Migrant Workers

আতঙ্ক আর উদ্বেগ নিয়েই অশান্ত নেপাল থেকে বাঁকুড়ায় ফিরলেন একদল পরিযায়ী শ্রমিক

বাঁকুড়া জেলার হীড়বাঁধ ব্লকের মলিয়ান, সিমলাপাল ব্লকের লক্ষ্মীসাগর ও পুখুরিয়া, বাঁকুড়া ১ নম্বর ব্লকের কেঞ্জাকুড়া ও বাঁকুড়া ২ নম্বর ব্লকের মগরা এলাকায় এক সময় ছিল কাঁসা-বাসন শিল্পের রমরমা। এই গ্রামগুলিতে কান পাতলে দিনভর শোনা যেত কাঁসা বাসন তৈরির ঠকাঠক শব্দ।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ২৩:৫৬
Share:

—নিজস্ব চিত্র।

নেপাল অশান্ত হওয়ার পর থেকেই নিজের নিজের কারখানার আবাসনে কার্যত বন্দি ছিলেন। নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারবেন কি না, তা নিয়ে ছিল একরাশ উদ্বেগ। কার্ফু অল্প সময়ের জন্য কিছুটা শিথিল হতেই একরাশ উৎকণ্ঠাকে সঙ্গী করে দেশে ফেরার জন্য পায়ে হেঁটে বেরিয়ে পড়েছিলেন বুধবার। দীর্ঘপথ কখনও পায়ে হেঁটে, আবার কখনও ট্রেনে চড়ে শুক্রবার পরিযায়ী শ্রমিকদের একটি দল পৌঁছোল বাঁকুড়া জেলার বিভিন্ন গ্রামে।

Advertisement

বাঁকুড়া জেলার হীড়বাঁধ ব্লকের মলিয়ান, সিমলাপাল ব্লকের লক্ষ্মীসাগর ও পুখুরিয়া, বাঁকুড়া ১ নম্বর ব্লকের কেঞ্জাকুড়া ও বাঁকুড়া ২ নম্বর ব্লকের মগরা এলাকায় এক সময় ছিল কাঁসা-বাসন শিল্পের রমরমা। এই গ্রামগুলিতে কান পাতলে দিনভর শোনা যেত কাঁসা বাসন তৈরির ঠকাঠক শব্দ। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ঐতিহ্যবাহী সেই কুটিরশিল্প এখন মৃতপ্রায়। অগত্যা কাজের খোঁজে এই শিল্পের দক্ষ শ্রমিকেরা রওনা দেন ভিন্‌রাজ্যে, এমনকি ভিন্‌দেশেও। সে ক্ষেত্রে এই শিল্পীদের অন্যতম গন্তব্য নেপাল। নেপালের বীরগঞ্জ, কাঠমান্ডু-সহ বিভিন্ন এলাকায় ছোট ছোট কাঁসা-বাসন তৈরির কারখানায় তাঁরা বছরভর কাজ করেন। পুজোর আগে তাঁরা সকলেই ফিরে আসেন নিজের নিজের বাড়িতে। এ বারও পুজোর মুখে বাড়ি ফিরে আসার প্রস্তুতি চলছিল। তারই মাঝে অশান্তি শুরু হয় নেপাল জুড়ে। জারি হয় কার্ফু। বিদেশ বিভুঁইয়ে ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে কারখানার শ্রমিক আবাসনে বন্দি হয়ে পড়েন পরিযায়ী শ্রমিকেরা। বুধবার ভারতীয় নাগরিকদের দেশে ফেরার জন্য ঘণ্টা দুয়েকের জন্য কার্ফু শিথিল করে নেপাল প্রশাসন। আর সেই সুযোগেই বাড়ি ফেরার তাড়নায় প্রথমে পায়ে হেঁটে বেরিয়ে পড়েন বীরগঞ্জ এলাকায় আটকে থাকা বাঁকুড়া জেলার পরিযায়ী শ্রমিকদের একটি দল। সেই দলেরই মোট ৯ জন পরিযায়ী শ্রমিক শুক্রবার দুপুরে ফিরলেন বাঁকুড়া জেলায়। অবশেষে নিজের জেলায় ফিরতে পেরে কিছুটা স্বস্তি মিললেও নেপালে আটকে পড়া পরিচিত আত্মীয়-স্বজনদের জন্য দুশ্চিন্তা এখনও তাড়া করে বেড়াচ্ছে তাঁদের।

নেপাল থেকে শুক্রবার বাঁকুড়ায় ফিরে আসা পরিযায়ী শ্রমিক রাজেশ কর্মকার বলেন, ‘‘করোনার সময়েও আমরা নেপাল থেকে কোনও ক্রমে দেশে ফিরেছিলাম। এ বারের অভিজ্ঞতা তার থেকেও ভয়ঙ্কর। চার দিন কারখানার আবাসনে আটকে থাকার পর বুধবার দুপুরের দিকে কার্ফু ২ ঘণ্টার জন্য শিথিল হতেই আমরা বীরগঞ্জ থেকে পায়ে হেঁটে বেরিয়ে পড়ি। বীরগঞ্জ থেকে প্রথমে প্রায় ১০ কিলোমিটার হেঁটে তার পর সীমান্ত পেরিয়ে এদেশে প্রবেশ করি। পরে বিহারের রক্সৌল থেকে ট্রেন ধরে বাড়িতে ফিরছি।’’ শ্রীদাম দাস বলেন, ‘‘নেপালের বীরগঞ্জ এলাকা ভারতের সীমান্ত লাগোয়া। তাই আমরা পায়ে হেঁটে এ দেশে চলে আসার ঝুঁকি নিতে পেরেছিলাম। কিন্তু কাঠমান্ডুতে আটকে থাকা শ্রমিকদের তা সম্ভব নয়। তাঁদের জন্য আমাদের চিন্তা হচ্ছে। আমরা চাই, ভারত সরকার দায়িত্ব নিয়ে তাঁদের বাড়িতে ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করুক।’’

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement