গাছের নীচে আর নয় অঙ্গনওয়াড়ি

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলায় মোট অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের সংখ্যা ৪৮৩০টি। তার মধ্যে কমবেশি ২২০০ কেন্দ্রে নিজস্ব বাড়ি নেই। ক্লাব ঘর, মন্দির বা গ্রামের কোনও চালায় সেগুলি চলে। কোথাও চলে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কর্মী বাড়িতেই।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০১:৩৩
Share:

মাটিতে: আড়শার বামুনডিহা অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র। নিজস্ব চিত্র

আকাশ কালো করে বৃষ্টি নামলেই ছুটি— সে ঝিরঝিরে হোক বা ঝমঝম। তাই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের খিচুড়ির উপরে ভরসা করে থাকে যারা, আকাশে মেঘ দেখলেই মুখ অন্ধকার হয়ে যায় তাদের। এই সমস্যার কথা মাথায় রেখে খোলা আকাশের নীচে চলা সুসংহত শিশু বিকাশ প্রকল্পের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলিকে সানান্তরিত করার নির্দেশ দিল জেলা প্রশাসন। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে এই নির্দেশ কার্যকর করতে হবে বলে সোমবার জানিয়েছেন পুরুলিয়া জেলাশাসক অলকেশপ্রসাদ রায়।

Advertisement

জেলাশাসক বলেন, ‘‘জেলার এখন গাছের নীচে বা খোলা আকাশের নীচে চলা অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র হয়েছে ১৬৫টি। এগুলিকে কাছাকাছি কোন ক্লাব ঘর, শিশুশিক্ষা কেন্দ্র— যেখানে সম্ভব স্থানান্তর করতে বলা হয়েছে।’’

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলায় মোট অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের সংখ্যা ৪৮৩০টি। তার মধ্যে কমবেশি ২২০০ কেন্দ্রে নিজস্ব বাড়ি নেই। ক্লাব ঘর, মন্দির বা গ্রামের কোনও চালায় সেগুলি চলে। কোথাও চলে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কর্মী বাড়িতেই।

Advertisement

তার মধ্যে ১৬৫টির অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। খোলা আকাশের নীচে চলে বলে বর্ষার সময়ে বৃষ্টিতে উনুন গলে যায়। কাঠ ভিজে যায়। রান্না করা দুষ্কর হয়ে পড়ে। তেমনই একটি হল জঙ্গলমহলের আড়শার বামুনডিহা গ্রামের একটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র। সেখানকার শিশুরা বলে, ‘‘বৃষ্টি পড়লে আমাদের এখানে রান্না বন্ধ থাকে। খিচুড়িও বন্ধ।’’ প্রতিদিনের বরাদ্দ খাবার থেকে শিশুরা যাতে এ ভাবে বঞ্চিত না হয় সে কথা মাথায় রেখেই এই সিদ্ধান্ত বলে জানানো হয়েছে।

জেলাশাসক জানান, যতগুলি কেন্দ্রের নিজস্ব বাড়ি নেই সেই কেন্দ্রগুলির জন্য যাতে গ্রামেই জমি পাওয়া যায় তা দেখতে পঞ্চায়েত প্রধানদের বলা হয়েছে। গ্রামে কোথাও সরকারি জমি রয়েছে কি না সেই ব্যাপারেও খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘‘২৩৭টি কেন্দ্র গড়ার কাজ চলছে। ৭ লক্ষ ১৭ হাজার টাকা করে বরাদ্দ করা হয়েছে। একশো দিনের কাজের প্রকল্পের সহায়তায় জলের ব্যবস্থা-সহ সমস্ত কাজ হচ্ছে।’’ জেলাশাসক জানান, যে কেন্দ্রগুলির জমি নেই, গ্রামে কেন্দ্র গড়তে কেউ জমি দিলে সেই ব্যক্তিকে সরকারি সুবিধে দেওয়া হবে। কোথাও কেন্দ্র গড়তে অর্থের অভাব হবে না বলেই তাঁর দাবি।

কিন্তু প্রশাসনের কাছে জমি দিতে চেয়েও সাড়া না পাওয়ার অভিযোগ উঠে এসেছে।

আড়শার বামুনডিহা গ্রামের বাসিন্দা দেবীলাল মাহাতো বলেন, ‘‘আমাদের গ্রামের একটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের নিজস্ব ঘর নেই। গাছের তলায় চলে। আমরা যেখানে কেন্দ্রটি চলে তার খুব কাছেই বাড়ি তৈরির জন্য প্রশাসনকে জমি দেব বলে লিখিত ভাবে জানিয়েছি। দু’বার চিঠি দিয়েও কোনও সাড়া পাইনি।’’

এই ব্যাপারে আড়শা ব্লকের দায়িত্বপ্রাপ্ত সুসংহত শিশু বিকাশ প্রকল্পের আধিকারিক সুভাষ মাহাতোর বক্তব্য, ‘‘বামুনডিহা গ্রাম থেকে কেন্দ্র গড়ার জমি দিতে চেয়ে প্রস্তাব এসেছে। আমি ওই প্রস্তাব ব্লক প্রশাসনের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন