মমতা নির্দেশ দিতেই গতি বোমা উদ্ধারে

মুখ্যমন্ত্রীর জেলা সফরের কিছুদিন আগে থেকেই বিভিন্ন থানা এলাকা থেকে বোমা-বন্দুক উদ্ধারে তৎপরতা শুরু করেছিল পুলিশ। তবে সোমবার বোলপুরে প্রশাসনিক বৈঠকে অস্ত্র-উদ্ধারে মুখ্যমন্ত্রীর বার্তার পরে সেই কাজে আরও গতি বাড়াল বীরভূম জেলা পুলিশ।

Advertisement

দয়াল সেনগুপ্ত

কাঁকরতলা শেষ আপডেট: ২৫ মে ২০১৭ ০১:৩৩
Share:

বিস্ফোরণ: সিআইডির বম্ব স্কোয়াড বোমাগুলি নিষ্ক্রিয় করছে। বড়রা গ্রামে বুধবার। —নিজস্ব চিত্র।

মুখ্যমন্ত্রীর জেলা সফরের কিছুদিন আগে থেকেই বিভিন্ন থানা এলাকা থেকে বোমা-বন্দুক উদ্ধারে তৎপরতা শুরু করেছিল পুলিশ। তবে সোমবার বোলপুরে প্রশাসনিক বৈঠকে অস্ত্র-উদ্ধারে মুখ্যমন্ত্রীর বার্তার পরে সেই কাজে আরও গতি বাড়াল বীরভূম জেলা পুলিশ।

Advertisement

বুধবার সকালে কাঁকরতলা থানা এলাকার বড়রা গ্রাম থেকে উদ্ধার হল চার জারিকেন ভর্তি ২০০টিরও বেশি তাজা বোমা। পরে দুর্গাপুর থেকে সিআইডির বম্ব ডিসপোজাল স্কোয়াড এসে বোমাগুলিকে নিষ্ক্রিয় করে। মঙ্গলবার রাতে খয়রাশোল থানার পুলিশ অস্ত্রকারখানা কাণ্ডের মূল কারিগর সেখ ইয়ার মহম্মদ খান ওরফে ভেলা খানকে গ্রেফতার করে। জেলা পুলিশ সুপার নীলকান্ত সুধীর কুমার বলছেন, ‘‘পুলিশ তৎপরই ছিলই। সেই কারণেই এত সংখ্যক বোমা উদ্ধার হয়েছে।’’

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, লাভপুরের দরবারপুর গ্রামের বিস্ফোরণের পর ওই গ্রামের একটি পরিতক্ত্য বাড়ি থেকে ৩০টি বোমা উদ্ধার হয়েছিল। দিন কয়েক আগে পুলিশ বোমা উদ্ধার করেছিল সিউড়ি ১ ব্লকের কুখুডিহি, দুর্গাপুর মোড়, মহম্মদবাজার থেকেও।

Advertisement

সম্প্রতি পরপর বোমা উদ্ধার হয়েছে নানুরের চণ্ডীপুর ও ভাসামাঠ দাসপাড়া সংলগ্ন নয়ানজুলিতে। মুখ্যমন্ত্রীর জেলা সফরের আগে জেলায় এ ভাবে বোমা-বন্দুকের কারবার তাঁর যে পছন্দ নয় সে কথা সোমবার প্রশাসনিক বৈঠক থেকে স্পষ্ট করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘আমি প্রত্যেকটা আইসি-কে, ওসিকে স্ট্রংলি বলছি। পুলিশের এসপি, অ্যাডিশনাল এসপি, ডিএসপি, আইজি, ডিজি সকলকেই বলছি চোখ কান খুলে রাখুন। কোনও বোমার কারখানা এখানে চলবে না। যা আর্মস আছে রেসকিউ করুন। কোনও গুন্ডা বাদমাইসি চলবে না।’’

জেলার অশান্ত এলাকা হিসাবে মুখ্যমন্ত্রীর মুখে উঠে আসে নানুর, পাড়ুইয়ের নাম। খয়রাশোলের কথা সম্ভবত মনে ছিল না তাঁর। অবৈধ কয়লা কারবারের দখলদারি নিজেদের হাতে রাখতে এই এলাকায় বোমা বন্দুক নিয়ে সমাজবিরোধীদের নিত্য লড়াই, বিস্ফোরণ, খুন সংঘর্ষ লেগেই আছে। রয়েছে রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতায় থাকার দ্বন্দ্বও।

গত বুধবার খয়রাশোলের বনপাতরা গ্রামে মিলেছিল দেশি পাইপগান বানানোর একটি ছোটখাটো কারখানা। এলাকার সমাজ বিরোধীদের হাতে অস্ত্র তুলে দিতেই কারখানা প্রাথামিক তদন্তে তেমনটাই মনে করছে পুলিশ। মঙ্গলবার রাতে ভেলাখানকে গ্রেফতার করার পরে সেই উত্তর পাবে পুলিশ। সূত্র বলছে, বুধবারই ধৃতকে দুবরাজপুর আদালতে তুলে আট দিনের জন্য নিজেদের হেফাজতে নিয়ে সেটাই জানতে চাইবে পুলিশ। বুধবার কাঁকরতলার বড়রাগ্রামে বোমা উদ্ধারের পিছনেও সমাজবিরোধীদের সক্রিয়তাকেই দায়ী করছে পুলিশ। পুলিশের ভয়েই গ্রামের হাঁড়িগড়ে নামক একটি পুকুরের পাশে জমিতে চার জারিকেন বোমা পুঁতে রেখেছিল দুষ্কৃতীরা, দাবি পুলিশের। কেন, তার ব্যাখ্যাও রয়েছ পুলিশের কাছে। জেলা পুলিশের একটি সূত্র জানাচ্ছে, এপ্রিলের গোড়ায় গরুর গাড়ি না ভ্যানো— কয়লা পাচার হবে কিসে, এই নিয়ে কোন্দল বাধে। ওই বড়রা গ্রামেই অবৈধ কয়লা পাচারের সঙ্গে যুক্ত দুটি সমাজবিরোধী গ্রুপের মধ্যে সংঘাতও হয়।

খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে একপক্ষের আক্রমণের শিকার হয় পুলিশ। ভাঙচুর হয় পুলিশের গাড়ি। গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন এক পুলিশ কর্মী। তারপর থেকেই মূল অভিযুক্ত শেখ কালোর খোঁজে বিভিন্ন জায়গায় তল্লাসি চালিয়েছে তারা। এখনও চালাচ্ছে পুলিশ। এ দিন যেখানে বোমা উদ্ধার হয়েছে। সেটা সেখ কালোর খামার বাড়ি থেকে ১০০ মিটার দূরে।

এ দিন পুকুরের পাশে জমিতে মাটি খোঁড়াখুড়ির দাগ দেখে গ্রামের কেউ পুলিশকে খবর দেয়। তারপরই মেলে ৪ জ্যারিকেন ভর্তি বোমা। গ্রামের কেউ এই বিষয়ে প্রাকাশ্যে মুখে খুলতে চাননি। তবে আড়ালে একাংশ জানাচ্ছেন স্বচ্ছভারত অভিযান সফল করতে প্রশাসন যতই প্রচার করুক। গ্রামের বেশ কিছু মানুষ এখনও প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে ওই পুকুর পাড়েই যান। বোমা লুকানোর জন্য এটা কী আদৌ নিরাপদ স্থান, না কি অন্য গল্প রয়েছে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন