Illegal Teacher Recruitment

‘ঘুরপথে নিয়োগ’, শিক্ষিকা গ্রেফতার

২০১৯ সালে নবম-দশম শ্রেণির সংস্কৃতের শিক্ষিকা হিসেবে তাঁকে ইঁদপুরের ভতড়া শ্রীদুর্গা বিদ্যায়তন হাই স্কুলে নিয়োগের নির্দেশ দেওয়া হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৯:৪০
Share:

বাঁকুড়া আদালতে শিক্ষিকা গেসমিন খাতুন।(

ঘুরপথে নিয়োগের অভিযোগে সিআইডি-র হাতে গ্রেফতার হলেন প্রাক্তন স্কুল সার্ভিস কমিশনের (পশ্চিমাঞ্চল) চেয়ারম্যান শেখ সিরাজুদ্দিনের স্ত্রী, স্কুল শিক্ষিকা জেসমিন খাতুন।

Advertisement

সূত্রের খবর, বুধবার বাঁকুড়ার গোবিন্দনগরের কাছে বাড়ি থেকে জেসমিনকে সিআইডি গ্রেফতার করে। বুধবার ধৃতকে বাঁকুড়ার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জগৎজ্যোতি ভট্টাচার্যের এজলাসে তোলা হয়। বাঁকুড়া আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর রথীন দে জানান, মামলাটি নিয়ে ৪ মার্চ বাঁকুড়ার জেলা বিচারকের বিশেষ আদালতে শুনানি হবে। ধৃতকে ততদিন জেলা হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

জেলা স্কুল শিক্ষা দফতর সূত্রে খবর, ২০১১ সালে এসএসসি পরীক্ষায় বসেন জেসমিন। ২০১৯ সালে নবম-দশম শ্রেণির সংস্কৃতের শিক্ষিকা হিসেবে তাঁকে ইঁদপুরের ভতড়া শ্রীদুর্গা বিদ্যায়তন হাই স্কুলে নিয়োগের নির্দেশ দেওয়া হয়। তখনই ওই নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল জেলা স্কুল শিক্ষা দফতর।

Advertisement

জেলা স্কুল শিক্ষা দফতরের আধিকারিকদের একাংশের কথায়, ২০১৯ সালের অনেক আগেই ২০১১ সালের এসএসসি-র প্যানেলের নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ হয়ে গিয়েছিল। সংস্কৃত বিষয়টি মূলত অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত কিছু কিছু স্কুলে পড়ানো হলেও নবম ও দশম শ্রেণিতে তা পড়ানো হয় না। কিছু স্কুলে ঐচ্ছিক বিষয় হিসেবে সংস্কৃত থাকতে পারে। তবে যে স্কুলে জেসমিনকে নিয়োগ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, সেখানে ঐচ্ছিক বিষয় হিসেবে নবম-দশম শ্রেণিতে সংস্কৃত ছিল না। ফলে কেন তাকে ওই বিষয়ের জন্য নিয়োগ করা হচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন ছিল। নিয়োগের ক্ষেত্রে তথ্যগত কিছু ত্রুটিও তাঁদের নজরে আসে। তাই জেলা থেকে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়। তারপরেও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে শেষ পর্যন্ত জেলা স্কুল শিক্ষা দফতর জেসমিনকে নিয়োগ করে। স্কুল সূত্রের খবর, জেসমিন ওই স্কুলে ষষ্ঠ-সপ্তম শ্রেণিতে সংস্কৃত পড়াতেন।

এ দিকে হাই কোর্টের নির্দেশে গত ডিসেম্বরে জেসমিনের নিয়োগ নিয়ে বাঁকুড়া সদর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) পীযূষকান্তি বেরা। প্রতারণা, সরকারি টাকা তছরুপ, ষড়যন্ত্র- সহ নানা ধারায় মামলা রুজু হয়। তদন্তে নামে সিআইডি। এর মধ্যে মাস খানেক আগে এসএসসি-র (পশ্চিমাঞ্চল) চেয়ারম্যান পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় সিরাজুদ্দিনকে। তবে তিনি ইঁদপুরের শালডিহা কলেজের অধ্যক্ষ পদে রয়েছেন।

আইনজীবীদের সূত্রে দাবি, বিদ্যালয় পরিদর্শকের অভিযোগপত্রে সরাসরি সিরাজুদ্দিনের নাম না থাকলেও, ওই নিয়োগে ‘এসএসসির চেয়ারম্যান’ জড়িত বলে উল্লেখ রয়েছে। তার জেরেই এই মামলায় সিরাজুদ্দিনের জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। জানুয়ারির শেষদিকের পরে আর কলেজেও যাননি তিনি। এ দিনও তাঁর ফোন ছিল বন্ধ। বাঁকুড়ার পাবলিক প্রসিকিউটর বলেন, “বাঁকুড়া জেলা জজের আদালতে আগাম জামিনের আবেদন করেছিলেন সিরাজুদ্দিন। গত ২ ফেব্রুয়ারি সেই আবেদন খারিজ করেছে আদালত।”

জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক বলেন, “হাই কোর্টের নির্দেশে জেসমিনের নিয়োগ সংক্রান্ত বেনিয়ম নিয়ে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করা হয়। তিনি যে স্কুলে চাকরি করতেন, সেখানে তাঁর বেতন বন্ধেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’ এ দিন আদালত থেকে বেরোনোর সময় জেসমিন অবশ্য কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তাঁর আইনজীবী সৌরীশ মুখোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘আমার মক্কেল নির্দোষ। বেআইনি নিয়োগের অভিযোগ ভিত্তিহীন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন