কারণ নিয়ে ধোঁয়াশা

বিয়ে শেষে গলায় ফাঁস তরুণী বধূর

বিয়ে শেষ হয়েছিল গভীর রাতে। আর ভোরেই মিলল নববধূর ঝুলন্ত দেহ! গলায় ওড়নার ফাঁস। ঘটনাটি পুরুলিয়ার পাড়া থানার পলমা গ্রামের। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতার নাম খুশবু বাউরি (১৯)। রবিবার ভোরে বাড়ির মধ্যেই একটি ঘর থেকে তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করেন পরিবারের লোকজন। তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় রঘুনাথপুর মহকুমা হাসপাতালে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই বধূকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছিল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পাড়া শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০১৫ ০২:১৩
Share:

বিয়ে শেষ হয়েছিল গভীর রাতে। আর ভোরেই মিলল নববধূর ঝুলন্ত দেহ! গলায় ওড়নার ফাঁস।

Advertisement

ঘটনাটি পুরুলিয়ার পাড়া থানার পলমা গ্রামের। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতার নাম খুশবু বাউরি (১৯)। রবিবার ভোরে বাড়ির মধ্যেই একটি ঘর থেকে তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করেন পরিবারের লোকজন। তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় রঘুনাথপুর মহকুমা হাসপাতালে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই বধূকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছিল। পরে দেহের সুরতহাল করেছেন বিডিও (রঘুনাথপুর ১) সুনীতিকুমার গুছাইত। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের অনুমান, আত্মঘাতীই হয়েছেন ওই তরুণী বধূ। তবে, পুলিশ সব সম্ভাবনাই খতিয়ে দেখছে। আপাতত একটি অস্বাভাবিক মৃত্যু মামলা রুজু করে ঘটনার তদন্তে নেমেছে পুলিশ।

শনিবার রাতে খুশবুর সঙ্গে বিয়ে হয়েছে বর্ধমানের কুলটি থানার বরাকরের বাসিন্দা পেশায় দিনমজুর বাপি বাউরির। ওই বধূর পরিবার সূত্রে জানা যাচ্ছে, বিয়ের লগ্ন ছিল বেশি রাতে। বিয়ের সমস্ত আচার, অনুষ্ঠান স্বাভাবিক ভাবেই সম্পন্ন হয়েছিল। সিঁদুর দানের পরে বিশ্রাম নিতে যাচ্ছেন জানিয়ে বাড়ির একটি ঘরে শুয়ে পড়েছিলেন খুশবু। ভোরের দিকে কনে বিদায়ের সময় হয়ে যাচ্ছে দেখে তাঁর পরিবারের লোকজন ডাকতে গিয়ে দেখেন, দরজা ভিতর থেকে বন্ধ রয়েছে। বিস্তর ডাকাডাকির পরেও সাড়া না পেয়ে শেষ পর্যন্ত দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে খুশবুর ঝুলন্ত দেহ দেখতে পান বাড়ির লোকেরা।

Advertisement

মৃত বধূর আদি বাড়ি পাড়া থানারই শুঁয়ার গ্রামে হলেও খুশবুর মায়ের সঙ্গে বাবার বিবাহ-বিচ্ছেদ হওয়ায় ছোটবেলা থেকেই তিনি মায়ের সঙ্গে পলমা গ্রামে নিজের মামার বাড়িত থাকতেন। স্থানীয় স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার পরে দারিদ্রের কারনে স্কুল ছেড়ে ঘরেই থাকতেন ওই তরুণী। মা সুমিতা বাউরি পরিচারিকার কাজ করেন। পরিবারের সদস্যদের দাবি, কয়েক মাস আগে বরাকরের বাপির সঙ্গে বিয়ের সম্বন্ধ হয়েছিল খুশবুর। তখন তাতে সম্মতি দিয়েছিলেন খুশবু। সেই মতো সাধ্য অনুযায়ী বিয়ের জোগাড় করেছিল গরিব পরিবারটি। বিয়ের বেনারসি থেকে শুরু করে সোনার গয়না, দানসামগ্রীতে সব কিছুরই ব্যবস্থা করেছিল পরিবারটি। কিন্তু বিয়ে শেষের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই খুশবুর মৃত্যু নাড়িয়ে দিয়েছে গোটা পরিবারকে। আকস্মিক এই ঘটনার জেরে শোকের ছায়া গ্রাম জুড়েই।

বিডিও জানান, নিয়ম অনুযায়ী বিয়ের সাত বছরের মধ্যে কোন বধূর অস্বাভাবিক মৃত্যু হলে দেহের সুরতহাল করা হয়। সেই মতো রবিবার খুশবুর দেহেরও সুরতহাল করা হয়েছে। তবে, ওই তরুণীর মৃত্যুর কারণ নিয়ে ধন্দ রয়েছে। বিডিও নিজে ওবলেন, ‘‘বিয়ে শেষ হওয়ার পরেই নববধূর আত্মহত্যা মর্মান্তিক ঘটনা। তবে, কেন এই কাণ্ড ঘটালেন ওই বধূ সেটাই বোঝা যাচ্ছে না। বধূটির পরিবারের সঙ্গে ও পাড়া-পড়শিদের সঙ্গে কথা বলে ঘটনার কারণ জানার চেষ্টা করেও কিছুই জানা যায়নি।’’

পুলিশের একটি সূত্রের অবশ্য দাবি, প্রাথমিক তদন্তে তাঁরা জেনেছেন, কারও সঙ্গে সম্পর্ক ছিল ওই মেয়েটির। পরিবারকে তা হয়তো জানাতে পারেননি খুশবু। বিয়ে হয়ে যাওয়ার পরে মানসিক ভাবে ভেঙে পড়ে হয়তো আত্মঘাতী হয়েছেন ওই তরুণী। তবে, এই বিষয়টি সরাসরি অস্বীকার করেছেন খুশবুর মা সুমিতাদেবী ও মামা জয়দেব বাউরি। দু’জনেই এ দিন বলেন, ‘‘কারও সঙ্গে সম্পর্ক ছিল না খুশবুর। এমনকী, বিয়ের সম্বন্ধ হওয়ার পরে আমরা ওর কাছে জানতে চেয়েছিলাম, এই বিয়েতে ওর মত রয়েছে কিনা। ও কিন্তু খুশি মনেই বিয়েতে সম্মতি দিয়েছিল।” পাত্রপক্ষের সঙ্গে এ দিন যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে, জয়দেববাবু জানিয়েছেন, গোটা ঘটনায় ভেঙে পড়েছিলেন বর। তাঁরা হাসপাতালেও গিয়েছিলেন। কিন্তু, খুশবু মারা গিয়েছে, চিকিৎসক তা জানানোর পরে পাত্রপক্ষ বরাকরে ফিরে যায়।

এ দিন দুপুরে পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে খুশবুর দেহের ময়নাতদন্ত হয়েছে। কিন্তু, দেহ কারা নেবে, তা নিয়ে কিছুটা টানাপড়েন হয়েছে বধূর পরিবার ও পাত্রপক্ষের সঙ্গে। শেষ পর্যন্ত অবশ্য দেহ নিয়ে পলমা গ্রামে ফিরেছে মৃতার পরিবার। রাতে সেখানেই সৎকার হয় তরুণীর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন