প্রচারে কবির লড়াই, রঙ্গে ভাসছে সাঁইথিয়ার পুরভোট

দুপুর দুপুর লড়াই জমে উঠেছে। ঢোল-করতালে ভিড় জমজমাট সাঁইথিয়ার বিলগাবা পাড়া। লড়াইয়ের মাঠ ছাড়তে নারাজ দুই কবিয়াল। পালার নাম ‘জনতা ও মমতা’! ভোটের বাজারে এমন সব পালা গেয়েই বাড়তি রোজগারের পথ বেছে নিয়েছেন সাঁইথিয়া থানার বনগ্রাম পঞ্চায়েতের মারকোলা গ্রামের শান্তিরা মণ্ডল, বিজয় সাহারা। চাষবাসই তাঁদের প্রধান রোজগার হলেও, সখের কবিগানও উপার্জনের বিকল্প পথ। এ বার পুরভোটে সাঁইথিয়ার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী শান্তনু রায়ের হয়ে তাঁদের গাইতে আসা।

Advertisement

অনির্বাণ সেন

সাঁইথিয়া শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০১৫ ০১:৫৯
Share:

প্রচার-গান। —নিজস্ব চিত্র।

দুপুর দুপুর লড়াই জমে উঠেছে। ঢোল-করতালে ভিড় জমজমাট সাঁইথিয়ার বিলগাবা পাড়া। লড়াইয়ের মাঠ ছাড়তে নারাজ দুই কবিয়াল। পালার নাম ‘জনতা ও মমতা’!

Advertisement

ভোটের বাজারে এমন সব পালা গেয়েই বাড়তি রোজগারের পথ বেছে নিয়েছেন সাঁইথিয়া থানার বনগ্রাম পঞ্চায়েতের মারকোলা গ্রামের শান্তিরাম মণ্ডল, বিজয় সাহারা। চাষবাসই তাঁদের প্রধান রোজগার হলেও, সখের কবিগানও উপার্জনের বিকল্প পথ। এ বার পুরভোটে সাঁইথিয়ার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী শান্তনু রায়ের হয়ে তাঁদের গাইতে আসা।

প্রচার-রঙ্গের বুঝি শেষ নেই সাঁইথিয়ায়। কবিগান থেকে দেওয়াল লিখনে ছড়ার ব্যবহার, নমুনা ভোট পত্রে জায়গা করে নিয়েছে সমাজ-সচেতনতা মূলক বার্তাও। এই কবিগানকেই প্রচারের অস্ত্র হিসাবে বেছে নিয়েছেন ৭ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী । বৈশাখের চড়া রোদ মাথায় নিয়ে সে গান শুনতেই ভিড় জমাচ্ছেন এলাকার মানুষ। আর তাই প্রচারেই বাজি জিতে ভোটে নিজেকে এগিয়ে রাখছেন প্রার্থী শান্তনু রায়। ভোটের প্রচারের নানা রঙ্গের ভিড়ে যেমন হারিয়ে না যেতে, এ বার কবির দলকে প্রচারে এনেছেন শান্তনুবাবু। কবিগানের দলটি এসেছে তাঁর প্রচারে। ছজনের দলে খোল, ক্যাসিও, করতাল, ঘুঙুর বাজানোর শিল্পী-সহ রয়েছেন দু’জন দলপতি মূল গাইয়ে।

Advertisement

জানা গেল, সারা বছর গ্রামে গঞ্জের বিভিন্ন উৎসব অনুষ্ঠান উপলক্ষে কবিগান করতে যান সদলবলে। কখনও সখনও সরকারি প্রচারেও যান। লোকসভা ভোটের কিছু দিন আগে থেকেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের হয়ে প্রচার করছেন কবিগানের মাধ্যমে। ভোটের সময় কখনও বিজেপি তো, কখনও তৃণমূল আবার, কখনও বা সিপিএময়ের হয়ে প্রচারে কবি গান তাঁরা। শান্তিরাম-বিজয়রা জানালেন, কোনও গান খাতা কলমে লেখা থাকে না। সমস্তটায় স্মৃতি নির্ভর। মঞ্চে উঠে স্মৃতি থেকেই গান করেন তাঁরা। মঞ্চ থেকে নামার পর যদি প্রশ্ন করা হয় কি গাইলেন বা কি বললেন, বলতে পারেন না কিছুই!

কিন্তু কীভাবে নিজেদের প্রস্তুতি নেন শান্তিরাম-বিজয়বাবুরা?

জানা গেল, পৌরাণিক বিষয়, সামাজিক বিষয়ের জন্য অল্পসল্প বইপত্র পড়লেও রাজনৈতিক বিষয়ের উপর গানের জন্য তাঁরা সম্পূর্ণ ভাবে নির্ভরশীল সংবাদ মাধ্যমের উপর। প্রতিদিন সকালে নিয়ম করে টিভিতে বিভিন্ন চ্যানেলের খবর দেখেন। এছাড়া পঞ্চায়েত অফিস খবরের কাগজ পড়তে যান। বিভিন্ন রাজনৈতিক জনসভা হলে সেখানে যান। এবং নীতিগত কারণেই কোনও একটি দলের হয়ে কোনও শহরে বা গ্রামে কবিগান গাইলে, সেই শহরের বা গ্রামের প্রতিপক্ষ কোনও দলের হয়ে তাঁরা গান করেন না।

নিজের ওয়ার্ডে কবিরদল প্রচারে এনে কী বলছেন শান্তনুবাবু?

প্রার্থী বললেন, ‘‘প্রতিদিনই কোনও না কোনও রাজনৈতিক দলের মিছিল মিটিং লেগে থাকে। সেই একঘেয়ে পরিবেশ নাই বা হল এলাকায়। ভোটের কথা শুনতে শুনতে শ্রোতারা বিরক্ত বোধ করছে। এই বিনোদনের সঙ্গে আমার ও দলের প্রচারও হচ্ছে, মন্দ কি!’’ বোতাম টিপে ভোট হলেও তিনি যে নমুনা ভোট পত্র বিলি করছেন ভোটারদের, তাতে পাঁচটি সমাজ-সচেতনতা মূলক কথাও লিখে দিয়েছেন। যার মধ্যে রয়েছে, শিশুদের নিয়মিত টীকাকরণ থেকে বৃক্ষরোপণের মতো বিষয়। প্রার্থীর যুক্তি, ‘‘একই খরচে, সচেতনতার কথা বললে ক্ষতি কি!’’

ভোটের বাজারে এমন মিঠে সুরে কবিগানে ভেসে যেতে এসেছিলেন সুখু মন্ডল, সঞ্চিতা হাজরারা। তাঁরা জানালেন, ‘‘এই রকম সভা পেয়ে খুব খুশি। হোক না ভোটের প্রচার। হারিয়ে আসা এই কবিগান তো তারা শুনতে পাই না বিনা পয়সায়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন