথা হচ্ছে, লোকসভা ভোটের পর থেকে পূর্ব মেদিনীপুরের জমি শক্ত করতে সেই খেজুরিকেই পাখির চোখ করেছে বিজেপি।

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস

খেজুরি শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০১৯ ০৪:২৩
Share:

হলদিয়ার দফতরে শুভেন্দু অধিকারী। ছবি: আরিফ ইকবাল খান

পাকা রাস্তা ছেড়ে এঁটেল মাটির পথ। এক পশলা বৃষ্টিতেই কাদা। ওই কাদা পথে দু’টো পুকুর, কয়েকটি আকাশমণি গাছ আর একটি গোয়াল ঘর পেরিয়ে মাটির দোতলা বাড়ি। পা টিপে টিপে এগিয়ে মাটির বাড়ির মেঝেয় চাটাই পেতে বসে খেজুরির বিজেপি নেতা শুভ্রাংশু দাস বললেন, ‘‘বড় রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা বলা ঠিক নয়। তাই এখানে নিয়ে এলাম। এখনও এখানে অধিকারীরাই সব। ওঁদের চোখে পড়ে গেলে সমস্যা হয়ে যাবে।’’

Advertisement

ঘরের দোলনায় শোয়ানো শিশুকে আদর করে বিজেপি নেতার দাবি, ‘‘আমি কংগ্রেস বাড়ির ছেলে। প্রথম থেকে তৃণমূল করতাম। সিপিএমের অত্যাচার থেকে বাঁচতে শুভেন্দুদার (অধিকারী) নেতৃত্বে তখন তৃণমূলই ছিল আমাদের ভরসা। পরে দলের কয়েকটা কাজের প্রতিবাদ করেছিলাম বলে মেরে হাত-পা ভেঙে জমিতে ফেলে দিয়ে গিয়েছিল। যাঁরা বিরুদ্ধে কোনও কথা সহ্য করতে পারেন না, মানুষও তাঁদের মেনে নেন না।’’

ভরা আষাঢ়ে যেখানে বসে কথা হচ্ছে, লোকসভা ভোটের পর থেকে পূর্ব মেদিনীপুরের জমি শক্ত করতে সেই খেজুরিকেই পাখির চোখ করেছে বিজেপি। যদিও বিধানসভাভিত্তিক ফলের নিরিখে এবারও খেজুরিতে এগিয়ে রয়েছে তৃণমূলই। তবে ২০১৪ সালে যেখানে খেজুরির লিড ছিল প্রায় ৪০ হাজার, এবার সেখানে বিজেপির থেকে মাত্র সাত হাজার ভোটে এগিয়ে তৃণমূল। এই ব্যবধান কমিয়ে আনাটাকেই এক অর্থে জয় হিসেবে দেখে খেজুরিতে লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে বিজেপি। শুভ্রাংশু বললেন, ‘‘এখানে সব বুথে যদি কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোট হত, বিজেপিই এগিয়ে থাকত। বেশি দিন তৃণমূল এটা ধরে রাখতে পারবে না। ভগবানপুর এবং পটাশপুরেও খেজুরির মতো ভাল জায়গায় রয়েছি আমরা।’’

Advertisement

তবে বিজেপি নেতারা যা-ই বলুন, তমলুক এবং কাঁথি লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত সব বিধানসভা কেন্দ্রেই লিড পেয়েছে তৃণমূল। লোকসভা ভোটে যে সব কেন্দ্রে শাসক দলের ভোট বেড়েছে, সেগুলির অন্যতম ভগবানপুর। তবে উৎসাহিত হওয়ার কারণ? জেলার বিজেপি নেতা তপন মাইতি বললেন, ‘‘ভগবানপুরে ৫০ শতাংশ হিন্দু এবং ৫০ শতাংশ সংখ্যালঘুর বাস। এই এলাকার হিন্দুরা তৃণমূলের কাজে বীতশ্রদ্ধ। তাঁদের সংগঠিত করা গিয়েছে। তা ছাড়া, কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোট হলে এখানেও তৃণমূল হালে পানি পেত না।’’

পূর্ব মেদিনীপুরের তৃণমূল নেতা পার্থপ্রতিম দাস অবশ্য এই দাবি উড়িয়ে দিয়ে বললেন, ‘‘সকলে বিজেপিকে ভোট দিয়েছেন, ভাবার কোনও কারণ নেই। সব কেন্দ্রেই তৃণমূল জিতেছে। তবু বিজেপি জয়ী দলের মতো লাফাচ্ছে! মানুষ বুঝে গিয়েছেন বিজেপি বলে কেউ নেই। সিপিএমের হার্মাদেরাই ঝাণ্ডা বদলে নিয়েছে।’’ সেইসঙ্গে তাঁর দাবি, ‘‘স্থানীয় কিছু কারণে কোথাও কোথাও ভোট কমেছে। তবে সেটা আশঙ্কার নয়। নিচু তলার কর্মীদের সংযত হতে বলা হয়েছে। পুরনো লোকেদের ফিরিয়ে এনে জনসংযোগ যাত্রায় সামিল করা হচ্ছে। সামনের ভোটেও বুঝবেন, পূর্ব মেদিনীপুর তৃণমূলেরই গড়।’’

দিঘা রোডের ফুল ব্যবসায়ী সমীরণ মণ্ডল অবশ্য বলছিলেন, ‘‘এই বিরোধী-শূন্য দাপট দেখাতে গিয়েই ভুগছে তৃণমূল। দু’-একটা ভোট কমলে ক্ষতি কী?’’ কাঁথির এক স্কুলের শিক্ষক আবার বললেন, ‘‘অনেকে তো পঞ্চায়েতে ভোটই দিতে পারেননি। তৃণমূলও তাঁদের শক্তি বুঝতে পারেনি! রঞ্জি না খেলেই একেবারে বিশ্বকাপে খেলতে নামার অবস্থা হয়েছে।’’

হলদিয়া শিল্পাঞ্চলে ঘুরেও দেখা গেল, এলাকা কার্যত বিরোধী-শূন্য। রাস্তা মেরামত থেকে হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদের সিদ্ধান্তের সবটাই অধিকারীতে শুরু, অধিকারীতে শেষ। হলদিয়া পুরসভার চেয়ারম্যান শ্যামল আদক শুভেন্দুবাবুর অনুমতি ছাড়া মন্তব্য করতে চান না। স্থানীয় বিজেপি নেতা প্রদীপ দাস আবার এতটাই শুভেন্দু-মুগ্ধ যে, চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বললেন, ‘‘শুভেন্দুবাবু যতদিন আছেন, মানুষের সমস্যা হওয়ার কথা নয়। মিথ্যে বলে লাভ নেই, পূর্ব মেদিনীপুরে বিজেপি নেই।’’

আর শুভেন্দুবাবু? শুধু বললেন, ‘‘মুখে কিছু বলতে চাই না। দেখুনই না!’’

এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন