মৃত্যুর পরে বৃদ্ধার চক্ষুদান

মৃত্যুর পরে তাঁর চোখ দিয়ে আলো পাক অন্য কেউ— এমন ইচ্ছা নিয়ে অনেকেই মরণোত্তর চক্ষু দানের অঙ্গীকার করেন। কিন্তু মৃত্যুর পরে সেই ইচ্ছার সঙ্গে জুড়ে যায় পরিজনদের চাওয়া বা না চাওয়ার প্রশ্নটাও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রামপুরহাট শেষ আপডেট: ২৮ জানুয়ারি ২০১৭ ০১:২০
Share:

মৃত্যুর পরে তাঁর চোখ দিয়ে আলো পাক অন্য কেউ— এমন ইচ্ছা নিয়ে অনেকেই মরণোত্তর চক্ষু দানের অঙ্গীকার করেন। কিন্তু মৃত্যুর পরে সেই ইচ্ছার সঙ্গে জুড়ে যায় পরিজনদের চাওয়া বা না চাওয়ার প্রশ্নটাও। বীরভূম জেলায় মরণোত্তর চক্ষুদান নিয়ে কাজ করা সংস্থা ‘স্বয়ম’-এর কর্মীরা জানান, ২০০৯ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত প্রায় ছ’শো জন এমন অঙ্গীকার করেছিলেন। তার মধ্যে অনেকেরই মৃত্যুর পরে অঙ্গীকারপত্রটি একটা কাগজ মাত্র হয়ে গিয়েছে। সংস্থার উদ্যোগে কর্নিয়া সংগ্রহ করা গিয়েছে মাত্র চারটি ক্ষেত্রে।

Advertisement

চতুর্থ জন কল্পনা আইচ। বয়স ৮২ বছর। ‘স্বয়ম’-এর কর্ণধার কৌশিক আইচের মা কল্পনাদেবীর কর্নিয়া অচিরেই কারও মস্তিস্কে পৌঁছে দেবে নতুন আলোর বিস্ময়। জীবন বীমা নিগমের কর্মী কৌশিকবাবু বলেন, ‘‘শুধু কাগুজে অঙ্গীকার করলেই হয় না। পরিজনদেরও সেই ইচ্ছের প্রতি সম্মান থাকা দরকার। আমার মা ছিলেন অত্যন্ত খোলা মনের মানুষ। তাঁর মতো অনেকেই রয়েছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সবার কর্নিয়া আমরা সংগ্রহ করে উঠতে পারি না।’’

রামপুরহাট পুরসভার ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের সুকান্তপল্লির বাড়ি থেকে শুক্রবার সকালে কল্পনাদেবী কর্নিয়া দু’টি সংগ্রহ করে নিয়ে গিয়েছেন দুর্গাপুরের ব্লাইন্ড রিলিফ সোসাইটির কর্মকর্তারা। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার গভীর রাতে বার্ধক্য জনিত অসুস্থতায় মৃত্যু হয় কল্পনাদেবীর। কৌশিকবাবু জানান, তাঁর মা মরণোত্তর চক্ষুদানের অঙ্গীকার করেছিলেন ২০০৯ সালে। সেই ইচ্ছে পালনে পরিবারের সবাই মৃত্যুর পরে এগিয়ে আসেন। তাঁর আশা, অন্যরাও এই কাজে আরও বেশি করে এগিয়ে আসবেন। বিভিন্ন এলাকায় মানুষকে বিষয়টি নিয়ে সচেতন করতে প্রচার চালনোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ‘স্বয়ম’।

Advertisement

‘স্বয়ম’ সূত্রে খবর, পাঁচ বছর আগে রামপুরহাটের বাসিন্দা রটন্তীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের দু’টি কর্ণিয়া সংগ্রহ করেছিল ওই সোসাইটি। সেই প্রথম। তার পরে এত দিনে মাত্র দু’জনের কর্নিয়া মিলেছে। ‘স্বয়ম’-এর পক্ষে বাপ্পাদিত্য বন্দ্যোপাধ্যায় জানান , অঙ্গীকার করা সত্ত্বেও অনেকের মৃত্যুর পরে পরিজনেরা বেঁকে বসায় কয়েকটি ক্ষেত্রে কর্নিয়া সংগ্রহ করতে পারেননি তাঁরা।

দুর্গাপুর ব্লাইন্ড রিলিফ সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক কাজল রায় জানান, বীরভুম জেলায় ‘স্বয়ম’-ই একমাত্র মরনোত্তর চক্ষুদান নিয়ে কাজ করে। ওই সংস্থার উদ্যোগে সংগৃহীত তিন জনের কর্নিয়া কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের আই ব্যাঙ্কের মাধ্যমে তিন জন অন্ধ মানুষের দেহে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। কল্পনাদেবীর কর্নিয়াও কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে পাঠানো হবে বলে তিনি জানান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন