আবর্জনার গ্রাসে পুকুরের একাংশ।—নিজস্ব চিত্র
এক কালে পুকুর ছিল। বেশ বড়সড় পুকুর। এখনও অবশ্য সেখানে জঞ্জালে স্তূপ। পুকুর বলে চেনাই দায়। পুরুলিয়া শহরের সেই দশের বাঁধ পাঁচিল দিয়ে ঘিরতে গিয়ে বিতর্কে জড়াল পুরসভা। বিরোধী দলের দাবি, এই মর্মে পুরসভার বোর্ড মিটিংয়ে কোনও সিদ্ধান্ত না হওয়া সত্ত্বেও ওই পুকুর পাঁচিল দিয়ে ঘেরা হচ্ছে। এর পিছনে নিশ্চয় কোনও স্বার্থ আছে।
পুরুলিয়া শহরের বরাকর রোডের পাশে ২০ নম্বর ওয়ার্ডের দশের বাঁধ শহরের অন্যতম প্রাচীন জলাশয়। এই জলাশয়ের নামেই এলাকার নাম দশের বাঁধ। স্থানীয় মানুষ আগে নিয়মিত এই পুকুরটি ব্যবহার করতেন। কিন্তু পুরসভার উদাসীনতায় দীর্ঘদিন ধরে জলে আবর্জনা জমে পুকুরের অনেকটাই বুজে গিয়েছে। এখন সামান্য অংশে জল রয়েছে। সম্প্রতি পুরসভা সিদ্ধান্ত নেয়, ওই পুকুরটি ঘিরে ফেলা হবে। মঙ্গলবার থেকে পুলিশ প্রহরায় পুকুরের ধারে পাঁচিল তোলার কাজ শুরু হয়েছিল।
ঘটনা হল, শহরের প্রাণকেন্দ্রে থাকা এই মজে যাওয়া পুকুর বুজিয়ে বহুতল কিংবা শপিং মল হতে পারে কিংবা গড়ে উঠতে পারে বাজার— এ রকম গুজব সম্প্রতি শহরের আনাচে কানাচে ঘুরছে। এই অবস্থায় পুরসভা পুকুর ঘেরার কাজ শুরু করেছে, এই খবর পেয়েই কংগ্রেস কাউন্সিলর প্রদীপ মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে স্থানীয় লোকজন গিয়ে কাজ করতে বাধা দেন। দেওয়াল তোলার জন্য পুকুর পাড়ের মাটি খোঁড়া হচ্ছিল। ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী মাটি ফেলে তা বুজিয়েও দেন। কাজ বন্ধ করা নিয়ে এলাকায় সাময়িক উত্তেজনাও ছড়ায়। প্রদীপবাবু বলেন, ‘‘এটি পুরসভার পুকুর। এখানে এসে দেখছি, পুকুর ঘেরার জন্য পাঁচিল তোলার জন্য কাজ শুরু হয়েছে। শুনছি এখানে বাজার হবে। আবার কেউ কেউ বলছেন বহুতল বা মহিলা থানা হবে।’’ তাঁর দাবি, পুকুরটি বর্তমানে অনেকটাই বুজে গিয়েছে। তবু এই পুকুরটিকে যে দেওয়াল দিয়ে ঘিরে দেওয়া হবে, এই মর্মে পুরবোর্ডের মিটিংয়ে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। স্থানীয় বাসিন্দা মধু বাউরি, অশোক বাউরি, অচিন্ত্য বাউরি, সঞ্জয় শর্মাদের বক্তব্য, এই পুকুর এক সময় এলাকার মানুষজন ব্যবহার করতেন। সেই পুকুর সংস্কার না করে কেন পাঁচিল দিয়ে ঘেরা হচ্ছে, তা স্পষ্ট নয়।
এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছেন পুরসভার বিরোধী দলনেতা তথা বিধায়ক সুদীপ মুখোপাধ্যায়ও। তিনি বলেন, ‘‘পুকুরটির অনেকটা পুরসভার উদাসীনতায় বুজে গিয়েছে, এটা ঘটনা। পুরুলিয়া শহরে যেখানে তীব্র জলাভাব, যেখানে পুরসভা শহরের অন্য পুকুর সংস্কার করছে, সেখানে এই পুকুরটিকেও সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া উচিত ছিল।’’ তা না করে বোর্ড মিটিংয়ে আলোচনা না করেই হঠাৎ ঘেরা দেওয়ার সিদ্ধান্ত কেন—প্রশ্ন কংগ্রেস বিধায়কের। তাঁর কথায়, ‘‘এই পুকুর কোনও ভাবেই বুজিয়ে ফেলতে দেওয়া হবে না। সে ক্ষেত্রে পুরুলিয়ার মানুষকে সঙ্গে নিয়ে পথে নেমে আন্দোলন করব।’’
এলাকায় গিয়ে অবশ্য দেখা গিয়েছে, আবর্জনার উপরে মাটি ফেলে বুজে যাওয়া অংশ সমতল করা হয়েছে। প্রদীপবাবুর দাবি, মাটি ফেলে সমতল করার পিছনেও কারও বিশেষ উদ্দেশ্য রয়েছে। উপ-পুরপ্রধান সামিমদাদ খান বলেন, ‘‘এটা পুরসভারই পুকুর। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে আবর্জনা ফেলে ফেলে বুজিয়ে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি পুকুরটির জমি দখল হয়ে যাচ্ছে। দখল রুখতেই আমরা প্রাথমিক ভাবে পুকুরটি আপাতত ঘিরে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এর পরে বোর্ড মিটিংয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পদক্ষেপ করা হবে।’’
তিনি জানান, পুকুর সংস্কারের প্রস্তাব এলাকার বিধায়ক তাঁকে দিয়েছেন। বোর্ড মিটিংয়ে আলোচনার পরে সংস্কারও হতে পারে বা অন্য কোনও ভাবে ওই জমি ব্যবহৃত হতে পারে। শহরে গাড়ি পার্কিংয়ের সমস্যা রয়েছে। জমিটি সেই কাজেও ব্যবহার করা যেতে পারে বলে তাঁর মত।