বদলিতে শিক্ষক-শূন্য স্কুল, ক্ষোভ

যদিও জেলা স্কুল পরিদর্শক (প্রাথমিক) অলক মহাপাত্রের দাবি, ‘‘প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলির তালিকা রাজ্য থেকে করে জেলায় পাঠানো হয়েছে। তাই এই বিষয়ে আমাদের কার্যত করণীয় কিছু নেই।’’

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৭:১৫
Share:

দাবি-দাওয়া: বান্দোয়ান ২ চক্রে বিডিও এবং এসআই-কে ঘিরে বিক্ষোভ। —নিজস্ব চিত্র

কোথাও শিক্ষকের অভাবে বন্ধ হয়ে গিয়েছে স্কুল। কোথাও আবার চারটি শ্রেণির ভরসা এক জন মাত্র শিক্ষক। আবার হিন্দি মাধ্যমের শিক্ষককে বদলি করা হয়েছে বাংলা মাধ্যমে। প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকদের বদলির নির্দেশের জেরে পুরুলিয়া জেলার কিছু স্কুলে এমনই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে অভিযোগে সরব হয়েছেন শিক্ষকেরা। কিছু কিছু এলাকায় আবার অভিভাবকেরাও বিক্ষোভ দেখাতে নেমে পড়েছেন।

Advertisement

নিয়ম নীতি না মেনেই বদলি করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছে শাসকদলের শিক্ষক সংগঠন ‘পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল শিক্ষক সমিতি’। বদলির বিরুদ্ধে আজ, শুক্রবার জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের কার্যালয়ের সামনে তাঁরা বিক্ষোভ অবস্থান করবেন বলে জানিয়েছেন শাসকদলের শিক্ষক সংগঠনের জেলা সভাপতি বিমল মাহাতো। একই অভিযোগে বৃহস্পতিবার জেলা স্কুল পরিদর্শক (প্রাথমিক) অফিসে বিক্ষোভ দেখিয়েছে সিপিএমের ‘নিখিলবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি’।

যদিও জেলা স্কুল পরিদর্শক (প্রাথমিক) অলক মহাপাত্রের দাবি, ‘‘প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলির তালিকা রাজ্য থেকে করে জেলায় পাঠানো হয়েছে। তাই এই বিষয়ে আমাদের কার্যত করণীয় কিছু নেই।’’

Advertisement

পুরুলিয়া জেলা শিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, গত চার বছর ধরে বদলি বন্ধ থাকার পরে সম্প্রতি এক সঙ্গে এই জেলার ৪৬৩ জন প্রাথমিক শিক্ষকের বদলির নির্দেশ রাজ্য থেকে পাঠানো হয়েছে। তারপরেই শিক্ষকদের অনেকে নতুন স্কুলে যোগও দিতে শুরু করেছেন। তাতেই সামনে এসেছে বিভ্রান্তির বিষয়টি।

প্রাথমিক শিক্ষকদের একটা বড় অংশের অভিযোগ, বদলির নির্দেশ ভুলে ভরা। এ ক্ষেত্রে তাঁরা উদাহরণ হিসাবে কিছু ঘটনা দাবি করছেন।

প্রথম উদাহরণ: শিক্ষকের বদলির পরে বন্ধ হয়ে গিয়েছে ঝালদা শহরের মণ্ডপকুলি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এখানে ছিলেন চার জন শিক্ষক। তাঁদের মধ্যে দুই শিক্ষিকা মাতৃত্বকালীন ছুটিতে আছেন। এক শিক্ষক ব্যক্তিগত কারণে ছুটি নিয়েছেন। স্কুল চলছিল ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক সোমনাথ খাঁয়ের ভরসায়। তাঁকে বদলি করে দেওয়া হয়েছে অন্য স্কুলে। সে কারণে মঙ্গলবার থেকে শিক্ষক না থাকায় থেকে বন্ধ হয়ে গিয়েছে ওই স্কুল।

দ্বিতীয় উদাহরণ: আদ্রা সার্কেলের লালডাঙা প্রাথমিক স্কুলের হিন্দি বিভাগের শিক্ষক জনার্দন শর্মাকে একটি বাংলা মাধ্যমের স্কুলে বদলি করা হয়েছে।

তৃতীয় উদাহরণ: বদলির ফলে এক শিক্ষক বিশিষ্ট হয়ে পড়েছে আদ্রার বেনেডালা প্রাথমিক স্কুল। সেখানে পড়ুয়ার সংখ্যা ৫০ জনের বেশি। ওই স্কুলের যে শিক্ষককে শ্যামপুর প্রাইমারি স্কুলে পাঠানো হয়েছে, সেখানে তাঁকে নিয়ে শিক্ষকের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে তিন। অথচ, পড়ুয়ার সংখ্যা পঞ্চাশের আশেপাশেই।

চতুর্থ উদাহরণ: রঘুনাথপুর ২ ব্লকের একটি স্কুলে শিক্ষকতা করতেন আদ্রার আড়রার বাসিন্দা মুন্না সিংহ। তিনি শারীরিক প্রতিবন্ধী। সে কারণে বাড়ি থেকে প্রায় ২০ কিমি দূরের ওই স্কুলে যেতে সমস্যা হয় বলে তিনি কাছাকাছি স্কুলে বদলির আবেদন জানিয়েছিলেন। তাঁকে বদলি করা হয়েছে বাড়ি থেকে কুড়ি কিলোমিটার দূরের কাশীপুর ব্লকের একটি প্রত্যন্ত এলাকার স্কুলে। এতে তাঁরা যাতায়াতের সমস্যা বেড়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ।

ওই সব উদাহরণ তুলে ধরে শাসকদলের শিক্ষক সংগঠনের আদ্রার নেতা সিদ্ধার্থ পাল দাবি করেন, ‘‘বদলির প্রক্রিয়া ত্রুটিপূর্ণ বলেই শিক্ষকদের একটা বড় অংশের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়েছে।’’

ক্ষুব্ধ অভিভাবকেরাও। সম্প্রতি ঝালদা ২ চক্রে বিক্ষোভ দেখান তাঁরা। বৃহস্পতিবার বিক্ষোভ হয়েছে বান্দোয়ান ব্লকের ২ চক্রে। স্থানীয় শ্যামনগর প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক অনন্ত পাত্রকে বদলি করায় এই স্কুলটি এক শিক্ষক বিশিষ্ট হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ দেখান বাসিন্দারা। শেষে বিডিও (বান্দোয়ান) শুভঙ্কর দাস এবং অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক পরিস্থিতি সামাল দেন।

ইতিমধ্যেই জেলা স্কুল পরিদর্শকের (প্রাইমারি) সঙ্গে দেখা করেন শাসকদলের শিক্ষক সংগঠনের নেতৃত্ব। সংগঠনের সভাপতির দাবি, ‘‘বদলি প্রক্রিয়া ত্রুটিপূর্ণ। দু’টি স্কুলে কোনও শিক্ষকই নেই। ডিআইকে তা জানিয়েছি।’’ যদিও জেলা স্কুল পরিদর্শকের দাবি, ‘‘বদলির কারণে কোনও স্কুল শিক্ষকহীন হয়ে পড়েছে বলে জানি না। তবে, যে সব স্কুল এক শিক্ষক বিশিষ্ট হয়ে পড়েছে, তার তালিকা অবর বিদ্যালয় পরিদর্শকদের জমা দিতে বলা হয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন